বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১৮

চর মধুয়া

চর মধুয়া। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার একটি গ্রাম। মূলত চর গ্রাম। এই গ্রামের চারপাশে জল। মেঘনার জল। এই গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। মাছ শিকারও এখানে এক‌টি পেশা। প্রায় হাজার পনেরো বাসিন্দাকে লালন করে এই চর। শ্রমিক হিসাবে বিদেশে যাওয়া ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হওয়ার মতো এক‌টি স্বাভাবিক ব্যাপার এই গ্রামের মানুষের কাছে।

রেজাউল এখন মাঝি। সেও মালয়েশিয়া শ্রমিকের কাজে গিয়েছিল। কাজের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না বিধায় দেশে চলে এসেছে। সে মূলত কৃষি কাজ করে। ছয় মাস কৃষি কাজ করে, ছয় মাস নৌকা চালায়। এমন প্রান্তিক কৃষকের পরিমান চর মধুয়া গ্রামে প্রচুর।

চর মধুয়া পুরো মাত্রায় গ্রাম। সংশপ্তক উপন্যাসে আমরা যে গ্রাম দেখতে পাই হুবহু সেই রকম গ্রাম। তবে এখানে সনাতনীদের তেমন দাপট নেই। দাশ, সূত্রধর, নাথ মিলে সত্তর থেকে আশি পরিবারের বসবাস।

এই চরে অভিজাত শ্রেনি শিকদার বংশ। শিকদার বংশে রয়েছে ত্রিশটির মতো পরিবার। শিকদার বংশ বাদেও অনেক বংশের দেখা এখানে মিলে।

বিদ্যুৎ আছে। তবে শতভাগ নেই। তাছাড়া বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্মকথা এই গ্রামে খুব বেশি দিনের নয়। এখানকার মানুষদের চিকিৎসার জন্য নির্ভর করতে হয় নরসিংদীর সদরের হাসপাতালগুলোর উপর। মোবাইলের বিনোদন মিডিয়া তাদের আকর্ষনের মূল কেন্দ্রবিন্দু। কিন্ডারগার্টেন স্কুল এখানেও পৌঁছে গেছে। পৌঁছেনি প্রাইমারি ও হাইস্কুলগুলোতে সময়োপযোগী শিক্ষার মান।

আসাদুল্লার মা ছাগল পালন করেন। ছাগলের আয় থেকে তার সংসার চলে যায়। আসাদুল্লা বিদেশ গিয়েও সংসার চালানোর মতো সুবিধা করতে পারেনি। এই চরের অনেকেই গবাদি পশু পালন করে। গবাদিপশু পালন, মাছ শিকার, কৃষি কাজ, বিদেশে গমন এই চরের মানু‌ষের উপার্জনের প্রধান উৎস।

এই গ্রামে অল্প মাত্রায় শিক্ষিত লোক আছে। কিন্তু শিক্ষিত লোকদের মধ্যে শিক্ষার গুনাবলী নেই। হাজার বছরের চরদ্বন্দ্ব এখনো এই গ্রামে বিদ্যমান। পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করে চর নিরাপত্তার দায়িত্ব দিতে হয় বাংলাদেশকে। তাদের কষ্টে উপার্জিত লাখ লাখ টাকা খেয়ে ফেলে চরদ্বন্দ্ব।

মধু থেকে মধুয়া। এই চরের শারীরিক সৌন্দর্যে মধু আছে সত্যিই কিন্তু মানসিক সৌন্দর্যে মধু নীল মেঘের মতো দুর্লভ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন