রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪

তুমিখোর

সিগারেট ঠোঁটের কোনে রেখে খেতে থাকি—

আগুন বাড়তে থাকে

সিগারেট কমতে থাকে 

তোমাকে ঠোঁটের কোনে রেখে খেতে থাকি—

আগুন কমতে থাকে

তুমি বাড়তে থাকে 


আমি না সিগারেটখোর 

না তুমিখোর 

আগুন পকেটে রেখে রাত কেটে হচ্ছি ভোর

শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

কোটা আন্দোলন এবং জনগণের পথ

 আমি একটা কথা বলি শুনেন— নাও শুনতে পারেন— আমার কথা না শুনার শতভাগ অধিকার আপনার আছে। শিক্ষিত যুবক যুবতীদের  মধ্যে থেকে সরকার কতজনকে চাকরি দিতে পারে আপনি জানেন?  অবশ্যই জানেন। পাচ থেকে দশ পার্সেন্ট! সব ছেলেমেয়ে বেকার! বেকার ছেলেমেয়েদের চাকরি পাওয়ার অধিকার আছে— নতুবা রাষ্ট্র তাদের বেকার ভাতার ব্যবস্থা করবে। কই রাষ্ট্র তো বেকার ভাতার ব্যবস্থা করতে পারেনি!রাষ্ট্র ব্যবস্থা করেছে চোর ভাতার। সরকার প্রধানের ঘরে বসে ইন্দুর বেড়া কাডে— বেড়া কাডাকাডির শেষে সরকার প্রধান বুঝতে পারে ইন্দুরকে তাড়াতে হবে— সরকার প্রধানকে ঘুমে রেখে ইন্দুর যা খেলার তা খেলে যায়— ঠিক যেনো ছোট্ট কালের শেখা প্রবাদ— চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। চোর পালালে যেহেতু বুদ্ধি বাড়ে সেহেতু চোরকে পালাতে দেয়া উচিত এবং বুদ্ধিহীন আমাদের বুদ্ধি বাড়া দরকার। 


মেডিকেল সেবার নামে মানুষের স্বাস্থ্যের বারোটা বেজে যাচ্ছে — কৃষির আধুনিকায়নের নামে মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে— চাকরির নামে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণ জ্ঞান মুখস্থের কাবা শরীফে পরিনত হচ্ছে অথচ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত  বিশ্ব মননের প্রতীতী— তা নিয়ে আমাদের কোনো কথা হবে না— কথা হলেও তা বাতাস ভারী  করে তোলার মতো সক্ষমতা অর্জন করবে না জনাব— জনাব ব্যস্ত আছেন জনাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে— তিনি পুলিশ হবেন, ডিসি হবেন, মাস্টার হবেন, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হবেন, সাবরেজিস্টার হবেন আরও আরও সরকারি রাজস্ব থেকে টাকা নেয়া যায় এমন পোস্ট পদবি। 


এখন বলুন তো, বাংলাদেশের কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে তিনি কোনো দুর্নীতির সাথে যুক্ত না, বাংলাদেশের কোন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বলতে পারবে তার টুপির নিচে ঘুষের টাকা ছায়া নিতে আসেনি, বাংলাদেশের কোন ডিসি বলতে পারবে তিনি একেবারে পুজার্ঘ তুলসীপাতা, কোন মাস্টার বলতে পারবেন ছাত্রপড়ানোর লোভবানিজ্য তিনার মনে কাজ করে নাই, সাবরেজিস্টার অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কথা আর বললাম না— আমি না বললেও আপনারা বলুন— চাকর হওয়ার জন্যে আমাদের এতো লাফালাফি অথচ বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নাই, তা নিয়ে তো একটা দুখবোধও বাতাসকে কাপাতে পারেনি! একটা আন্তর্জাতিক মানের পত্রিকা আমরা দাড় করাতে পারেনি, আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি জিম্মি কতিপয় টেন্ডারবাজদের হাতে— কই তা নিয়ে তো কোনো সভা সেমিনার সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হলো বলে আশা জাগেনি!  


আমাদের চাকর হতে হবে এবং চাকর হয়ে শ্রমজীবী মানুষের ঘামে রক্তে অর্জিত রেমিট্যান্স বিদেশে পাচার করতে হবে এবং শ্রমজীবী মানুষ যারা রাষ্ট্রের অর্থনীতির রক্ত তারা যদি আমাদের 'স্যার' না ডাকে তাদেরকে অপমান করে সরকারি আমি আমার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রুম থেকে বের করে দিতে হবে। রোদের তাপে তাদের শরীর পুড়ে, পোড়া শরীরের ঘাম থেকে তিনাদের বেতন হয় ভাতা হয় অথচ তিনারা  থাকেন এসি বাড়িতে চড়েন এসি গাড়িতে বাজার করেন এসি মার্কেটে। 


বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা ভাষা আন্দোলন শতভাগ মানুষের প্রয়োজন নিয়ে কথা বলে— একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শতভাগ ( অল্প কিছু রাজাকার বাদে) মানুষের স্বার্থস্বপ্ন নিয়ে কথা বলে— এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শতভাগ মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কথা বলে— আজকে আমরা কত্ত ছোট্ট হয়ে আসছি— আমরা কথা বলি কেবল আমাদের চাকরি পাওয়ার স্বার্থ নিয়ে— কোটি কোটি মানুষের বোবাকান্না আমাদের মগজে আসবে না— আসতে পারেনা— কারণ বিবেক জাগ্রত করা বইগুলোতে ময়লার স্তুপ পড়ে গ্যাছে—আমাদের চোখ সেই পর্যন্ত যায় না— আমরা এখন সাধারণ জ্ঞানের হাফেজ! 


মাই ডিয়ার হাফেজ সাহেব, আপনার আশেপাশের ঘটনা মুখস্থ না করে শানে নুযূল জানার চেষ্টা করেন— মগজকে জাগ্রত করুন— ঠোঁট আর চোখকে বহুত পরিশ্রম দিয়ে ফেলছেন— এবার ব্রেইনরে ঘুম থেকে উঠান। 


কত ছেলে এখন গান গায়— চাকরিটা আজ চলে গ্যাছে বেলা শুনছো— বেলা শুনে কি করবে!  বেলারও তো চাকরি নাই— আছে কেবল ভাই বাবা বোনদের বকা— বেকার ছেলেকে তুই কেনো বিয়ে করবি বেলা!? বেলা এখন বেলা শেষের রাগিনী। আর তিনারা বাঘা বাঘিনী হয়ে ফেইসবুক কাপাই ফেলাচ্ছে! মনে রাখবা, এলিট আন্দোলন কখনো শ্রমজীবী মানুষের মন জয় করতে পারে না— যে আন্দোলন প্রতিবাদে শ্রমজীবী মানুষের সংযুক্তি থাকে না সেই আন্দোলন প্রতিবাদ প্রতিষ্ঠিত শয়তানির বিরুদ্ধে দাড়াতে পারেনা বরং প্রতিষ্ঠিত শয়তানিকে আরও শক্তিশালী করে। 


কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ তার প্রিয় অস্ত্রের ব্যবহার করেনি— করেছে কেবল মাথার ব্যবহার— মাথাকে ব্যবহার করতে শিখুন। আম মিডা না তিতা তা নিয়ে ঝগড়া করছেন, মাথা খুলে দেখুন, আপনার আম বাগান নিয়ে যাচ্ছে চোরা— চোরাকে থামান!

শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪

ভাষার আকাশে উড়ছে পাখি

 বুরাকালে কনে ন হয় সতী 

পোয়াকালে কনে ন খায় লতি 


এটি চট্রগ্রামের একটি আঞ্চলিক প্রবাদ— বুরাকাল এবং পোয়াকাল দুটি সময়বিন্দু— এই সময়বিন্দু দুটি অনেকটা স্টেশনের মতো কাজ করে।


তাস দাবা পাশা— তিনটি সর্বনাশা। পোয়াবারো শব্দটির সাথে পাশা খেলার মানসিক সম্পর্ক আছে— লুডো খেলার ছক্কার মতো পাশাতেও আছে তিনটি গুটি। গুটিগুলো যখন চালা হয় সেটাকে বলা হয় দান। প্রতি দানে পাশা খেলায় তিনটি গুটি একসঙ্গে ফেলা হয়— প্রত্যেকটি গুটিতে ১,২,৫,৬ নাম্বার থাকে।  ছক্কা পড়লে গুটি বের হয় ঘর থেকে লুডো খেলাতে— পাশা খেলায় তিনটি গুটি মিলে ৯ উঠলো তো খেলা শুরু। পাশা খেলায় একের পোশাকি নাম পোয়া— সবচেয়ে বড় দান পোয়াবারো— ৬+৬+১=১৩— এটি সবচেয়ে দামি দান এবং দুর্লভও বটে। পোয়াবারো পাশা খেলায় সৌভাগ্যের দান হিসাবে মান্য করা হতো এবং হয়।


এখনো অনেক সম্প্রদায়ের কাছে ১৩ সংখ্যাটি সংকট সংকেত সংখ্যা হিসাবে ঘৃণা করা হয় এবং পরিহার করতে পারলে যেনো ভালো হয় এমন একটা ভাবনোটিশ দেখা যায়। তবে সমগ্র ভারতবর্ষের কাছে ১৩ সংখ্যাটি মোটেও অশুভ নয় বরং বিপুল সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে ধরা হয়।


সুতরাং পোয়াকাল মানে সৌভাগ্যের কাল— আবার পোয়াতি মানে গর্ভবতী— পোয়াকাল মানে গর্ভকালীন সময়।


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক জায়গায় পোয়াকাল মানে গর্ভকালীন সময়কে বুঝিয়ে থাকে। চট্রগ্রামে পো মানে পুত্র— পোয়ার সংক্ষিপ্ত রূপ। পোয়া মাছ মানে কিন্তু পুত্র মাছ না। পোয়া মাছ ইজ পোয়া মাছ— পোয়া মাছ( pama pama) বাংলাদেশের স্বাদু পানির মাছ— অনেকে এটিকে পামা,কই ভোলা বা পোয়া বলে ডাকে— পোয়া মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি থাকে— পোয়া মাছের ওমেগা-৩ নামক ফ্যাটি এসিড হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী— কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে—হৃদরোগে আক্রান্ত ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এ মাছ খুবই উপকারী।


বড়,বড়ো= অভিজাত, বিশাল। আবার বড়ো মানে  খারাপ। বড়োকে চট্রগ্রাম বিভাগের মানুষ বলে বুরা।  বুরা মানে জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে অবস্থান করছেন এমন কর্মক্ষম অথবা কর্ম অক্ষম মানুষ— বুরার স্ত্রীলিঙ্গ বুরি/বুড়ি অথবা বুন্নি। বুরাবুন্নি খুবই জনপ্রিয় শব্দ—


বুড়ি হইলাম তোর কারণে

পরানের বান্ধব রে

বুড়ি হইলাম তোর কারণে

পরানের বান্ধব রে

বুড়ি হইলাম তোর কারণে


বুরা শব্দটি কিশোরগঞ্জ নরসিংদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে ভালোর বিপরীত শব্দার্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। ভালোকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের মানুষ বলে 'বালা'।  


না হাইয়্যা যাইস না

বালা বুরা যা আছে তা দিয়া হাইয়্যা যাইস।


অভিধানে বালা অর্থ যুবতী= বাল+আ। বালা সংস্কৃত শব্দ। হিন্দিতে বাল, বাংলায় চুল। আ+বাল= আবাল। আবালবৃদ্ধবনিতা খুবই কানপ্রিয় মুখপ্রিয় শব্দ। আবাল সাধিত শব্দ— যার এখনো ভালো করে চুল গজায়নি এমন— পজিটিভ অর্থে আবাল মানে এমন বালক যার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা জন্মায়নি— তুচ্ছতাচ্ছিল্য অর্থেও আবাল শব্দটি বাংলায় ব্যবহার হয়ে থাকে যেখানে আবাল মানে ইঁচড়েপাকার চেয়েও ভয়ঙ্কর। ইচড়েপাকাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের মানুষ বলে বাল ফাকনা। হাতের বালা মানে একপ্রকার অলঙ্কার যা বালারা বা কন্যারা হাতে পরিধান করে থাকে সাধারণত।


আমি ত বালা না 

বালা লইয়া থাইক ক।


এখানে কিন্তু গীতিকার মাহবুব শাহ বলে নাই— হে সুন্দরী আমি কিন্তু তোমার হাতের অলঙ্কার না— তুমি অলঙ্কার নিয়ে থেকো। এখানে গীতিকার অভিমানের অভিযোগ দিয়েছেন যে আমি খারাপ বা বুরা, সুতরাং তুমি ভালো নিয়ে থাকো। 


আরেকটি কথা,লতি যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে বলে লতা, কচুর লতা খুবই ভালো খাবার— হাড় শক্ত করে— চুলপড়া রোধ করে— কুচুর লতিতে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশের পরিমান খুব বেশি— যা খাবার হজমে সাহায্য করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কচুর লতিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি আছে— যা সংক্রামক রোগের আক্রমন থেকে রক্ষা করে। 


কচুকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিশোরগঞ্জ ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষ এবং নরসিংদীর কিছু অংশে 'কুছু' বলে। কুছু আবার অল্প অর্থেও নিকট অর্থে ক্ষুদ্র অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 


টেনশন করিস না— হে তোর কুছুও ছিরতে পারবো না।

বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪

কথার পাহাড় না শুনতে

খামখেয়ালি সভায় তারে ডাকি

তারে ডাকি যারে আমি পাইনা 

তার মনে আমার বাড়ি 

তার চোখে আমার আয়না


গভীর রাতে ঘুমের সাথে যারে আমি আকি

তার কন্ঠে আমার কথা 

তার শরীরভরা জলের স্রোত

হিজল পাতায় লুকায় মুখ 

কথা সে তো কয়না


তার শরীরঘেরা দুর্গপ্রাচীর

ঢুকতে আমায় দেয়না

ইচ্ছে করে জানতে তাকে

জানতে পারলে লাগতো ভালো—

তার অজুহাত আর বায়না


মাঝেমাঝে পাখির চোখে 

তারে আমি দেখি

নীলাদ্রি হাসির ছবি মিষ্টিমাখা পাখি


তার ছায়ার মাঝে জমা একটা মায়ারাখা রোদ

গান হবে 

বাজনা হবে 

বাজবে যখন সরোদ 

কালীচোখে সে যেনো এক আশীর্বাদের ক্রোধ


রোজ আলাপে— গোপন প্রলাপ

ব্যাকুল হই যার গন্ধে

নাদেখা তার চলাফেরা— ভাবনা ভাবের ছন্দে

বাজতে থাকে দূর তনয়া আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে

মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪

রসিক জানে জলের কথা

সঙ্গ পেলে রঙ্গ করি 

ঘুড়ি পেলে বাতাস 

জল পেলে মাছ হয়ে 

বানাই শখের আবাস


সখী পেলে সখা হয়ে 

খেমটা তালের ছন্দ লয়ে 

সুরের বারোমাস 

মাঠের পরে মাঠ পেলে 

রাখাল হয়ে গরুর পালে

রাধাঠোটে রসিক হয়ে করি কৃষ্ণবাস


উদার নদী আকাশ পেলে 

জলের মতো শরীর নিয়ে

করি আমিষ চাষ


প্রেমিক হলে সব ভুলে যাও 

কথার পাহাড় প্লিজ থামাও 

নেমে আসো আমার ঘরে

তোমার ঘরে আমারে নামাও