আজ মানে বৃহস্পতিবার। আজ মানে আর এক সপ্তাহ। আমার পাশে বসা মিষ্টি। আজ সে আমার পাশে বসা। গতকাল সে আমার পাশে ছিল না। আগামীকালও সে আমার পাশে থাকবে না। গতকাল যে আমার পাশে ছিল তাকে যেমন করে অনুভব করতে পারি আগামীকাল যে আমার পাশে থাকবে তাকে তেমন করে অনুভব করতে পারি না। গতকাল আর আগামীকালের মাঝে আমিকাল বরাবরই নিয়তি হয়ে যায়।
নিয়তি ঠিক নয় বলা যায় সময়নিষ্ঠুরতা। সময়নিষ্ঠুরতা যতবার উপলব্ধি করেছি ততবার নাজিম হিকমতের কয়েকটি লাইন আমাকে জাপটে ধরেছে "বাতাস আসে বাতাস যায় / চেড়ির একই ডাল একই ঝড়ে / দুইবার দোলে না "।
এক সপ্তাহ পর আমরা কেউ আর ক্লাসে বসবো না। ক্লাস হবে। জেলখানার মতো নিয়মকানুন ঠিকঠাক চলবে। এক সপ্তাহ পর আমরা কেউ আর জেলখানায় থাকবো না। অনেক কালো টিপ আর আমার চোখে পড়বে না। আমরা ঠিকই জাহাজ বনে যাবো। কেউ আবিষ্কার করবে নতুন নতুন দ্বীপ, কেউ জলে কবর রচনা করবে। জীবন এমনই। এতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। আনন্দের বিষয় একটি সপ্তাহ যে আমাদের জীবনের শেষ সপ্তাহ তা ধীরে ধীরে টের পাচ্ছি, কারো কারো মনে মেঘ জমা হচ্ছে খুব করে কিন্তু দারুন বৃষ্টি হবে এমন উপায় নেই। বাতাসের হৃদয়স্পর্শী আলিঙ্গন পেলে মেঘ বৃষ্টি হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের মেঘ বৃষ্টি হবে এমন বাতাস কই!
এই পৃথিবী থেকে যখন চলে যাবো তখন এমন করে এক সপ্তাহ গুনতে পারবো না। কেউ কেউ হয়তো এক মিনিট অথবা এক সেকেন্ড আগে টের পেতে থাকে তার বা তাদের জন্য আর পৃথিবীতে কোনো জায়গা নেই। তখন জীবনের শেষ এক মিনিট এক সপ্তাহ অথবা এক কোটি বছরের মতো অনুভবে আসতে থাকে হয়তো।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দুই ধরনের বন্ধুদের সাথে আমি ক্লাস করেছি। যারা বোরখা পরে এবং যারা পরে না। যারা বোরখা পরে কোনোদিন আমি তাদের মুখ দেখেনি, বোরখাছাড়া যদি কখনো তাদের সাথে আমার দেখা হয় আমি তাদের চিনতে পারবো না। যারা বোরখা পরেনি তাদের মুখে ছিল তীব্র আলো, ফলত তারাও যদি প্রকৃত চেহারা নিয়ে আমার সামনে আসে তাদেরকেও আমি চিনতে পারবো না। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। জেলখানাতেও প্রশান্তির ধারা নিয়ে আসা যায় কয়েদীর সচেতন পদক্ষেপে।
প্রত্যেক প্রশান্তি সংক্রামিত। আমরা প্রশান্তিকে সংক্রামিত করতে পারিনি। তা অবশ্যই আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের সত্যিকারের পরিচয় থেকে দূরে থাকার ব্যর্থতা।
মানুষের পরিচয় মানে ধর্ম পরিচয় নয়। ধর্ম মানুষের পরিচয় হতে পারে না। ধর্ম মানুষের প্রয়োজনের নাম। আমরা শীতকালে এক পোশাক পরি আবার গ্রীষ্মকালে আরেক পোশাক। পোশাক আমাদের প্রয়োজন। ধর্মও পোশাকের মতো এক প্রয়োজনীয় বিষয়। ধর্মকে শরীরের চামড়া করেছি বিধায় দিন দিন আমরা একে অন্য থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। যেমন আমার থেকে মিষ্টি অনেক দূরে আমিও মিষ্টি থেকে অনেক দূরে অথচ কত সুন্দর করে আমরা পাশাপাশি বসে আছি। তাকে বলতে পারছি না অন্য কোনো পৃথিবীতে আমাদের দেখা হবে সেখানে আমরা আবার একসাথে কয়েদী জীবনযাপন করবো অথবা আমি জল হলে তুমি হবা নদীর পাড়। বলতে না পারার কষ্ট বলতে পারার আনন্দের চেয়ে বেদনাদায়ক। অনেক বেদনা নিয়ে মানুষ মৃত্যুবরন করে বিধায় মানুষ আর পৃথিবীতে ফেরত আসতে চায়না। জেলখানায় কেউ দুইবার যেতে চেয়েছে এমন কথা ত শুনিনি।
আমার জেলখানার বন্ধুরা, তোমরা ভালো থেকো, তোমাদের সাথে এমন করে আর দেখা হবে না। অনেক দেখাদেখির পরও তোমাদের চিনতে পারিনি, আবার অনেক বছর পর তোমাদের সাথে দেখা হলে আমাকে তোমরা চিনবে বা আমি তোমাদের চিনবো বলে মনে হয় না। অচেনা মানুষকে কেউ চিনতে পেরেছে বলে কোনো পাঠশালায় পাঠ করিনি।
নিয়তি ঠিক নয় বলা যায় সময়নিষ্ঠুরতা। সময়নিষ্ঠুরতা যতবার উপলব্ধি করেছি ততবার নাজিম হিকমতের কয়েকটি লাইন আমাকে জাপটে ধরেছে "বাতাস আসে বাতাস যায় / চেড়ির একই ডাল একই ঝড়ে / দুইবার দোলে না "।
এক সপ্তাহ পর আমরা কেউ আর ক্লাসে বসবো না। ক্লাস হবে। জেলখানার মতো নিয়মকানুন ঠিকঠাক চলবে। এক সপ্তাহ পর আমরা কেউ আর জেলখানায় থাকবো না। অনেক কালো টিপ আর আমার চোখে পড়বে না। আমরা ঠিকই জাহাজ বনে যাবো। কেউ আবিষ্কার করবে নতুন নতুন দ্বীপ, কেউ জলে কবর রচনা করবে। জীবন এমনই। এতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। আনন্দের বিষয় একটি সপ্তাহ যে আমাদের জীবনের শেষ সপ্তাহ তা ধীরে ধীরে টের পাচ্ছি, কারো কারো মনে মেঘ জমা হচ্ছে খুব করে কিন্তু দারুন বৃষ্টি হবে এমন উপায় নেই। বাতাসের হৃদয়স্পর্শী আলিঙ্গন পেলে মেঘ বৃষ্টি হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের মেঘ বৃষ্টি হবে এমন বাতাস কই!
এই পৃথিবী থেকে যখন চলে যাবো তখন এমন করে এক সপ্তাহ গুনতে পারবো না। কেউ কেউ হয়তো এক মিনিট অথবা এক সেকেন্ড আগে টের পেতে থাকে তার বা তাদের জন্য আর পৃথিবীতে কোনো জায়গা নেই। তখন জীবনের শেষ এক মিনিট এক সপ্তাহ অথবা এক কোটি বছরের মতো অনুভবে আসতে থাকে হয়তো।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দুই ধরনের বন্ধুদের সাথে আমি ক্লাস করেছি। যারা বোরখা পরে এবং যারা পরে না। যারা বোরখা পরে কোনোদিন আমি তাদের মুখ দেখেনি, বোরখাছাড়া যদি কখনো তাদের সাথে আমার দেখা হয় আমি তাদের চিনতে পারবো না। যারা বোরখা পরেনি তাদের মুখে ছিল তীব্র আলো, ফলত তারাও যদি প্রকৃত চেহারা নিয়ে আমার সামনে আসে তাদেরকেও আমি চিনতে পারবো না। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। জেলখানাতেও প্রশান্তির ধারা নিয়ে আসা যায় কয়েদীর সচেতন পদক্ষেপে।
প্রত্যেক প্রশান্তি সংক্রামিত। আমরা প্রশান্তিকে সংক্রামিত করতে পারিনি। তা অবশ্যই আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের সত্যিকারের পরিচয় থেকে দূরে থাকার ব্যর্থতা।
মানুষের পরিচয় মানে ধর্ম পরিচয় নয়। ধর্ম মানুষের পরিচয় হতে পারে না। ধর্ম মানুষের প্রয়োজনের নাম। আমরা শীতকালে এক পোশাক পরি আবার গ্রীষ্মকালে আরেক পোশাক। পোশাক আমাদের প্রয়োজন। ধর্মও পোশাকের মতো এক প্রয়োজনীয় বিষয়। ধর্মকে শরীরের চামড়া করেছি বিধায় দিন দিন আমরা একে অন্য থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। যেমন আমার থেকে মিষ্টি অনেক দূরে আমিও মিষ্টি থেকে অনেক দূরে অথচ কত সুন্দর করে আমরা পাশাপাশি বসে আছি। তাকে বলতে পারছি না অন্য কোনো পৃথিবীতে আমাদের দেখা হবে সেখানে আমরা আবার একসাথে কয়েদী জীবনযাপন করবো অথবা আমি জল হলে তুমি হবা নদীর পাড়। বলতে না পারার কষ্ট বলতে পারার আনন্দের চেয়ে বেদনাদায়ক। অনেক বেদনা নিয়ে মানুষ মৃত্যুবরন করে বিধায় মানুষ আর পৃথিবীতে ফেরত আসতে চায়না। জেলখানায় কেউ দুইবার যেতে চেয়েছে এমন কথা ত শুনিনি।
আমার জেলখানার বন্ধুরা, তোমরা ভালো থেকো, তোমাদের সাথে এমন করে আর দেখা হবে না। অনেক দেখাদেখির পরও তোমাদের চিনতে পারিনি, আবার অনেক বছর পর তোমাদের সাথে দেখা হলে আমাকে তোমরা চিনবে বা আমি তোমাদের চিনবো বলে মনে হয় না। অচেনা মানুষকে কেউ চিনতে পেরেছে বলে কোনো পাঠশালায় পাঠ করিনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন