শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

কোটা আন্দোলন এবং জনগণের পথ

 আমি একটা কথা বলি শুনেন— নাও শুনতে পারেন— আমার কথা না শুনার শতভাগ অধিকার আপনার আছে। শিক্ষিত যুবক যুবতীদের  মধ্যে থেকে সরকার কতজনকে চাকরি দিতে পারে আপনি জানেন?  অবশ্যই জানেন। পাচ থেকে দশ পার্সেন্ট! সব ছেলেমেয়ে বেকার! বেকার ছেলেমেয়েদের চাকরি পাওয়ার অধিকার আছে— নতুবা রাষ্ট্র তাদের বেকার ভাতার ব্যবস্থা করবে। কই রাষ্ট্র তো বেকার ভাতার ব্যবস্থা করতে পারেনি!রাষ্ট্র ব্যবস্থা করেছে চোর ভাতার। সরকার প্রধানের ঘরে বসে ইন্দুর বেড়া কাডে— বেড়া কাডাকাডির শেষে সরকার প্রধান বুঝতে পারে ইন্দুরকে তাড়াতে হবে— সরকার প্রধানকে ঘুমে রেখে ইন্দুর যা খেলার তা খেলে যায়— ঠিক যেনো ছোট্ট কালের শেখা প্রবাদ— চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। চোর পালালে যেহেতু বুদ্ধি বাড়ে সেহেতু চোরকে পালাতে দেয়া উচিত এবং বুদ্ধিহীন আমাদের বুদ্ধি বাড়া দরকার। 


মেডিকেল সেবার নামে মানুষের স্বাস্থ্যের বারোটা বেজে যাচ্ছে — কৃষির আধুনিকায়নের নামে মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে— চাকরির নামে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণ জ্ঞান মুখস্থের কাবা শরীফে পরিনত হচ্ছে অথচ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত  বিশ্ব মননের প্রতীতী— তা নিয়ে আমাদের কোনো কথা হবে না— কথা হলেও তা বাতাস ভারী  করে তোলার মতো সক্ষমতা অর্জন করবে না জনাব— জনাব ব্যস্ত আছেন জনাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে— তিনি পুলিশ হবেন, ডিসি হবেন, মাস্টার হবেন, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হবেন, সাবরেজিস্টার হবেন আরও আরও সরকারি রাজস্ব থেকে টাকা নেয়া যায় এমন পোস্ট পদবি। 


এখন বলুন তো, বাংলাদেশের কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে তিনি কোনো দুর্নীতির সাথে যুক্ত না, বাংলাদেশের কোন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বলতে পারবে তার টুপির নিচে ঘুষের টাকা ছায়া নিতে আসেনি, বাংলাদেশের কোন ডিসি বলতে পারবে তিনি একেবারে পুজার্ঘ তুলসীপাতা, কোন মাস্টার বলতে পারবেন ছাত্রপড়ানোর লোভবানিজ্য তিনার মনে কাজ করে নাই, সাবরেজিস্টার অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কথা আর বললাম না— আমি না বললেও আপনারা বলুন— চাকর হওয়ার জন্যে আমাদের এতো লাফালাফি অথচ বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নাই, তা নিয়ে তো একটা দুখবোধও বাতাসকে কাপাতে পারেনি! একটা আন্তর্জাতিক মানের পত্রিকা আমরা দাড় করাতে পারেনি, আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি জিম্মি কতিপয় টেন্ডারবাজদের হাতে— কই তা নিয়ে তো কোনো সভা সেমিনার সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হলো বলে আশা জাগেনি!  


আমাদের চাকর হতে হবে এবং চাকর হয়ে শ্রমজীবী মানুষের ঘামে রক্তে অর্জিত রেমিট্যান্স বিদেশে পাচার করতে হবে এবং শ্রমজীবী মানুষ যারা রাষ্ট্রের অর্থনীতির রক্ত তারা যদি আমাদের 'স্যার' না ডাকে তাদেরকে অপমান করে সরকারি আমি আমার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রুম থেকে বের করে দিতে হবে। রোদের তাপে তাদের শরীর পুড়ে, পোড়া শরীরের ঘাম থেকে তিনাদের বেতন হয় ভাতা হয় অথচ তিনারা  থাকেন এসি বাড়িতে চড়েন এসি গাড়িতে বাজার করেন এসি মার্কেটে। 


বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা ভাষা আন্দোলন শতভাগ মানুষের প্রয়োজন নিয়ে কথা বলে— একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শতভাগ ( অল্প কিছু রাজাকার বাদে) মানুষের স্বার্থস্বপ্ন নিয়ে কথা বলে— এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শতভাগ মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কথা বলে— আজকে আমরা কত্ত ছোট্ট হয়ে আসছি— আমরা কথা বলি কেবল আমাদের চাকরি পাওয়ার স্বার্থ নিয়ে— কোটি কোটি মানুষের বোবাকান্না আমাদের মগজে আসবে না— আসতে পারেনা— কারণ বিবেক জাগ্রত করা বইগুলোতে ময়লার স্তুপ পড়ে গ্যাছে—আমাদের চোখ সেই পর্যন্ত যায় না— আমরা এখন সাধারণ জ্ঞানের হাফেজ! 


মাই ডিয়ার হাফেজ সাহেব, আপনার আশেপাশের ঘটনা মুখস্থ না করে শানে নুযূল জানার চেষ্টা করেন— মগজকে জাগ্রত করুন— ঠোঁট আর চোখকে বহুত পরিশ্রম দিয়ে ফেলছেন— এবার ব্রেইনরে ঘুম থেকে উঠান। 


কত ছেলে এখন গান গায়— চাকরিটা আজ চলে গ্যাছে বেলা শুনছো— বেলা শুনে কি করবে!  বেলারও তো চাকরি নাই— আছে কেবল ভাই বাবা বোনদের বকা— বেকার ছেলেকে তুই কেনো বিয়ে করবি বেলা!? বেলা এখন বেলা শেষের রাগিনী। আর তিনারা বাঘা বাঘিনী হয়ে ফেইসবুক কাপাই ফেলাচ্ছে! মনে রাখবা, এলিট আন্দোলন কখনো শ্রমজীবী মানুষের মন জয় করতে পারে না— যে আন্দোলন প্রতিবাদে শ্রমজীবী মানুষের সংযুক্তি থাকে না সেই আন্দোলন প্রতিবাদ প্রতিষ্ঠিত শয়তানির বিরুদ্ধে দাড়াতে পারেনা বরং প্রতিষ্ঠিত শয়তানিকে আরও শক্তিশালী করে। 


কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ তার প্রিয় অস্ত্রের ব্যবহার করেনি— করেছে কেবল মাথার ব্যবহার— মাথাকে ব্যবহার করতে শিখুন। আম মিডা না তিতা তা নিয়ে ঝগড়া করছেন, মাথা খুলে দেখুন, আপনার আম বাগান নিয়ে যাচ্ছে চোরা— চোরাকে থামান!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন