কাম আছে মানে কাজ আছে। কাম আবার দরকার অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। হেরা বাড়িতে আমার একটা কাম আছে— মানে দরকার বা প্রয়োজন আছে।
কামদেবতা আবার মদন দেবতা যিনি মানুষের মনে তীর নিক্ষেপ না করলে মানুষ প্রেমে পড়ে না। ইংরেজি Cupid (ল্যাটিন Cupido যার অর্থ কাম) রোমান পুরাণের কামদেবতা। যুদ্ধের দেবতা মার্স এবং প্রেমের দেবী ভিনাসের পুত্র। গ্রিক পুরাণে তাঁর নাম ইরস।
কাম থেকে কামলা। গামলা এবং কামলা আলাদা হলেও গামলার সাথে কামলার রোজ কয়েকবার দেখা হতো। কামলা মানে যে ব্যক্তি মজুরির বিনিময়ে জীবিকা অর্জন করে। দিনমজুর। কোনো কোনো বাড়িতে বার্ষিক কামলাও থাকতো। বার্ষিক কামলাদের প্রধান কাজ ছিলো বা আছে গবাদি পশুর দেখভাল করা। আর গবাদি পশুকে যে পাত্রে জলখাবার পরিবেশ করা হয় তাই গামলা।
—হিলা কিন্তু আসল কামলা,সাবধানে থেকো— এমন কথা ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের মানুষের মুখে শুনতে পাওয়া যায় যেখানে কামলা অর্থ বুদ্ধিমান, চালাক, নির্দিষ্ট কাজে পারদর্শী, বোকাসোকা কিন্তু আসলে চালাক এমন ব্যক্তিকে ইঙ্গিত করে।
কাম, যৌনতা, ধর্ষণ— যৌন হলো যোনিসম্বন্ধী, কন্যাদানাদি, বৈবাহিক। কাম হলো ইচ্ছা। অর্থাৎ যৌনতা কামের অন্তর্ভুক্ত তবে কয়েকটি টার্ম এন্ড কন্ডিশন যৌনতাকে পালন করতে হয় কামপরিবারে নিজের জায়গা স্পষ্ট করার জন্যে। ধৃষ্ ধাতু থেকে ধর্ষণ শব্দটি আগত। ধৃষ্ অর্থ হিংসা। ধর্ষণের মূলে কাজ করে হিংসা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধর্ষণ উচ্চারিত হয় দরসন হয়ে— দর্শনও উচ্চারিত হয় দরসন হয়ে।
— দরসনের হবর পেফারে বার অইছো! ইতা ডিফা দিয়া রাহন যানা।
পেপারকে পেফার, ব্যাপারকে বেফার, নাপা ট্যাবলেটকে নাফা বুরি বলার সহজাত মানসিকতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের মানুষ রাখে। অর্থাৎ প বর্নকে ফ হিসাবে উচ্চারণ করা।
মজার ব্যাপার হলো 'বার' শব্দটা কখনো সংখ্যা আবার কখনো সময় আবার কখনো প্রকাশি হওয়া বা জাহির হওয়াকে নির্দেশ করে। হাটবার মানে হাটের সময়, বার হওয়া মানে বের হওয়া বা প্রকাশিত হওয়া, বার বার (হে আমার কাছে আজগা বার বার আইছে)— বার বার মানে বারো(১২) বার আবার বারবার মানে অনেক বার।
নরসিংদীর রায়পুরা অঞ্চলে 'র'কে 'ল' উচ্চারণ করে। রায়পুরা উপজেলার সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার যেসব উপজেলা রয়েছে তারও 'র'কে 'ল' উচ্চারণ করে। নরসিংদী জেলায় অনেকে চাকরিকে চারকি বলে, একলাকে বলে এলকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাতে ডিফাতালি খুবই জনপ্রিয় শব্দ, কিশোরগঞ্জেও। তবে কিশোরগঞ্জের খুবই পাশে অবস্থিত নরসিংদীর মনোহরীতে ডিফা উচ্চারিত হয় ডিমলা হয়ে— ডিমলাতালি।
ডিমলা আর নাইমলা কিন্তু এক না। ডিমানো শব্দটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ডিমানো মানে হাল্কা করা— গেসের চুলাডা ডিমানো দরহার।
ধী মানে বুদ্ধি, জ্ঞান, মেধা। ধীমান মানে পন্ডিত, বিবেচক। ধিমা বা ধিমে মানে সামান্য, হালকা ( আগুনের ধিমে আঁচ)। ধিমা> দিমা> ডিমা।
নাইমলা ফসল মানে শেষ দিকের ফসল। নামাতে যাওয়া মানে নিচে যাওয়া, শেষের দিকে যাওয়া। নামা>নাইমলা। ডিমলা শব্দটি নরসিংদীর মনোহরদীর মানুষ বলে থাকে আর নাইমলা শব্দটি আশুগঞ্জ নবীনগরের মানুষ যাপিত জীবনে বেশি ব্যবহার করে থাকে।
নাম্বা কিন্তু আবার নামা শব্দ থেকে আসে নাই। নাম্বা মানে লম্বা। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষ নাম্বারকে নম্বর বলে।
—নাম্বা মাইনসের আটুতে গিয়ান।
— হালি নম্বর ফাইলে অইতো না, গিয়ানি অইতে অইবো।
উয়ারি এবং বটেশ্বর দুটি স্বতন্ত্র গ্রাম। উয়ারি এবং বটেশ্বরের পাশের গ্রামের নাম লাকপুর, রাজারবাগ,কামরাব, আজকিতলা,ভেড়ামারা— এইসব এলাকায় নাইমলাকে বলে নামিলা, লম্বাকে বলে নাম্বা এবং লাম্বা— এই এলাকাতে তাল গাছকে লম্বার প্রতীক হিসাবে এবং তালের আলিকে নেতিবাচক পরিপক্বতার প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বীজ> বিচি> আলি।
— বাল ফাননা তালের আলি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিশোরগঞ্জ গাজিপুর অঞ্চলে কলাগাছ দুর্বলতার প্রতীক হিসাবে এবং বটগাছ অভিভাবকের প্রতীক হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। আর মান্দার গাছ শক্তির প্রতীক হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
— কলাগাছের ডাগগা বেডা অইলে আগগা।
ডাগগা মানে শাখা বা ডাটা। আগগা মানে সামনের দিকে যাওয়া বা এগিয়ে যাওয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জ গাজিপুর মুন্সিগঞ্জের মানুষ কাজ ও কামকে একত্রে উচ্চারণ করে কাজকাম এবং কাজকাম শব্দটি ব্যস্ততাকে নির্দেশ করে( বর্ষাকালে কৃষকের তেমন কোনো কাজকাম তাহে না)— যদিও কাজ ও কাম দুটি আলাদা শব্দ। এইসব অঞ্চলের মানুষ আরেকটি শব্দ ব্যবহার করে— লতাডুগা বা আগাডুগা। ডগা> ডুগা। ডগা মানে আগা বা কোনো লতানো অংশের অগ্রভাগ। তবে তারা যখন আগাডুগা একত্রে উচ্চারণ করে তখন বুঝাতে চায় কোনো সবজির অগ্রভাগের অংশ। আর লতা তো লতাই— কচু শাকের শরীরে জন্ম নেয়া মাটিজড়ানো লতানো অংশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন