মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৯

চাকরি মানে সেবা

চাকরি মানে খেলার মাঠ নয় যে খেলতে নামলেন আর সময়ের দিকে তাকাতে থাকবেন। চাকরি মানে সেবা। সেবা করার কোনো বয়স থাকতে পারে না। কারো মনে হলো চল্লিশ বছর বয়সে চাকরি করবে মানে সেবা করবে, এক‌টি কল্যানমূলক রাষ্ট্রে সেই ব্যবস্থাও থাকা আবশ্যক। পৃথিবীর কোথাও কী আছে এটা দেখা খুব জরুরী নয়, পৃথিবীর কোথাও কী আমরা রপ্তানি করবো এটা দেখার বিষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই, এই বাংলায় আছে, আমরা তাঁর আদর্শ পৃথিবীর অন্য দেশে রপ্তানি করতে পারি এবং করেছি। এই লেংদেয়া বয়সীনীতি জাতিকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তুলে, মানসিকভাবে দুর্বল জাতি উন্নত রাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারে না। সাহসিক মানসিকতাও একটি জাতির বিশাল সম্পদ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সাহসের চিহ্নসূচক।

এক‌টি কথা প্রচলিত আছে। আর তাহলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া মেধার দিক থেকে তৃতীয় নাম্বার ছাত্রটি হয় রাজনীতিবিদ, দ্বিতীয় নাম্বার ছাত্রটি হয় আমলা, আর প্রথম নাম্বার ছাত্রটি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রত্যেকেই রাষ্ট্রের সেবার সাথে জড়িত। রাজনীতিবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষক হওয়ার ব্যাপারে কোনো বয়সফ্রেম নেই। আমলাতান্ত্রিক সেবার সাথে মানে চাকরির পাওয়ার ব্যাপারে বয়সফ্রেম থাকবে কেন!?

চাকরি হলো পোশাক যা মানুষের সামাজিক মর্যাদার সাথে জড়িত, সামাজিক মর্যাদা না থাকলে মানুষ মারা যায় না কিন্তু মানুষকে বেঁচে থাকতে গেলে সামাজিক মর্যাদার প্রয়োজন হয়। সামাজিক মর্যাদার বিষয়টি নিশ্চিতকরন একটি রাষ্ট্রের প্রাথমিক কয়েকটি কাজের এক‌টি। যে জাতি যত বেশি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন সেই জাতি তত বেশি উন্নত। উন্নত মানে ব্রিজ কালভার্ট নির্মান নয়। ব্রিজ কালভার্ট যদি মানসিক প্রশান্তির কারন না হয় তাহলে তা অবনতির নামান্তর।
ত্রিশ বছর পর কোনো স্টুডেন্ট আর স্টুডেন্ট থাকে না। ত্রিশ বছরের পর কোনো স্টুডেন্টের সার্টিফিকেট আর কোনো কাজে আসে না। চাকরি একজন স্টুডেন্ট না-ই পেতে পারে, সবাই শুধু  চাকরি করবে এটিও একটি জাতির জন্য আশাব্যঞ্জক কথাপ্রবাহ নয় কিন্তু ....ত্রিশ বছরের পর একজন স্টুডেন্টের সার্টিফিকেট মৃত বলে ঘোষিত হবে তা মেনে নেওয়ার নয়। ঘর বড় না করে ঘরের বড় মানুষদের ঘর থেকে বের করে দেয়ার নীতি কখনো সুস্থ সাবলীল হতে পারে না।

কবিতা লিখে সিনেমা নির্মান করেও এক‌টি জাতির উপকার করা যায়। কারো মনে হতে পারে পুলিশ হয়ে এক‌টি জাতির উপকার করবে। কারো মনে হতে পারে পলান সরকার হয়ে এক‌টি জাতির উপকার করবে। বয়সফ্রেম উপকার করার পথে অন্তরায় হয়ে কাজ করতে পারে না।

জনগন যদি বলতে শুরু করেন রাষ্ট্র পরিচালনা অনেক কঠিন কাজ। রাষ্ট্র পরিচালকের শুধু অভিজ্ঞতা থাকলে হবে না বয়সও থাকতে হবে, আই মিন বয়সের এক‌টি সীমানা থাকতে হবে। তাহলে?তাহলে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ন রাজনীতিবিদদের হারাতে পারি অথবা  বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে পারি। জনগন তা করবে না। কারন জনগন রাজনীতিবিদদের কাছে দেশটা বলতে গেলে বাগি দিয়ে দিছেন!

চাকরির বয়সসীমা বেঁধে দেয়ার মধ্যে এক‌টি চালাকি রয়েছে। বয়সসীমার ভেতরে যারা চাকরি পায় না তারা সরকারি খাতায় বেকার। বেকারদের নিয়ে সরকারের যত টেনশন। গরীব পরিবারের সন্তান হয় বিদেশে গিয়ে টাকা পাঠালে পরিবারের লাভ নতুবা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একা একা বসবাস করলে পরিবারের লাভ। অর্থাৎ পরিবার চায় সন্তান এক‌টি অর্থকরী ফসল হয়ে উঠুক। সন্তান যদি অর্থকরী ফসল না হতে পারে তখন পরিবার চায় সন্তানটি অন্তত নিজের মতো থাকুক ভিক্ষাবৃত্তি করে হলেও। গরীব রাষ্ট্রের চিন্তাও ঠিক গরীব পরিবারটির মতো।

একবার ভেবে দেখুন ত বয়সসীমা যদি একটি মানুষের কার্যদক্ষতার সীমা হয় তাহলে আমরা পৃথিবীর কত কত বড় বড় মানুষদের কার্যসেবা থেকে বঞ্চিত হতাম। আল্লা যদি মনে করতেন ত্রিশের পর একজন মানুষ প্রায় সেবা দেয়ার উপযোগ হারিয়ে ফেলে। তাহলে কী হতো!? কী হতো জানি না, তবে আমরা কুরান শরীফ নাও পেতে পারতাম!

জনগন কোনো এক সাংবিধানিক সত্ত্বাকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। কেন দিয়েছে? দিয়েছে কারন জনগন ভালো থাকতে চায়।

সাংবিধানিক সত্ত্বা কখনো নিজেকে জনগনের মালিক মনে করা ঠিক নয়। জনগন সাংবিধানিক সত্ত্বার কামলা না। জনগন নিজের প্রয়োজনে সংবিধান নির্মান করে আবার নিজের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে। সাংবিধানিক সত্ত্বা যখন ক্ষমতার লোভে জনগনকে ধোঁকা দিতে চায় জনগন তা উপলব্ধি করার যথেষ্ট জ্ঞান প্রজ্ঞা রাখে। কারন বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে স্বাধীন হয়েছে অনেক আগেই, এখন বাংলাদেশ যথেষ্ট সাবালক। সাবালক বাংলাদেশকে পরিচালনা করতে গিয়ে নাবালকের মতো কাজ করবেন তা কখনো সময় মেনে নিবে না। সময় কখনো লজিক দেখায় না, ম্যাজিক দেখায়। সময়ের ম্যাজিক দেখার আগে আমাদেরকে ন্যায় নিষ্ঠাবান দায়িত্বশীল ও সত্যবাক হতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পৃথিবী থেকে চলে যাবার পর বাংলাদেশটা যেন তাদের কাছে শিশুখেলনা আর তারা তা দিয়ে ঝুনঝুনি বানিয়ে আনন্দ খেলছে। দেশটাকে নিজের বগলের সম্পত্তি না ভেবে জনগনের আমানত ভাবতে শিখুন। নতুবা কবি বলে উঠতে পারে "ভাত দে হারামজাদা নতুবা মানচিত্র খাব।" ভাতের ধারনা কোনো  সময় মৌলিক চাহিদা আবার কোনো সময় মৌলিক মর্যাদার দিকে ইঙ্গিত করে।

একজন ছাত্রের প্রথম অধিকার পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরি পাওয়ার অধিকার। তারপরও জীবনানন্দ দাশ কেন লিখবে "পৃথিবীতে নেই কোনো বিশুদ্ধ চাকরি।" পৃথিবীতে বিশুদ্ধ চাকরি নাই, কারন পৃথিবীর গভীর থেকে গভীরতম অসুখ। সিংহাসন চালায় শিয়াল অথচ সিংহাসনে বসার কথা ছিল সিংহের। কর্নেল তাহের শেষ পর্যন্ত শিয়ালের সাথে পেরে উঠতে পারেননি। তাইতো এখনো লক্ষ লক্ষ বেকার যুব সমাজ। লাখ লাখ বেকার স্টুডেন্ট হতাশার জোয়াল কাঁধে গরু হয়ে ঘাস খাবে আর আপনি কনট্রাক্টর হয়ে নতুন নতুন গোয়ালঘর তৈরি করবেন আর বলবেন দেশ উন্নত হচ্ছে। ভুল। সব ভুল। আপনার কথায় যথেষ্ট ঝাল থাকলেও তা জনগনের জিহ্বা পর্যন্ত পৌঁছবে না।

চাকরি ইজ চাকরি। দেশকে দেশের মানুষকে দেশের ভৌগলিক অবস্থানকে কল্যানমূলক করে রাখার জন্য দেশের প্রতিটি জনগনকে চাকরের মতো আন্তরিকভাবে কাজ করা প্রতিটি পদক্ষেপই চাকরি। চাকরিকে কোটটাই অফিস আদালত, ইউনিফর্ম ইউনিভার্সিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলা খুব আদিম পশ্চাৎপদ চিন্তাভাবনা।

সৈয়দ শামসুল হক প্রায় নয়টার ভেতরে স্নান খাওয়া শেষ করে অফিসে যেতেন। তাঁর অফিস কোথায় জানেন? তার ফ্লাটের আরেকটি রুম, আরেকটি রুমের এক‌টি টেবিল যেখানে তিনি পড়াশোনা ও লেখালেখি করতেন। সৈয়দ শামসুল হকের কাছে পড়াশোনা ও লেখালেখি করাটা ছিল চাকরি। তাই আমাদের প্রত্যেকের চাকরি করতে হবে এবং রাষ্ট্রকে আমাদেরকে চাকরি করার সমস্ত ব্যবস্থা করে দিতে হবে, তার জন্য অবশ্যই কোনো বয়সফ্রেম থাকবে না। কারন আমরা কাজী নজরুল ইসলামের "যৌবনের গান"  প্রবন্ধটি পড়েছি, আমরা জানি যৌবন আর বার্ধক্যের পার্থক্য কোথায় কেমন!?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন