সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

বেদনা তার জন্যে

এক কবি ছিলেন। আমাদের মাঝে ছিলেন তিনি। এখন আর নেই। না না। মারা যাননি। তিনি এখনো বেঁচে আছেন। ছোট কালে তাকে দেখতাম। ভাবই আলাদা। কবি হতে গেলে আলাদা একটা ভাব লাগে। তাকে দেখে এমনই মনে হতো আমাদের। তিনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে তার ভাবের গন্ধ নাকে এসে লাগত। ভুল করে যদি তিনি কথা বলতো তাহলে ত ...! তিনি যে ভাষায় কথা বলতেন সেই ভাষা বাংলার মতো তবে বাংলা ভাষা মানে আমরা যে ভাষাকে বাংলা ভাষা বলি ঠিক সেই ভাষা ছিল না। এর নাম নাকি কাব্য ভাষা। তিনি টয়লেট করতেন কাব্য ভাষায়, তিনি বাজার করতেন কাব্য ভাষায়, তিনি ক্রিকেট খেলতেন কাব্য ভাষায়, হয়তো ছক্কাও মারতেন কাব্য ভাষায়। কবি বলে কথা। আমরা যারা মুনির পুত কামলা তাকে কেবল দেখতাম, আর ভাবতাম কবিরা বুঝি অন্য জাতের মানুষ।

হঠাৎ দেখি কবি উধাও! বহু বছর কবির সাথে দেখা নাই। বহু বছর বলতে প্রায় দশ বছর। হঠাৎ করে কবির সাথে দেখা। টিএসসিতে। কবি একা না। সাথে এক সুন্দরী। সুন্দরীর সাথে দুই থেকে তিন বছরের রেডিও এফএমও আছ। বুঝতে পারলাম কবি বিয়ে করেছে। সাহস করে কথা বলা শুরু করলাম।

কেমন আছেন?
ভালো।
তুমি কেমন আছো?
আমিও ভালো ( মনে মনে বললাম 'বাহ' কবির কথা বুঝতে পারতেছি)
কী করছো তুমি?
বাংলায় পড়ছি।
আপনি?
সংসার করছি।
কবিতা লিখেন না আর?
না।
কেন কেন?
কবিতাকে পেয়ে গেছি, আর কবিতা আসে না।

"কবিতাকে পেয়ে গেছি, আর কবিতা আসে না" কথাটি শুনামাত্র আমি আর এক‌টি কথাও বলিনি। কাজের অজুহাতে সোজা মধুর ক্যান্টিনে চলে আসি। মধুর ক্যান্টিনের মার্বেল টাইপের মিষ্টি খেতে খেতে ভাবি কত না কারনে মানুষ কবিতা লিখে-- কেউ কবিতা লিখে নিজের চেহারার টিআরপি বাড়ানোর জন্যে, কেউ কবিতা লিখে রাজপ্রাসাদে যাওয়ার জন্যে, কেউ কবিতা লিখে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে, কেউ কবিতা লিখে আত্মদুঃখকাতরতা থেকে, কেউ আবার লিখে হাততালি পাওয়ার জন্যে।

বেদনা হলো কবির জন্য। কারন হাততালির পাওয়ার ইচ্ছাটা তাকে মাঠছাড়া করেছে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন