মঙ্গলবার, ৮ মে, ২০১৮

মহানগর প্রভাতী

মাইশা। ওর নাম মাইশা। বাবা পুলিশ। মা গৃহিনী। মাইশার সাথে আমার দেখা ট্রেনে। আমাদের পেছনের সিটে তাদের সিট। আমরা একটি ঝড়কে ধরবো বলে চিটাগাং যাচ্ছিলাম। কিন্তু ঝড়কে ধরতে পারিনি, পেরেছি এই ঝড়কন্যাকে হালকা উপলব্ধি করতে।

এই ঝড়কন্যা ক্লাস টুতে পড়ে। প্রথম দেখাতে মনে হয়েছিল মাইশা জমানো চুপচাপ এক বরফের নাম। ক্লাস টুতে তার রোলনং দুই। সে চায় ক্লাস থ্রিতে তার রোলনং হোক তিন। ক্লাস ওয়ানে তার রোলনং ছিল এক। যখন তার বরফ গলে গেলো তখন সে নদী হতে পারতো, হয়েছে সাগর, তাও আবার আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তাল ঝড়।

এই ঝড়কন্যা আমাকে সিটে বসে থাকতে দেয়নি। তার মতে আমি আল্লার চেয়েও কালা।

আমি বললাম "আল্লা কালা এই কথা তোমাকে কে বলছে?" সে বলে সে নাকি প্রতি রাতে আল্লাকে দেখে।

আমি বললাম আমি যেহেতু কালা সেহেতু আমার থেকে দূরে থাকো, তুমি তোমার সিটে বসে থাকো।
সে বলে তর কাছে থেকে তোকে মারব এটাই আমার আনন্দ।

তার আনন্দ সহ্য না করতে পেরে আমাকে অবশেষে আমার সিট থেকে ওঠে যেতে হয়েছে। যেহেতু ফাস্ট ক্লাস কামরা সেহেতু এখানে সভ্যদের ভীড়। এই ঝড়কন্যাকে ইগনোর করবে এমন মহান শক্তি কারোই ছিল না। সবার দৃষ্টি এই ঝড়কন্যার দিকে, সবার মুখে মৃদু হাসি।

ঝড়কন্যা আমার সিট দখল করে। এখন তার দুইটা সিট। প্রায় শেষের দিকে আমি আমার সিটে আবার বসতে পারি কিন্তু এর জন্য আমাকে ঝড়কন্যার অনেক আনন্দ সহ্য করতে হয়েছে।

ঝড়কন্যা ট্রেন থেকে নেমে যাওয়ার সময় আমাকে একটা নাম দিয়েছে। নামটা হলো কালোমাছি। ট্রেন থেকে নামার সময় তার কনিষ্ঠতম আঙ্গুলটি আমার চোখের সামনে এনে আমার কনিষ্ঠ আঙ্গুলের সাথে মৃদু স্পর্শ করে আস্তে করে বলে "আড়ি"।

আজকে মনে হচ্ছে সত্যিই ত "আড়ি"। তার সাথে ত আমার আর দেখা হবে না, দেখা হলেও সে তখন অনেক রঙ চিনে ফেলবে, অনেক রঙ্গের বাহারে এই কালোমাছির দৃশ্যত রঙ তার চোখে পড়বে না!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন