সোমবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৮

ব্যাঙের চিন্তারা

খাল। খালে ব্যাঙের ডাক সন্ধ্যার পর থেকেই আরম্ভ হয়। তাদের ডাকাডাকি চলে প্রায় ভোর পর্যন্ত। তারা এই ডাকাডাকি করে মূলত তাদের প্রজননকালীন সময়ে। এই ডাকাডাকি একধরনের স্বাধীনতার ডাকও বটে। অর্থাৎ যে যেখানে আছে সে যেন ডাকাডাকির স্থানে উপস্থিত হয়ে একাত্মতা স্বীকার করে।

এই সময় ব্যাঙপরিবারে উৎসব হয়-- দূরের সাথে কাছের কাছের সাথে দূরের  মিলন উৎসব, নতুন সদস্যদের পৃথিবীতে আগমনের আগাম উৎসব। 

খালের পর একটি বিল্ডিং, তারপর আরেকটি বিল্ডিং, তারপর আরেকটি সুউচ্চ বিল্ডিং। সুউচ্চ  বিল্ডিংটিতে ইটভাটার মতো টাকাওয়ালারা থাকেন। টাকাওয়ালারা যেখানে বিল্ডিংয়ে টাকা ব্যতীত কোনো আত্মীয় স্বজনকে এলাউ করে না সেখানে একটি ব্যাঙ তাদের চকচকে টাকার কালার নষ্ট করবে তা ত ভাবনারও অতীব অতীত।

সুউচ্চ বিল্ডিংয়ের দেয়ালের কাছে যেতেই দেখলাম একটি ব্যাঙ পলিথিনের ভেতর ছটফট করছে। ব্যাঙটি বাঁচতে চায়। দেখলাম পলিথিনের মুখ সুতা দিয়ে বাঁধা। পলিথিনের মুখ খুলে দিলাম। ব্যাঙটিকে দেখলাম লাফাতে লাফাতে আবার বিল্ডিংয়ের দিকে চলে যেতে।

ব্যাঙটি ইচ্ছা করলেই খালের দিকে যেতে পারত যেখানে তার স্বজাতিরা তার জন্য অপেক্ষা করছে। আবার ভাবলাম, ব্যাঙটি ইচ্ছা করলেই খালের দিকে যেতে পারে না। কারন যে ব্যাঙ জন্মের পরই বিল্ডিং চিনে খালের স্বাধীনতা আর অসীম সুখ সে অনুবাদ করতে জানবে ক্যামনে!?

এই অপরাধ না ব্যাঙের না বিল্ডিংয়ের না খালের। এই অপরাধ স্বয়ং অপরাধ সৃষ্টিকারীর।

রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮

ধর্ষন

ফুল দেখে যাদের নাক জেগে ওঠার আগে শরীর জেগে ওঠে তাদের মনে ধর্ষনের জীবানু রয়েছে

শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৮

এমনি করে তুমি এমনি করে আমি

মানুষ হয়ে রাতের মতো কথা বললে
আমি কিন্তু ঠিকই একটা ভোর কিনবো

ভোরের সাথে সূর্যে যাবো
ভোরের কথায় দুঃখ পাবো
ভোরের চোখের শিশির খাবো

তখন তুমি ঠিকই একটা ভোর হবে
আমরা তখন দুপুরস্রোতে বিকাল হবো
বিকালপরে অন্ধকারের খরস্রোতা এক নদী পাবো

তখন তুমি মাত্র দুপুর
পাওয়ার ইচ্ছায় তীব্র ব্যাকুল
আমরা তখন দুপুররাতের শান্তি সুখের কুমকুমাকুম

এমনি করে বয়বে রাত
এমনি করে নামবে দিন
পাখি গায়বে গায়বে গান
একটি নদী জলে ভরা
একটি নদী চরে খরা

গুনাগুন

ট্যাবলেট সুন্দর হলে বাচ্চারা খেতে আরাম পায়, শরীরের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন ট্যাবলেটের যথাযোগ্য গুন

বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৮

জ্ঞানের দাপট

কেউ যখন কোনো বিষয়ে ভালো জানে তখন সেই বিষয়ে সে কথা বলে এক ঘন্টা কিংবা তারচেয়েও কম সময়, কেউ যখন কোনো বিষয়ে কম জানে তখন সেই বিষয়ে সে কথা বলে এক সপ্তাহ কিংবা তারচেয়েও বেশি সময়। ভালো কিছু আসলেই আয়তনে ও ওজনে কম হয়, দুধের চেয়ে দুধের মাখন আয়তনে ও ওজনে অবশ্যই কম।

সাপ

সাপের বিষদাঁত তুলে নিতে হয় সাপকে মারার জন্য নয় সাপ যাতে মারতে না পারে সেইজন্যে

ফুল কেন

ফুল, ফুল হওয়ার জন্য গন্ধ ও সৌন্দর্য বিলায় না, গন্ধ ও সৌন্দর্য  বিলায় বলে তার নাম ফুল

বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮

হঠাৎ বাংলাদেশ

বাংলাদেশের যখন কম্পিউটার আবিষ্কার করার বয়স বাংলাদেশ তখন কম্পিউটারে কয়টা নাটবুল্টু আছে তা মুখস্থ করে মোটা বেতনের চাকরি পায়।

চাকরি পেয়ে বাংলাদেশ নয়টা পাঁচটা নাটবুল্টু বিষয়ক অফিস করে, অফিস শেষে ফার্মের মুরগী দিয়ে ডিনার করে সোজা বিছানায় চলে যায়।

বিছানায় কোনোদিন আধাঘন্টা একঘন্টা টুর্নামেন্ট খেলে কোনোদিন খেলে না। যেদিন বাংলাদেশ বিছানায় কোনো প্রকার টুর্নামেন্টের আয়োজন করে না সেদিন ডিনার ডাইজেস্ট না হওয়ার কারনে পেটে গ্যাস পড়ে। তাই বাংলাদেশকে প্রায় প্রতিদিন ট্যাবলেট বিষয়ক অফিস করতে হয়।

এইভাবেই হিমালয় থেকে সুন্দরবন তারপর হঠাৎ বাংলাদেশ!

এহেন জামানা

সমাজে যখন প্রচুরতম গাধা তৈরি হয় তখন সে গাধাদের মধ্যে থেকে অনেকতম সিংহের প্রয়োজন অনুভব করে

পাখির চেয়ে পাখার ওজন বেশি হলে সে পাখি আর উড়তে পারে না

কুয়ার ব্যাঙ সাগর চিনলেও কুয়ার প্রশংসা করবে। কারন কুয়াতে বাস করতে যোগ্যতা লাগে না, সাগরে বাস করতে যে যোগ্যতার প্রয়োজন হয়

এহেন জামানায় আল্লা দাবি করলেও বান্দা পাওয়া যাবে এবং সেই বান্দারা আবার সেই আল্লার নিন্দাও করবে

শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮

কোন দিকে মন আমার

আমার বন্ধুদের অনেকেই অফের বল লেগে খেলতো, আবার স্ট্রেটের বল অফে খেলতো, কেউ কেউ লেগের বলও অফে খেলতো, অনেকে আবার ইউর্কা লেন্থের বলকে ফোল টাস করে খেলার চেষ্টা করতো-- তাতে তারা দুচারটে বাউন্ডারি যে পেতো না এমন না, পেতো। তবে আউটই হতো বেশিরভাগ সময়।

ক্রিকেট খেলা এমনিতেই অনিশ্চিত খেলা, আর বলের টু দ্যা পয়েন্ট খেলতে না পারলে ত আরও অনিশ্চিত।

ক্রিকেটের চেয়েও অনেকগুন বেশি অনিশ্চিত মানুষের জীবন। জীবনেও অনেক ধরনের বল আসে-- উপদেশের বল, অনুরোধের বল, হিংসার বল, প্রেমের বল, বিরহের বল, তোষামদী বল ইত্যাদি ইত্যাদি।

মনকে তাই জানতে হয় কোন বল কোন দিকে খেলতে হয়, ভুল দিকে খেললে বাউন্ডারি হতে পারে মাঝেমধ্যে কিন্তু আউট হবার সম্ভাবনাই বেশি।

শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৮

প চ

প্রচারে কবিমন পাচার হয়ে গেলে পচে যায় হৃদয়

রাগ

দিনে দিনে মানুষের মনের তাপমাত্রা বাড়ছে, শীঘ্রই মন গলে গলে শরীরের রাগীয় অঞ্চল ডুবে যাবে

বৃহস্পতিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৮

কাজী নজরুল ইসলাম

কাজী নজরুল ইসলামের জীবনকালীন সময়ডার কথা ভাবলে আমার শরীরে কাডা দিয়া ওডে!

মুসলমানরা তখন বলে নজরুল হিন্দুদের কবি কারন সে কীর্তন লেখে। হিন্দুরা বলে নজরুল মুসলমানদের কবি কারন সে হামদ-নাত লেখে। আর ঠিক তখন প্রগতিশীলদেরও অনেকেই বলে নজরুল একটা বলদ কবি কারন সে মানবতার পক্ষের লোক নয়।

অথচ নজরুলের গানের লাইন দিয়ে আজকে মুসলমানদের ইদের আনন্দযাত্রা শুরু হয়, মানবতাবাদীদের বক্তৃতা শুরু হয় ,কৃষ্ণকে প্রান দিয়ে জপ করে কৃষ্ণদ্বীপের অধিবাসীরা।

সোমবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৮

খাবার নষ্টকারী মাছি

একদিন। গ্লাসের জলে একটি মাছি পড়ে। তার পাখা ভিজে যাচ্ছে এবং সে প্রায় জলে ডুবে যাচ্ছে। তার বেঁচে থাকার তীব্র ইচ্ছা তার ছটফটানিতে দেখতে পেলাম।  তার প্রান রক্ষা করলাম। মাছিটি নড়তে পারছে না। তার শরীরে এমন একটি রং দিয়ে দিলাম যাতে হাজার মাছির ভীড়েও আমি তাকে সনাক্ত করতে পারি।

সেদিনের মতো মাছিটি উড়ে গেলো। তাকে আমি পোষ মানাতে চাইনি। কারন মাছিকে কেউ পোষ মানাতে চায়না।

এখন প্রতিদিন খাবার টেবিলে পৃথিবীর ময়লা নিয়ে সেই মাছিটি হাজির হয়। খাবার নষ্ট করে। আমি তার প্রতি রেগে যেতে পারি কিন্তু রেগে যায় না। কারন আমার কাছে যা ময়লা মাছির কাছে তা খাবার।

পাপ

মানুষের উপর আস্থা রাখা পাপ, মানুষের উপর থেকে আস্থা হারানো মহা পাপ

রবিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৮

সবুজ হবে কালাচাঁন

জীবনের সব স্তর শেষ হয়ে গেলে বনলতাপৃথিবী কাছে আসে, কাছে এসে বলে এতোদিন কোথায় ছিলেন?
সব সুখ উড়ে যায় বাতাসে-- প্রচন্ড ব্যথায় আকাশও বুক খুলে বসে, গোপন গল্পরা রাতচোখে সবুজ আনে বনঘাসে। নরম মাংসের মতো হৃদয়ের গভীরে হাঁটে চাঁদের বাজার-- মানুষ মানে একটা হাইফেন একটা নিছক কাগজের মেলা।

অনেক অল্প অভিধানে মাথার ভেতর খেলা করে শব্দের পিকনিক, অবস্থান ত্রিমোহনী সুরে বাতাসের পরিবারে কালভার্ট আঁকে-- মানুষ মারে মানুষ বাঁচায়।

ধর্মঢাল চোখের আগে চলে রোবটের মতো-- রাত নাই ভোর নাই দুপুর নাই এক কথাতে সারাক্ষন। ভয়ের বাজারে একমাত্র দ্রব্য পরকীয়া পরকাল, ভয়ের বাজারে ডানাকাটা পরী উড়ে আকাশে বাতাসে কারনে অকারনে
জ্বর হবে পৃথিবীর
জ্বর হবে নিশ্চিত
ভেসে যাবে ডানবাম
বৃক্ষ পাবে যমুনার চর
সবুজ হবে কালাচাঁন

শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮

শবে মেরাজ

প্রত্যেক প্রেমিক প্রত্যেক প্রেমিকের সাথে মিলিত হবে এটাই শবে মেরাজের তাৎপর্য

পেরেকের দাগ

ফিরোজা বেগম। গ্রামের সহজ সরল মানুষ। তার তিন মেয়ে এক ছেলে। তার একটি মাত্র স্বামী। স্বামী বাইক দুর্ঘটনায় একটি পা হারায়। ছেলেটি পৃথিবীর সার্কাস বুঝার আগেই সংসারের হাল ধরেছে। ফিরোজা বেগম যথেষ্ট সুন্দরীও বটে। সে কোনোদিন স্কুলের বারান্দায় যায়নি। নারী যখন সুন্দরী হয় এবং অশিক্ষিত হয় তখন গ্রামীন জীবনে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। তাছাড়া গরীবের বউ এমনিতেই সবার ভাবী। তাছাড়া সম্পদ যেখানে থাকে সেখানে পিঁপড়ার দলাদলি ভয়ঙ্করভাবে লক্ষ করা যায়। পুরুষতন্ত্র নারীকেও সম্পত্তি মনে করে। সুন্দরী নারী ত শুধু সম্পত্তি নয় সম্পদও বটে।

অশিক্ষার অভিশাপ, সুন্দর দেহের অভিশাপ, দারিদ্র্যের অভিশাপ নিয়ে ফিরোজা বেগমকে অনেক জটিল কুটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। প্রত্যেকটি পরিস্থিতি টেকেল দিতে তার মৃত্যুর মতো যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়। মৃত্যু যন্ত্রনা কেমন জানি না কিন্তু যত যন্ত্রনার নাম শুনেছি তার মধ্যে মৃত্যু যন্ত্রনা নাকি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। তাই উপমা হিসাবে মৃত্যু যন্ত্রনার কথা আনলাম।

একদিনের ঘটনা। ফিরোজা বেগম স্নান করে তারে কাপড় নাড়ছে। এমন সময় এক কাপড় ব্যবসায়ী হাক দেয় "কাফর  লাগবে কাফর"। ফিরোজা বেগমের দৃষ্টি কাপড় ব্যবসায়ীর দিকে যায়। কাপড় ব্যবসায়ীর দৃষ্টি ফিরোজা বেগমের চুল থেকে টুপটাপ জল পড়ে যে সেলোয়ার কামিজের কিছু জায়গায় ভিজে গেছে সেই জায়গায়। সুতি কাপড় ভিজে গেলে চামড়ার সাথে লেগে যায় তখন কাপড় আর চামড়া মিলে তৃতীয় মাত্রার ভোগীয় আবেদন নির্মিত হয়।

ফিরোজা বেগম আবার প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে চোখে সুরমা দেয়। তার স্বামী সুরমাভরা চোখ দেখতে বেশ আরাম পায়। স্বামীর আরামের জন্যই মূলত সে চোখে সুরমা দেয়।

গ্রামের মানুষ চোখে সুরমা দেয়াকে পুন্যের কাজ মনে করে। তারা মনে করে মুসা নবী আর আল্লার প্রেমে তুর পাহাড় জ্বলে যায়। তুর পাহাড় জ্বলে যে ছাই হয় সেই ছাই থেকে সুরমার সৃষ্টি। তাই সুরমা কোনো পৃথিবীর বিষয় নয় স্বয়ং জান্নাতি নিয়ামত। বেহেশতের হুরদের চোখে সুরমা থাকবে এমন কথাও কোনো কোনো আলেমে দ্বীন প্রচার করে। গভীর রাতে যখন ফিরোজা বেগমের স্বামী নিয়াজ রহমান বউকে বুকে টেনে নেয় তখন হুর গেলমানের স্বাদ অনুভব করতে থাকে এবং তার জন্য অনেকাংশে দায়ী এই তুর পাহাড়ের সুরমা।

স্নান শেষ করে যখন ফিরোজা বেগম উঠানে বের হয় তখন কিন্তু তার চোখে আর সুরমা থাকে না, থাকে সুরমার লেশ। সুরমালেশ চোখে ফিরোজা বেগমকে আর হুর হুর মনে হয় না, মনে হয় পুরি। চোখের সামনে এমন জ্যালজ্যান্ত পুরী দেখে কাপড় ব্যবসায়ী মহব্বত মিয়ার মাথা ঠিক থাকতে চায় না। মহব্বত মিয়া ক্যামনে এই পুরীনৌকায় পেরেক ঢুকাবে এই চিন্তায় অস্থির।

ও মিয়া কী কাফর আছে?

মাগো, আমি মুনিপুরি শাড়ি বিক্রি করি।

হাওয়াই মিঠাই রঙের শাড়ি আর মনিপুরি শাড়ির প্রতি ফিরোজা বেগমের বেশ টান।  মনিপুরি শাড়ি পরে যখন সে পান চিবায় তখন মনে মনে এক অনিন্দ্যনিত্য আনন্দ অনুভব করতে থাকে। মনিপুরি শাড়ি সে একবারই উপহার পেয়েছিল। তাও পাশের গ্রামের করিম মিয়ার কাছ থেকে। করিম মিয়া বিবাহিত পুরুষ। পাঁচ সন্তানের বাপ। লুচ্চা হিসাবে গ্রামের মানুষের কাছে তার বেশ খ্যাতি রয়েছে। লুচ্চা করিম মিয়া কেন ফিরোজা বেগমের ঘরে পেরেক মেরে বসেছিল তার একটা ইতিহাস কিংবা আখ্যান অথবা গল্প ত আছেই।


ইতিমধ্যে তিন সন্তানের বাপ হয়েছে নিয়াজ রহমান। গ্রামে তার মুদির দোকান। সারাদিন দুই তিনশত টাকা পকেটে থাকে।

যে টেহা কামাও হে টেহা দিয়া সংসার চলে ক্যামনে?

তাইলে কি করমু, কও দেহি?

হেরা বারির দিলরুবার বাফ কি বালা টেহা পাটাচ্ছে প্রতি মাসে।

আমারে বিদেস যাইতে কইতাছ?

হ।

এলহা তাকতে ফারবা?

এলহা কিসের, আম্মা আছে না, আমার মাইয়াফুলা আছে না।


বউয়ের কথা শুনে নিয়াজ রহমান দালালের লগে যোগাযোগ করে। গ্রামের দালাল আবার আন্তর্জাতিক মানের টাউট। সে হয়তো একজন লোক বিদেশ নিতে পারবে কিন্তু এমন ভাব দেখায় যেন একশত জন লোক নিতে পারবে। ভাব ত বড় কথা না, সবার কাছ থেকে টাকাও নিবে। টাকা নিয়ে সব জনকেই দুইমাস পর পর ফ্লাইটের ডেইট দিবে।ডেইটের দিন ইয়ারপোর্ট নিবেও, নিয়ে গিয়ে দেড় দুই ঘন্টা বিমানবন্দরের আশেপাশে বসিয়ে রেখে বলবে ফ্লাইট ক্যানসেল-- আবহাওয়া খারাপ, বিমান দুর্ঘটনা হইছে, বিমানের তেল শেষ ইত্যাদি ইত্যাদি।

তখন একটি মজার ঘটনা ঘটে-- লোকটি বিদেশ যাবে বলে বাড়ির ছোট বড় সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে, লোকটির মা বউ এক সপ্তাহ আগে থেকে কান্নাকাটি শুরু করেছে। স্বামীকে বিদায় করে দরজা বন্ধ করে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছে আর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে, নির্ধারিত সময়ে বাড়ির উপর দিয়ে কোনো হেলিকপ্টার গেলেও বউ ভাবে এই বিমান দিয়ে স্বামী তার বিদেশ যাচ্ছে।

বউ সন্তান মা যখন ভাবছে তার স্বামী তার বাপ তার সন্তান বিদেশ চলে গ্যাছে এমন সময় সে বাড়িতে হাজির। বাড়ির কেউ প্রথমে তাদের চোখকে বিশ্বাস করতে চায় না, পরে দালালের উপস্থিতি দেখে আস্তে আস্তে বিশ্বাস করতে শিখে তাদের কর্তা বিদেশ যেতে পারেনি। এইভাবে কয়েকবার ফ্লাইট ক্যানসেল হওয়া পর দালালরে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তারপর কয়েকবছর পর দেনধরবার করে অর্ধেক টাকা হাসিল করা যায় বাকি অর্ধেক টাকা বিমান খেয়ে ফেলে।

নিয়াজ রহমানের টাকা কিন্তু বিমানে খায়নি। কারন ফিরোজা বেগমকে করিম মিয়ার প্রথম দেখাতেই ভালো লাগে। করিম মিয়াও চাচ্ছিল নিয়াজ রহমান বিদেশে গিয়ে থাকুক কয়েক বছর। নিয়াজ রহমান তাই যথাসময়েই বিদেশ যায়। খুব দ্রুতই চলে যায়। গ্রামের মানুষ বলাবলি করছিল নিয়াজের কফালই বালা। আসলেই নিয়াজের বিদেশী কফাল বালাই ছিল, প্রতিমাসে বিশ চল্লিশ হাজার টাকা পাঠাইত। কিন্তু বিদেশে বেশিদিন থাকতে পারে নাই, এর জন্য দায়ী এই করিম মিয়া।

করিম মিয়া ফিরোজা বেগমরে লইয়্যা মার্কেটে যায়, সিনেমা হলে যায়, পীর ভাইয়ের বাড়ি যায়, বৃষ্টির রাইতে ফিরোজা বেগমের লাইগ্যা কাঁঠাল নিয়া আহে, মিষ্টি কাঁঠাল। এই মিষ্টি কাঁঠালের গন্ধ রিয়াদে অবস্থানরত নিয়াজ রহমানের নাকে গিয়া লাগে। তাই কাউকে নাজানাইয়া নিয়াজ রহমান একদিন  সকাল সকাল বাড়িতে হাজির। বাড়িতে এসে দেখে করিম মিয়ার মাথায় হওরার তেল দিয়ে দিচ্ছে ফিরোজা বেগম, তখনই চিৎকারে বাড়ি কাঁপিয়ে তুলে নিয়াজ রহমান। তারপর থেকে করিম মিয়ার আর দেখা নাই।


আজ মুনিপুরি শাড়িওয়ালাকে দেখে ফিরোজা বেগমের করিম মিয়ার কথা মনে পড়ে, বৃষ্টির রাইতের কথা মনে পড়ে, মিষ্টি কাঁঠালের কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে করিম মিয়ার গরম শরীরের কথা। নারীশরীরে যে ঢেউ আছে আর সেই ঢেউ কাজে লাগিয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় এ বিষয়টি ফিরোজা বেগম প্রথমবারের মতো করিম মিয়ার কাছেই জানতে পারে। দুলদুলানি খেলায় ফেনা তুলার কাজটি করিম মিয়া ভালোই পারতো। এতো সব কারনেই লুচ্চা করিম ফিরোজা বেগমের মনে ঠাঁই করে নিয়েছিল। এখন আর করিম মিয়ার কথা ফিরোজা বেগমের মনে তেমন বাতাস কাটে না। গ্রামীন বউয়েরা আসলে চরের লাহান যার দখলে যায় তার কাছেই চাষযোগ্য জমি হয়ে ওঠে।

এ মুনিপুরি সারিডা কত টেহা?

মাগো তুমার লগে দামদর করা যাইব না, নিষেধ।

কেডা নিসেদ করছে?

আমার মাথার ওফরে ছেমার লাহান যিলা তাহে হিলা।

হিলা কেডা?

জ্বিনের বাদসা রাজিবদিন।

রাজিবদিনের নাম শুনে ফিরোজা বেগমের সইললে কাডা দিয়া ওডে। বহুদিন ধরে ফিরোজা বেগম একজন মানুষকে তালাশ করতেছে মনে মনে যার লগে জ্বিনের বিশেষ হাতির আছে। জ্বিন নয় একেবারে জ্বিনের বাদশার লগে হাতির আছে এমন মানুষ তার বাড়ি পর্যন্ত চলে আসবে এমনটা বিশ্বাস করার নয়। তাও ফিরোজা বেগম বিশ্বাস করতে চায়। আল্লার বিশেষ বান্দারা মনের খবর জানে এমন কথা ফিরোজা বেগম অনেকবার শুনেছে হুজুরদের কাছে।

বাজান আফনে আমরার ঘরে আইয়েন।

ঘরে যাওনের অনুমতি নাই মা।

বাজান আমরা কী পাফি, ঘরে কেরে যাইতেন না?

এ বাড়ির অফর দিয়া দেও আসা যাওয়া করে। এ বাড়িতে অনেক আগেই রাজা বাদশার বিল্ডিং ওটে যাইত, শুধু দেওয়ের কুনজরের কারনে কোনো উন্নতি নাই, কুফার পর কুফা লাইগগা তাহে।

অহন কি করা লাগব বাজান?

পানি আন।

পানির মধ্যে প্রায় আধা ঘন্টা তাকায়া থাকে মহব্বত। তারপর হাত রাখে পানিতে। তারপর এই পানি সবাইকে খেতে বলে।

বাজান পানি ত মিডা অইয়্যা গ্যাছে গা।

এডা পানি না, রাজিবদিন জ্বিন তার রাজ্য থেকে কুমকুম গাছের রস নিয়া আইছে এক মিনিট আগে, এই রস পানিতে দিলে পানি আর পানি থাকে না, কুমকুম বিজলি হয়ে যায়।

কুমকুম বিজলির নাম ফিরোজা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা আগে শুনেনি।  শুনে নাই বিধায় কুমকুম বিজলি তাদের কাছে জমজম কূপের পানির চেয়েও পবিত্র ও দেওদূরকারী বলে মনে হচ্ছে।

কুমকুম বিজলির পানি খাওয়ানোর পর বিনা টাকায় মুনিপুরি শাড়ি ফিরোজা বেগমের হাতে দিয়ে বিদায় নেয় মহব্বত।

মহব্বত এখন আর কাপড় ব্যবসায়ী মহব্বত না। এখন সে দরবেশ মহব্বত।
দরবেশ মহব্বতের জন্য এখন ফিরোজা বেগমের মন আনচান করতে থাকে। কত কথা জমা আছে তার মনে। কিন্তু বাড়ি থেকে দেও দূর হওয়ার আগ পর্যন্ত ত দরবেশ বাবা আসবে না।

সকাল থেকে রাত
 রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ফিরোজা বেগমের মনে এখন শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা। দরবেশ বাবার অপেক্ষা। নিয়াজ রহমানও ইদানিং দরবেশ বাবারে নিয়া নানা রকম খোয়াব দেখা শুরু করেছে। একদিন নিয়াজ রহমানের ছেলে জিম খোয়াবে দেখছে দরবেশ বাবা তারে লয়ে আসমানের উপর দিয়া উড়ে উড়ে জ্বিনদের রাজ্যে যাইতেছে। এই খোয়াব জিম আবার তার মার কাছে কইছে। মা আবার জিমকে এই খোয়াবের কথা কারো কাছে কইতে নিষেধ করছে, তাতে নাকি খোয়াবের বরকত নষ্ট অইবো। জিম কারো কাছে এই বরকতময় খোয়াবের কথা বর্ননা করতে যায়নি। জিমের মাও এই দরবেশ বাবার কথা কারো সাথে শেয়ার করেনি, গর্ভের সন্তানের মতো ধরে রেখেছে মনে।

অন্ধকার রাত। মাঘ মাসের অন্ধকার রাত। গভীর ঘন কুয়াশা, গভীর ঘন অন্ধকার রাত। রাত দশটায় দরজায় কড়া নাড়ে কেউ একজন।

গ্রামের বাড়িতে শীতের মাসে রাত দশটা মানে অনেক রাত। তারপরও বেশি কড়া নাড়তে হয়নি দরবেশ বাবার। সকাল থেকেই একটা কাক ডাকতে ডাকতে বাড়ি প্রায় মাতিয়ে তুলে যা মেহমান আসার ইঙ্গিত বহন করে। তাই নিয়াজ রহমান পরিবারের একটা মানসিক প্রস্তুতি ছিল কেউ একজন আসবে।

দরজা খুলে জিম। দরবেশ বাবাকে দেখেই জিম আনন্দে আত্মহারা। পরিবারের সবাই গোল হয়ে বসে। ফিরোজা বেগম অনেক খাবার আপ্যায়ন করতে চায় কিন্তু রাতে সে কোনো খাবার খায় না, জ্বিনের বাদশার নিষেধ, এক ফোঁটা পানিও খায় না দরবেশ বাবা।

মা তুই মুনিপুরি শাড়িডা পরে এখানে আই, জ্বিনের বাদশার মুনিপুরি শাড়ি অনেক পছন্দ। আজগা জ্বিনের বাদশার লগে তরারে দেখা করামু।

ফিরোজা বেগম মুনিপুরি শাড়ি পরে এসে দরবেশ বাবার মুখোমুখি বসে। দরবেশ বাবার পাশে নিয়াজ রহমান। বাবার আরেকপাশে জিম, জিমের পাশে তার দুই বোন, নিয়াজ রহমানের পাশে তার এক মেয়ে।

ঘরের হগল লাইট নেভানো হয় বাবার আদেশে, বাবার আদেশে এক জগ পানি আনা হয়, দরবেশ বাবার আদেশে কেবল পাঁচটি মোমবাতি টেউ টেউ করে জ্বলতে থাকে। সবাইকে চোখ বন্ধ করতে বলে বাবা। বাবার কথামতো সবাই চোখ খুলে। তারপর দরবেশ বাবা কুমকুম বিজলি পান করতে বলে সবাইকে সহি নিয়তে। সবাই সহি নিয়তে বিসমিল্লাহ বলে কুমকুম বিজলি পান করতে থাকে। নিয়াজ রহমান সবার চেয়ে এক মগ বেশি পান করে কুমকুম বিজলি।
কুমকুম বিজলি পান করে সবাই জ্বিন বাদশার রাজ্যে  চলে যায়, ঘরে থাকে কেবল দরবেশ বাবা।

জ্বিনবাদশার রাজ্য থেকে তারা যখন পৃথিবীতে ফিরে আসে তখন তারা আর ঘরে নাই, তারা তখন হাসপাতালে। হাসপাতাল রুমের সবকটি পাখা ঘুরছে, শুধু ফিরোজা বেগমের বেডের উপরের লাল আর সবুজ রঙের পাখাটি ঘুরছে না, নষ্ট। ফিরোজা বেগমের পাশে বসা তার প্রতিবেশী চান্দামা। চান্দামা ফিরোজা বেগমের কপালে মোলায়েমভাবে আঙ্গুল নাড়ছে। নিয়াজ রহমান বউকে দেখামাত্র চোখ বন্ধ করে বেডের পাশে বসে পড়ে। ফিরোজা বেগমের মাংসে তখন অনেক পেরেকের দাগ!


বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৮

বিয়ে ভাইরাস

বিয়ে করার আগে ছেলেটার বুক যথাসম্ভব উঁচু থাকে, বিয়ে করার পর জামাইয়ের বুক নিচু হতে থাকে বউয়ের বুক যথাসম্ভব উঁচু হতে থাকে-- নদীর এপার ভাঙে ওপার জাগে এই ত নদীর খেলা

বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৮

বাংলাদেশী

একমাত্র বাংলাদেশের ক্রিকেটটিম খেলায় জিতলেই সব বাংলাদেশী একসঙ্গে আনন্দিত হয়, অন্য কোনো জায়গায় বাংলাদেশীরা তেঁতুল পাতার সুজন হতে পারে না

ভো র

হুট করে ভূমিকম্প আসতে পারে, ভোর আসতে সময় লাগে

মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৮

পৃথিবীতে মানুষ আসে না, আসে মানুষের বয়স

পৃথিবীতে মানুষ আসে না, আসে মানুষের বয়স।

বয়স কথা বলে, বয়স খেলাধূলা করে, বয়স চাকরি করে, বয়স বিয়ে করে, বয়স হিজরতে যায়, বয়স বিপ্লব করে, বয়স বাবা হয়, বয়স ঠাকুরমা হয়, বয়স দাদা হয়, বয়স প্রেম করে, বয়স কথা দিয়ে কথা রাখে না, বয়স বৃন্দাবনে যায়, বয়স রাধা হয়, বয়স রাজা হয়, বয়স কান্না করে, বয়স মারা যায়।

পৃথিবীতে মানুষ আসে না, আসে বয়স।

জীবনের সুইচ

সুইচ একবার নিবে গেলে
বাত্তি ত আর জ্বলে না
পাওয়ার ব্যাংকের খবর নিলা না
পাওয়ার ব্যাংকের খবর জান না।।

মায়ের পেটেতে উদয়
মায়ের পেটেতে অস্ত
মাঝখানেতে চাকরি বাকরি আনন্দ কষ্ট
মায়ায় মায়ায় জীবন গেলো
কায়া সাধন হলো না।।

মনবিমান আকাশ পাতালে
শান্তি খুঁজে ঘরের ভেতরে
রংনাম্বারে ফোন করে সে আসল মানুষ খুঁজে
ছায়ার মানুষ মানুষ নারে
কায়া সাধন হলো না।।