রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৪

তারাচানের চোখে হাজার বছর খেলা করে

ট্রেন চলছে। নোয়াখালী এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেনপূর্ণ মানুষকে কাঁঠালের কোষ, কাঁঠালের কোষ মনে হচ্ছে। ষাটোর্ধ্ব চাচা প্রতিবেশী শরীরে হেলান দিয়ে দাড়ানো। মায়ের গর্ভের মতো এখানে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা নেই। আন্ধার থেকে চুয়ে পড়া আলোয় কিছু মুখ, কিছু ইশারা সনাক্ত করা যায়। আড়িখোলা স্টেশন। মিস্টার লোকাল এখানে কিছুক্ষণ রেস্ট নেয়। স্টেশনমাস্টারের রুম থেকে আসা তীর্যক আলো অল্পের জন্যে হলেও রেলকামড়াকে উৎসবমুখর করে তোলে। চাচার আঙ্গুল তখন দাড়িএলাকায় নিড়ানির কাজ করে।
কাহা কৈ যাইবা?
ফেনি
কাহা, তোমার আব্বা-আম্মার দেয়া নামডা কী?
বাতিজা, গরিব মাইনসের আবার নাম
তাহলে গরীব মানুষ আমৃত্যু কোনো দিন বুঝবে না,সে আসলে গরীব নয়?  তাকে বোঝানো হচ্ছে এমনটা। তাদের নামের গর্বও কেড়ে নিবে রক্তচোষা ফানুস!
এই ভাবনায় সরব নীরব তারাচান। নীরব চোখে তার হাজার বছর খেলা করে (টালত মোর ঘর নাহি পড়বেষী /হাড়ীত  ভাত নাঁহি  নিতি আবেশী )।বিশাল খোলা মাঠ দ্রুত পেছনে চলে যাচ্ছে। চোখে লেপ্টে যাচ্ছে বয়স্ক অন্ধকার।অন্ধকার তারাচানকে কেবল মোহিত করে না, মাতাল করে। মাতাল হওয়ার পরোক্ষে ঘটে আসল ঘটনা ---
অন্ধকারের মাঝে একটি আলোর ঘর। আলোর ঘরে দুটি প্রাণি। একজন বলছে 'আমি আইসক্রিম খাব ' অন্য জন বলছে 'মানি ব্যাগে টাকা নেই '  কিংবা একজনের ঠোঁট আরেকজনের ঠোঁটকে কামড়ে ধরে কিন্তু ক্ষুধার্ত মুখ শুষ্ক, রসহীন হাজার বছর ধরে। তারাচানের চোখে হাজার বছর খেলা করে! 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন