বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৭

বিপ্লব

বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাজানোর কাজটি হলো বিপ্লব আর গলায় ঘন্টা বাজানোর গল্পটি রাজনীতি

মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৭

অনেক জমেছে কুয়াশা

দূরে
আরও দূরে গেলাম চলে
ভুলে
আরও ভুলে তোমায় নিলে তুলে
উজ্জ্বল যতসব তারা আজ আকাশছাড়া
রোদের সকালে তাপের পেখমে দহনতাড়া
একলা ঘরে আরও ভালো
মৌমাছি ফুলে ফুলে কৃষ্ণকালো
চোখ না চিনে রোবটআলো
লুনাটিক মগ্নতা অনেক হলো
মানুষের ঘরে এবার মন তুলে আনো
গেলাম চলে তাহলে
অনেক জমেছে কুয়াশা কাল টু কালে

সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭

মাছ আর পাখির মতো হুবহু

শুন্যকে মিছিলে দাঁড় করালেও সংখ্যা হয় না, সংখ্যা মারা গেলেও শুন্য হয় না, অন্ধকারের সীমান্তে অন্ধকার থাকে আলোর সীমান্তে থাকে আলো, পাহাড়ের সাথে মুদির দোকান মালিকের কথা হয়, মুদির মালিক চাঁদ কিনতে চায়, তাই সে জোছনা রাতে টিএসসিতে এসে বসে থাকে, টিএসসি আবার আলু বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে, এখন সে নায়িকা শাবানা নিয়ে ব্যস্ত, শাবানা আবার অভিনয় রেখে আল্লারাসূল নিয়ে মহা ব্যস্ত, জান্নাত তাকে পেতেই হবে।

এই দিকে দেখা দিয়েছে আইন সংকট। অনেক সংকটের মুহূর্তে মহারাজের ঠান্ডা লেগেছে, মহারাজ গান করতে পারছে না। রাজ্যে এখন মুশকিল কান্ড। নদী শুকিয়ে গ্যাছে। তাই নদী কৌশলে ডাকে। রাক্ষস রাক্ষসীর খেলা জমবে এবার।
আমার আর মাছ হওয়া হলো না।
আমার আর পাখির দেশে যাওয়া হলো না।
এখন একটা কুড়েঘর বানাব মাছ আর পাখির মতো হুবহু।

শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭

Software

Man at all software not yet hardware and we are the same software and software has no country so called, our country is our working process

আরোপিত

আরোপিত সব কিছু জোয়ারের মতো দেখায় কিন্তু ভাটার মতো আচরন করে

শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

এন্টিভাইরাস

ভাইরাসকে আক্রমন নয়, ভাইরাসের আক্রমনের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্যও শক্তিশালী এন্টিবডির প্রয়োজন

বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭

সমাজ সেবা?

আমার দুই বন্ধু। আমরা তিনজন হাঁটছি। তারা দুইজন কথা বলছে। একজন ব্যবসায়ী। একজন সমাজ সেবক। ব্যবসায়ীজন বলছে--

আমার মাথায় একটা আইডিয়া আসছে।

কী?

এই শহরে ত অনেক রিক্সা আছে।

হুম।

রিক্সার পেছনে আমার কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিয়ে দিলে সারা শহরে আমার বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে যাবে। এত সহজে ও সস্তায় মূল্যবান বিজ্ঞাপন দেয়ার আর কোনো উপায় নেই।

সমাজ সেবকজন এবার বলে--

আমার মাথায় একটা আইডিয়া আসছে।

কী?

অনেকের ওড়না বাহনের চাকার সাথে প্যাঁচ খায়। তাই রিক্সার পেছনে লিখে দিতে পারি 'আপনার ওড়না চাকা থেকে সাবধানে রাখুন'।

ভালো আইডিয়া।

তারপর ব্যবসায়ীজন আবার বলে--

আরও একটি কাজ করা যায়।

কী?

রিক্সার পেছনের অংশকে দুটি ভাগ করে একটি ভাগে আমার কোম্পানির বিজ্ঞাপন আরেকটি ভাগে ওড়নার কথাটা বললে কেমন হয়?

ভালো হবে। ব্যবসাও হবে আবার সমাজ সেবাও হবে।

আমি কান পেতে শুনছি আর হাসছি। কারন সমাজ সেবা যখন থেকে ব্যবসায়ীদের হাতে গেল তখন থেকে ব্যবসা হলো মুখ আর সমাজ সেবা হলো প্রসাধনী, প্রেম ভালোবাসা মমতা সহানুভূতি হলো উপযোগ আর মানুষ হলো উপযোগের উপকরন....

মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭

বিপ্লব বাড়ি যায়

আলোচিত জ্ঞান দিয়ে অধ্যাপক হওয়া যায়, চকচকে চাকরি নেয়া যায়, মানুষের মুখে আসা যায় কিন্তু বিপ্লব করা যায় না! বিপ্লবের জন্য জাস্ট প্রয়োজন মানসিকতা, ত্যাগের মানসিকতা! বর্তমান ভোগের রাজ্যে ত্যাগের চেয়ে বড় কোনো বিপ্লব নেই। ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে জনকল্যানকামী মানুষই প্রকৃত বিপ্লবী আর অন্যরা ভোগ ও ভোগের রেপ্লিকা 

আমাদের হত্যার সময় কোনো ভোর ছিল না

সানরাইজটা ছিল আমাদের
সানসেটটা হয়ে গেলো তোমার একান্তভাবে
সূর্যের লাল হলুদ আলো আমার চোখেও এসে পড়েছে
আমার চোখ রক্তের হৃদয়ের মতো লাল
সমবায় সমিতির নামে যারা রক্তখেকো তারা এখনো শান্তি উড়ায় মিছিলে সমাবেশে
তারা মনান্তর কথার লোভে হত্যা করে সুবোধ দৃশ্য
হৃদয়ে তাদের গর্ত
হৃদয়গর্তে তাদের লোভমাছ-- লাফালাফি করে

যারা চায়ের কাপে তুলে ধরে হিংসার জীবানু তারা এখন পূর্নকালীন প্রেমিক

আমার অপরাধ তরকারীতে লবন একটু মাত্রার বাইরে দিয়েছি
আমার অপরাধ লাল গোলাপের পরিবর্তে তোমার জন্য এনেছি সাদা গোলাপ
আমার অপরাধ মাস্টার হওয়ার পরিবর্তে হৃদয়ের কাঙাল হয়েছি
আমার অপরাধ পানাফুলের সবুজ থেকে শুরু করতে চেয়েছি আমাদের হৃদয়সংসার
আমার অপরাধ হতে পারিনি সাবেক চটপটি ফুচকা রাষ্ট্রের সংবিধান

নির্ভেজাল ক্ষমা আমিও করতে জানি
ক্ষমাশাপ তোমাকে দিতে চাই না আমি
ক্ষমাভিনয় দেখাতে চাইনা তোমাকে
ক্ষমাহীন মার্জনায় হৃদয়ে হৃদয়ে বহুকাল আমরা বেঁচে যাবো
প্রয়োজনশায় আবার সাগরে যাবো
আবার চানরে না লইয়ে তোমার হাসিরে লইবো

তারা তখনো গ্রীষ্মকালীন
তারা তখনো জাবরকাটা তর্কেলীন
তারা তখনো হৃদয় হত্যার মতো অশ্লীল

আমার থেকে দুটি ছায়া বের হয়ে যায়
একটি দেখে আরেকটি দেখায়
দেখাতে দেখাতে দেখতে দেখতে আমার দিন যায় আমার দিন যায়
সকালের সূর্যটা ঠিকই পশ্চিম দিকে আরেকটি সকাল বানায়

বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৭

এখন অনেক রাত

এখন অনেক রাত। দুইটা সাতাশ মিনিট না, দুইটা সাইত্রিশ মিনিট। তোমার জেগে থাকার সম্ভাবনা অনেক। জেগে থাকলে কেউ হৃদয়ের ডাক শুনতে পাই না। পৃথিবী এসে ভর করে কানে। প্রতি রাতে তোমার নামে ডাক পাঠাই। একদিনও উত্তর আসে না। যতটুকু জানি পৃথিবীতে এখন কোনো হরতাল চলছে না।

তাহলে উত্তর কেন আসে না?

শব্দের ভীড়ে প্রশ্ন করা যত সহজ উত্তর পাওয়া ততটা কঠিন।

ডাকপিয়ন হয়তো ঘুমিয়ে যাওয়ার আগেই তোমার কাছে চিঠিবার্তা পৌঁছে দেয়, তুমিও হয়তো নিছক শব্দের দুষ্টুচক্র ভেবে ডাস্টবিনে আমার শব্দকে রাত্রিযাপন করতে দাও। সকাল হলে পৃথিবী সূর্য দেখলেও আমার পাঠানো শব্দেরা আরও কোনো উন্নত ডাস্টবিনের উন্নত অন্ধকারে চিরকালের জন্য জায়গা করে নেয়।

পৃথিবী এক আজব জায়গা। কেউ সূর্যের আলোতে অন্ধকার দেখে কেউ অন্ধকারে আলো নিয়ে খেলে। আমি ঠিকই বাতাস ধরতে জলে নামবো। কৌশল নেয় তাতে কী! প্রয়োজনের চেয়ে বড় কৌশল  আজও আবিষ্কৃত হয়নি প্রিয়তমা আমার। তোমাকে আমার প্রয়োজন। তাই তুমিই কৌশল  আবার তুমিই আমার বাতাস।

এখন অনেক রাত। অনেকেরই কাল সকাল হবে। আমারও হবে। তবে আমার সকালটা ঠিক আরেকটি রাতের কাছাকাছি।

বুকে যাদের অনেক স্বপ্ন তাদের অনেক বাতাসের দরকার হয়। স্বপ্ন প্রচুর তেল খায়। বাতাস তুমি আমায় ছেড়ে যেও না। অনেকটা পথ আমি যেতে চাই ঠিক ব্লাকহোলের প্রথম পিতা পর্যন্ত। তার জন্য আমাকে সূর্যের আলোতে হাঁটতে হবে।

দূরত্বহীন গুরুত্ব আমরা রচনা করে যাবো ফুলের বাগানে, আমাদের শিশু জানবে ফুলের গন্ধ, আমাদের গাছে গাছে থাকবে পাখিদের সংসার, আমাদের নদী মেনে নিবে উর্বর ভূমির গুরুত্ব। শুধু একবার তুমি সঠিক সময়ে যেন ঘুমিয়ে যাও, শুধু একবার যেন ডাকের লোকটি সঠিক সময়ে আমার বার্তা তোমার মাইন্ডবক্সে পৌঁছে দেয়। তবেই পৃথিবীর প্রার্থনা আমার ঘর থেকে ভগবান হয়ে ছড়িয়ে পড়বে সময়হীন শুন্যতায়, আমার ঘর হবে ছাদের উপরের আকাশ। শুধু একবার লোকটি যেন তোমার ঘুমের জন্য অপেক্ষা করে।

আর আমি? আমি প্রতি রাতে তোমার নামে ঘুমাতে যাই। আমার ঘুম শিশুর মতো ভুলে যায় অতীত ভুলে যায় ভবিষ্যৎ, এক অদৃশ্য উত্তরপাওয়া আশাকাল হৃদয়ের নো মেন্স লেন্ডে বাস করতে থাকে করতেই থাকে।

এখন রাত দুইটা সাইত্রিশ নয়, তিনটা সাইত্রিশ। তুমি হয়তো এখনো জেগে আছো। যারা জেগে থাকে তাদের নাম হয়তো মানুষ, যারা ঘুমিয়ে যায় তারা এক হৃদয়ের নাম। হৃদয়ের অনেক গভীরে আমাদের দেখা হবে এই আশায় এখুনি ঘুমাতে গেলাম, তুমি নীল শাড়ির সাথে মিক্সিমাম এ্যাশ কালারের ব্লাউজ পরে আমার চোখ থেকে সানগ্লাসটা সরিয়ে নিও। আমার চোখ দেখবে তোমার হাসির কম্পন, তোমার চোখ দেখবে নির্জনতার এক প্রাচীন স্টেশন যেখানে সবুজ পতাকাটা অপেক্ষার তাপে নীল হয়ে গ্যাছে বহুদিন আগে

শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৭

মসজিদ

আজকাল মসজিদ নির্মান চমৎকার এক সোস্যাল ফ্যাশন। চারটি ঘর মিলে একটি বাড়ি, সুতরাং তাদের একখান মসজিদ লাগবে। আগে দেখতাম মসজিদকে কেন্দ্র করে দূরদূরান্তের মানুষের মধ্যে একটি সম্প্রীতি গড়ে ওঠতো। কারন দুইতিন গ্রাম মিলে একটি মসজিদ ছিল। এখন মানুষে মানুষে সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে আর মসজিদের সংখ্যা বাড়ছে। মসজিদের সংখ্যা আরও বাড়বে এবং প্রত্যেক ঘরে ঘরে মসজিদ গড়ে ওঠবে ইনশাল্লাহ। কারন আল্লা মানুষের মধ্যে থাকে না, আল্লা থাকে মসজিদে

বুধবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৭

আমার কোনো ছাদ নেই

আমার কোনো ছাদ নেই। নগরের রাত থেমে যায়। নগরে অন্তত একটা ছাদের প্রয়োজন পড়ে। আমার আকাশে বৃষ্টি যেমন করে পড়ে কুয়াশাও তেমন করে। নগরে তোমারও তেমন কোনো ছাদ নেই। ছাদের নামে কিছু হলুদ বাতিঘর কিছু কোলাহল তোমার রাতে নামে দেয়াল লিখনের অনেক পর। নগরে কারোই কোনো ছাদ নেই-- আছে কেবল সিগারেট ধোঁয়া অনেক পাখির ভীড়ে একটি অসুস্থ চেয়ার চেয়ারের পাশে গ্রামের সেই টুনটুনি পাখি। পাখির চোখে অনেক পুরনো এক ব্যস্ততার আগুন। পাখিটি দেখে না, আগুন ফলায়, পাখিটি গান গায় না, আগুন গিলায়।

সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৭

বি শ্বা স

বিশ্বাস একটি শহরের নাম যেখানে মানুষ অধিক সুবিধার আশায় ভীড় করতে থাকে 

শুক্রবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৭

আমার জেলখানার বন্ধুরা

আজ মানে বৃহস্পতিবার। আজ মানে আর এক সপ্তাহ। আমার পাশে বসা মিষ্টি। আজ সে আমার পাশে বসা। গতকাল সে আমার পাশে ছিল না। আগামীকালও সে আমার পাশে থাকবে না। গতকাল যে আমার পাশে ছিল তাকে যেমন করে অনুভব করতে পারি আগামীকাল যে আমার পাশে থাকবে তাকে তেমন করে অনুভব করতে পারি না। গতকাল আর আগামীকালের মাঝে আমিকাল বরাবরই নিয়তি হয়ে যায়।

নিয়তি ঠিক নয় বলা যায় সময়নিষ্ঠুরতা। সময়নিষ্ঠুরতা যতবার উপলব্ধি করেছি ততবার নাজিম হিকমতের কয়েকটি লাইন আমাকে জাপটে ধরেছে "বাতাস আসে বাতাস যায় / চেড়ির একই ডাল একই ঝড়ে / দুইবার দোলে না "।

এক সপ্তাহ পর আমরা কেউ আর ক্লাসে বসবো না। ক্লাস হবে। জেলখানার মতো নিয়মকানুন ঠিকঠাক চলবে। এক সপ্তাহ পর আমরা কেউ আর জেলখানায় থাকবো না। অনেক কালো টিপ আর আমার চোখে পড়বে না। আমরা ঠিকই জাহাজ বনে যাবো। কেউ আবিষ্কার করবে নতুন নতুন দ্বীপ, কেউ জলে কবর রচনা করবে। জীবন এমনই। এতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। আনন্দের বিষয় একটি সপ্তাহ যে আমাদের জীবনের শেষ সপ্তাহ তা ধীরে ধীরে টের পাচ্ছি, কারো কারো মনে মেঘ জমা হচ্ছে খুব করে কিন্তু দারুন বৃষ্টি হবে এমন উপায় নেই। বাতাসের হৃদয়স্পর্শী আলিঙ্গন পেলে মেঘ বৃষ্টি হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের মেঘ বৃষ্টি হবে এমন বাতাস কই!

এই পৃথিবী থেকে যখন চলে যাবো তখন এমন করে এক সপ্তাহ গুনতে পারবো না। কেউ কেউ হয়তো এক মিনিট অথবা এক সেকেন্ড আগে টের পেতে থাকে তার বা তাদের জন্য আর পৃথিবীতে কোনো জায়গা নেই। তখন জীবনের শেষ এক মিনিট এক সপ্তাহ অথবা এক কোটি বছরের মতো অনুভবে আসতে থাকে হয়তো।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে  দুই ধরনের বন্ধুদের সাথে আমি ক্লাস করেছি। যারা বোরখা পরে এবং যারা পরে না। যারা বোরখা পরে কোনোদিন আমি তাদের মুখ দেখেনি, বোরখাছাড়া যদি কখনো তাদের সাথে আমার দেখা হয় আমি তাদের চিনতে পারবো না। যারা বোরখা পরেনি তাদের মুখে ছিল তীব্র আলো, ফলত তারাও যদি প্রকৃত চেহারা নিয়ে আমার সামনে আসে তাদেরকেও আমি চিনতে পারবো না। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। জেলখানাতেও প্রশান্তির ধারা নিয়ে আসা যায় কয়েদীর সচেতন পদক্ষেপে।

প্রত্যেক প্রশান্তি সংক্রামিত। আমরা প্রশান্তিকে সংক্রামিত করতে পারিনি। তা অবশ্যই আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের সত্যিকারের পরিচয় থেকে দূরে থাকার ব্যর্থতা।

মানুষের পরিচয় মানে ধর্ম পরিচয় নয়। ধর্ম মানুষের পরিচয় হতে পারে না। ধর্ম মানুষের প্রয়োজনের নাম। আমরা শীতকালে এক পোশাক পরি আবার গ্রীষ্মকালে আরেক পোশাক। পোশাক আমাদের প্রয়োজন। ধর্মও পোশাকের মতো এক প্রয়োজনীয় বিষয়। ধর্মকে শরীরের চামড়া করেছি বিধায় দিন দিন আমরা একে অন্য থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। যেমন আমার থেকে মিষ্টি অনেক দূরে আমিও মিষ্টি থেকে অনেক দূরে অথচ কত সুন্দর করে আমরা পাশাপাশি বসে আছি। তাকে বলতে পারছি না অন্য কোনো পৃথিবীতে আমাদের দেখা হবে সেখানে আমরা আবার একসাথে কয়েদী জীবনযাপন করবো অথবা আমি জল হলে তুমি হবা নদীর পাড়। বলতে না পারার কষ্ট বলতে পারার আনন্দের চেয়ে বেদনাদায়ক। অনেক বেদনা নিয়ে মানুষ মৃত্যুবরন করে বিধায় মানুষ আর পৃথিবীতে ফেরত আসতে চায়না। জেলখানায় কেউ দুইবার যেতে চেয়েছে এমন কথা ত শুনিনি।

আমার জেলখানার বন্ধুরা, তোমরা ভালো থেকো, তোমাদের সাথে এমন করে আর দেখা হবে না। অনেক দেখাদেখির পরও তোমাদের চিনতে পারিনি, আবার অনেক বছর পর তোমাদের সাথে দেখা হলে আমাকে তোমরা চিনবে বা আমি তোমাদের চিনবো বলে মনে হয় না। অচেনা মানুষকে কেউ চিনতে পেরেছে বলে কোনো পাঠশালায় পাঠ করিনি।

বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭

আব্বার কথা

আমার আব্বা প্রায়ই কই  "বাবারে, জিব্বার কাছ তেইক্কা অনেক কিছু হিকবার আছে, দাঁত জিব্বারে কত আঘাত করে, জিব্বা কিচ্ছু কই না, ব্যথা পেয়ে নিরলে কান্দে, দাঁত আস্তে আস্তে ফইরা যা, জিব্বা কিন্তু মরনের সময়ও মাইনসের লগে তাহে"

রবীন্দ্রনাথের আশ্রমে

এখন অনেক রাত। রাত আমার এতো ভালো লাগে কেন জানি না। বিষয়টি মানসিক। অবশ্যই সব ভালোবোধই মানসিক ব্যাপার। নতুবা পৃথিবীতে এতো রং থাকতে পর্নারং আমার ভালো লাগবে কেন।

ভালোলাগা পুরোটাই ভেতরকার ব্যাপার। শব্দশ্রবনও ভেতরকার ব্যাপার। কারন বাইরে অনেক শব্দ আছে আমি শুনতে পারি না কিন্তু কুকুর শুনে। বাইরে অনেক শব্দ আছে আমিও শুনি না কুকুরও শুনে না কিন্তু শব্দ যে আছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

রাত যে আমার এতো ভালো লাগে তার কারন হতে পারে রাতের বিচিত্র রং, রাতের নীরবতার বাহার। আমার কিন্তু সেই দিনের রাতের কথা খুব মনে পড়ছে।

দাদাটা আমাকে সারাটা ট্রেন আপ্যায়নের মধ্যে রাখলেন। বোলপুর স্টেশনে নেমে চা খাওয়ালেন, অনেক মজার মজার গল্প করলেন, তারপর আমার কাছ থেকে বিদায় নিলেন যখন আমি নিরাপদ সীমায় পৌঁছে গেলাম। আমার ত মনে হচ্ছিল সে একজন ফেরেশতা যে সহযোগিতা করার জন্য এসেছিল। কারন শিয়ালদা স্টেশনে ট্রেনের ভীড় দেখে রীতিমত ভয় পাচ্ছিলাম। হঠাৎ এক যুবা আসলো, এসে ট্রেনের ভেতরের অনেকটা জায়গা নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নিলো। তারপর বিভিন্ন মজার গল্প বলতে বলতে নিয়ে আসলো বোলপুর। আমি টেরই পেলাম না পাঁচ ঘন্টা আমি ট্রেনে ছিলাম। তাই দাদাটাকে আমি মানুষ ভাবতে পারলাম না। কারন মানুষ অনেক ব্যস্ত, মানুষ নিজের ভোগের বাইরে অন্য কিছুকে বিরক্তিকর মনে করে। মানুষ হলেও তার ভেতরে ফেরেশতা আছর করেছিল। মানুষের উপরে শুধু শয়তান আছর করবে? না। ফেরেশতাও মানুষের উপর আছর করে। মানুষ তখন হয়ে পড়ে ফেরেশতাগ্রস্থ।

তবে শান্তিনিকেতনের সেই মেয়েটির উপর নিশ্চিত ভূত আছর করেছিল। বলছি মেয়েটির কথা....

সাইকেল নিয়ে সকাল সকাল বের হলাম। আম্রকুঞ্জ দেখবো। সকাল বেলার আম্রকুঞ্জ সত্যিই মনোলোভা। যেন প্রশান্তি কবরের মতো শুয়ে থাকে আম্রকুঞ্জের পাতায় শাখায়। দেখছি আর ভাবছি, ভাবছি আর দেখছি। ভাবতে ভাবতে দেখতে দেখতে  সময় বয়ে যাচ্ছে। তারপর আরও সুন্দর দৃশ্য। বাচ্চারা গাছের নিচে গোল হয়ে পাঠ নিচ্ছে। আমি একটা গোলের কাছে নয় কাছাকাছি ঠাঁই নিলাম। আমার চোখে সানগ্লাস, মাথায় হেড, মুখে নীরবতা। পাঠ দিচ্ছেন এক ইয়াং লেডি।

ছোট বাচ্চা হঠাৎ বলে ওঠলো "কী দেখছেন?"

ইয়াং লেডি একটু আওয়াজ করেই বলে ওঠলো "মেয়ে দেখছে মেয়ে।"

আমি কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম। স্তব্ধ হলাম দুটি কারনে। এক, মেয়েটি কোনো ট্রমার মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠেছে অথচ সে বাচ্চাদের পাঠ দিচ্ছে। ভয়ঙ্কর! দুই, শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রনাথের এলাকা যেখানে পজেটিভ চিন্তাচর্চা হওয়া ফরজে আইন অথচ সেখানে মেয়েটি নেগেটিভ চিন্তা করছে।

মনে মনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ফোন দিলাম। ফোন দিয়ে বললাম, 'আপনি বোলপুরে শান্তিনিকেতন নামে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে না, বাশারকে ইনসান করার জন্য, আর আপনার এখানে এই অবস্থা ...'

রবীন্দ্রনাথের সাথে আলাপ শেষ করার সাথে সাথে দেখলাম এক পিচ্চি আমার সাইকেলের কাছে।

এসে বলে "আপনি কে? এখান থেকে চলে যান।"

আমি কিন্তু সত্যিই চলে যাই। কিন্তু ....। আমার সাথে সব বাচ্চারা চলে আসতে থাকে। ঐ মেয়ে আর কিছু বুঝে ওঠতে পারে নাই। মেয়েটি হয়তো ভাবছে আমি হিমিলনের বাঁশিওয়ালা। সাথে সাথে এক মুরুব্বি শিক্ষক নিয়ে আমার কাছে আসে। বাচ্চারা যেতে চাচ্ছে না। আমি বলছি তোমরা যাও, তোমাদের সাথে আরেকদিন আড্ডা দিবো। বাচ্চারা চলে গেলে আমি সানগ্লাস খুলে মেয়েটির চোখে চোখ রেখে বললাম,

"আমি চোখ দ্বারা দেখি না, চোখ দিয়ে দেখি, মুখ দ্বারা কথা বলি না, মুখ দিয়ে কথা বলি"