শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯

শ্রমিকের রাজা

রাজ্যে নতুন আইন হলো। এক রাজ্যে। অবশ্যই সেখানে এক রাজা ছিল। একদা এক রাজা ছিলেন। রাজ্যের আয়তন খুবই ছোট ছিল। এক লক্ষ সাত চল্লিশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মতো। জনসংখ্যা ছিল খুবই কম। মাত্র বিশ কোটি। যেহেতু আয়তন ও জনসংখ্যা খুবই কম ছিল সেইকারনে প্রজাদের খাবার রাজকোষ থেকেই দেয়া হতো।

রাজা নতুন আইন করেন। আইনে বলা আছে সকালের নাস্তা প্রজাদের দেয়া হবে না। রাজা মনে করেছিলেন তিন বেলার খাবার খেয়ে প্রজারা শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান হয়ে যেতে পারে যা তার আসনের জন্য হুমকি স্বরূপ। কিন্তু রাজা প্রেসব্রিফিং করে জানালেন অন্য কথা। রাজা নাস্তা বন্ধ করার ব্যাপারে যে কথা জানালেন তা আপনাদের না জানলেও চলবে। আমাদের মসজিদের হুজুর বলতেন "সব কথা জানতে নেয়, সব কথা বলতে নেয়।"

কেউ কেউ রাজার নতুন আইনকে ভগবানের আইন বলে মেনে নিলেন। কেউ কেউ মানবে না এটা স্বাভাবিক। যারা মানল না তারা শুরু করে মিটিং মিছিল অনশন। তারা সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। রাজ্যের বাইরে রাজা যেখানে চা খেতে যান সেই চায়ের দোকানেও তারা সকালের নাস্তার দাবিতে চিকা মেরে দেয়। পোস্টার ভ্যানগার্ডের প্রচার প্রচারনা ত আছেই। রাজা পড়লেন মহা বিপাকে। সমস্যা নেই। আইডিয়াবাজ লোকেরা ত রাজার পাশে আছেনই। রাজার পাশের আইডিয়াবাজরা আবার তিন বেলা নিয়ম করে খাবার খান। সুস্থ সাবলীল তাজা খাবার। ফলে তাদের আইডিয়াও হবে বা হয় টাইম ডি ফিক্টু।

রাজা ঘোষনা দিলেন, ঘোষনা দিলেন সকাল বেলার নাস্তা দেয়া হবে। রাজার আইনকে যারা ভগবানের আদেশ বলে মনে করেন আগের মতোই খুশি হলেন। যারা রাজার আইনকে ভগবানের আদেশ মনে করেন না তারা একটু বেশি খুশি হলেন। খুশির প্রমান হিসাবে তারা আনন্দ মিছিল বের করেন, লাইভে আসেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

নাস্তা নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ায় প্রজারা। রাজাও লাইনে দাঁড় করায় সিভিল লাঠিয়াল। সিভিল লাঠিয়াল নিয়ম করে নানা অজুহাতে প্রজাদের উপর লাঠিচার্জ করে। এইভাবে কয়েকদিন চলতে থাকে। কেউ কেউ আহত হয়ে খাবার নিতে আসতে পারে না কয়েকদিন। কেউ কেউ ভয় পেয়ে খাবার নিতে আসতে পারে না কয়েক বছর।

মানুষ টিকে থাকতে পারে বলে মানুষ টিকে আছে। প্রজারাও খাবার সংগ্রহের নতুন পথ আবিষ্কার করে। তারা বাড়ির পাশের জমিজমা চাষবাস শুরু করে। তবে রাজকোষ থেকে দূরে চলে আসে। রাজকোষ চলে যায় একচেটিয়া সিভিল লাঠিয়ালদের হাতে। তবে রাজকোষ প্রজাদের কাছ থেকে দূরে যায়নি। বিভিন্ন উপায়ে রাজকোষ পূর্ন হয় প্রজাদের ঘামের বিন্দু বিন্দু জলে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন