পৌষ ১৩৪২। 'কবিতা ' পত্রিকার নতুন সংখ্যা পৃথিবীর মুখ দেখল। এই সংখ্যাতেই বনলতা সেন কায়াহীন অথচ রসসমেত হাজির হয়। যার চুল কবেকার নিটোল উপমায় ঘেরা। যার সৌন্দর্যের মাজার জিয়ারত করলে জানা যায় নারীর সুপ্ত প্রতিভার ধারা। এখানে বনলতা নারীর নয়, নারীর প্লাটফর্ম। যে নারী ত্যাগের অসীম মহিমায় নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে কালের পর কাল, যুগের পর যুগ। শান্তি দিতে পারায় যেন তার জন্মমাত্র লক্ষ্য, মৃত্যুপূর্ব সাধনা। সেবার মানসিকতায় সদা প্রস্তুত। সদা প্রফুল্ল। কখনো ক্লান্তি কিংবা বিয়োজন মানসিকতা স্পর্শ করে না। বরং শান্তি নিতে যদি অনিয়মিত হয়ে যায় জীবনানন্দের পথিক ; এই নারী করুণ রাগে, উদারা সুরে প্রকাশ করে মনের গহীনে জমা হওয়া ভক্তিগান --- 'এতদিন কোথায় ছিলেন?'
তবে জীবনানন্দের পথিক আর এডগার এলান পোর প্রেমিক এক নয়। এই পথিক হাজার বছরের পুরনো পথিক। যাঁরা নিজেকে নিয়ত আবিস্কারে ব্যস্ত, এই পথিক তাঁদের প্রতিনিধি।
মানুষের শরীরের মতো বনলতা সেন কবিতার শরীর। তিনটি অংশে বিভক্ত। প্রতিটি অংশ প্রকৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, চলমান জীবন, জীবনের চলচ্চিত্রের মোড়কে আবৃত। আলোচিত সবকিছুই পথিককে শান্তি দিতে ব্যর্থ। কেবল বনলতা ছাড়া। তাইতো বারবার ভুল জায়গায় শান্তি খোঁজে, বারবার সঠিক বনলতায় শান্তি পায় আমাদের পথিক। এখানে এডগার এলান পোর প্রেমিক সম্পূর্ণ ভিন্ন।যে প্রেমিক হেলেনের সৌন্দর্যে মাতাল হয়ে কবিতা লিখে (Helen, thy beauty is to me /like those nicean barks of yore,)।ততটুকু মাতাল প্রেমিক হতে পারে না, যতটুকু মাদকতা এলান পো ধারণ করেন। কিন্তু জীবনানন্দের পথিক বনলতাকে নারী ভাবতে নারাজ। পথিক, বনলতাকে বন্ধু ভাবে। তাইতো সব সৌন্দর্য যখন তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় বন্ধুসৌন্দর্য তখন আপন, অন্ধকারের মতো আপন। মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।