সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২

সন্তান যেনো থাকে জোছনা রাতে

 প্রশিক্ষণ। মানসিক প্রস্তুতি। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। শারীরিক সক্ষমতা। তারপর মা হয়ে উঠার,বাবা বনে যাওয়ার চেষ্টা করতে হয়। তবে এই কথা সত্য যে জঙ্গলে গাছ আপনি আপনি বড় হয়ে উঠে, মঙ্গলে গাছের আবাদ করতে অবশ্যই চেষ্টা কিংবা প্রচেষ্টা লাগবে।


একটা সময় পরিবারগুলো ছিলো জঙ্গলের মতো প্রাকৃতিক— বলতে গেলে যৌথখামার। নানানানি মাসিপিসি দাদাদাদি সবাই মিলে সন্তানের দেখভালের ভার নিতো— সন্তান বড় হয়ে উঠতো আনন্দে। আর এখনকার সন্তানের মা ব্যস্ত, বাবা ব্যস্ত, নানানানি দাদাদাদি মাসিপিসি হয় ব্যস্ত নয় অসুস্থ। ফলে সন্তানের আনন্দ বাস্তবতা নির্মাণ হচ্ছে মোবাইলে— কার্টুনের মতো বেড়ে উঠছে তারা, তারার কবিতা শুনে মোবাইলে। কয়েকবছর পর এই কার্টুন জেনারেশন যখন সমাজে ফাংশন করতে শুরু করবে সমাজে শাসনের বদলে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা— দুষ্টু নয়, নষ্ট আচরণ ভর করবে তাদের মনে— মনন বলতে তাদের কিছু থাকবে কিনা দয়াল মালুম হে।


আপনি ভাবছেন সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো করে মানে পৃথিবী উপযোগী করে গড়ে নেয়ার জন্যে আপনি একাই যথেষ্ট। নো। কখনোই না। বাচ্চারা আপনার কাছ থেকে যা শিখবে আপনা থেকে তারচেয়েও অনেক বেশি শিখে। আপনা বলতে বাচ্চার মানসিকতার প্রতিবেশ। মানসিকতার প্রতিবেশ বলতে তার আচরনবিধির পারিপার্শ্বিক জায়গা। তাই আপনার সন্তান একটি সুন্দর পরিবেশ পাবে এটাই আপনার  সন্তানের প্রধান প্রাপ্তি— ব্যাংকের ডিপোজিট বা আপনার জমানো কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নয়। 


ধরুন আপনার অনেক টাকা আছে  তাহলে সন্তানকে নিয়ে ভ্রমণ করুন— তাহলে সন্তানের অহংকার মোটা না হয়ে হৃদয় মোটা বা বড় হবে উদার হবে— হৃদয় উদার না হলে সামাজিক সত্যের কাছে পরাস্ত হতে হয়,সত্য নির্মানের ক্ষমতা থাকে না।


ভ্রমন করা মানে কিন্তু বাড়ির পাশের রেস্টুরেন্টে গিয়ে পিৎজা বার্গার স্যান্ডউইচ মার্কা ছবি তুলে স্যাটেলাইট ভরাট করে ফেলা নয়— ভ্রমণ করা মানে নিজের অভিজ্ঞতার বাইরে নতুন কোনো কালচারের সাথে পরিচিত হওয়া। সব নদীতেই সব সাগরেই জল থাকে কিন্তু সব জলের বয়ে চলার গল্প বয়ে চলার গতিপথ ভিন্ন— ভিন্ন গল্পের সাথে ভিন্ন গতিপথের সাথে আপন মনের বিবাহ করানোর নাম ভ্রমণ— আর ভ্রমণখরচ হলো সেই বিবাহের কাবিন। 


একদিন ঢাকার এক দামি রেস্টুরেন্টে যাই। তখন রাত বারোটা ত্রিশ মিনিট প্রায়। আমাদের খাবার শুরু হওয়ার প্রায় দশ পনেরো মিনিট পরে একটি পরিবার আসে। এখনকার পরিবার মানে দুজন মিলে বিয়ে তিনজন মিলে পরিবার। দুজনের সাথে ছয় সাত বছরের একটি সন্তান আসে। যে সময়টা সন্তানের ঘুমানোর দরকার সেই সময়টাই সন্তান খেতে আসছে। এই সন্তান যখন বড় হবে তখন সে রাতে ঘুমাতে যাবে না সকাল সকাল— সকালে ঘুমাতে যাবে— ফলে শারীরিক মানসিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে বাধ্য।


বাচ্চা একটি চিকেন ফ্রাই খাচ্ছে। খাওয়ার মাঝখানে সি-ফিশের ফ্রাই আসে। তখন তার নজর সি-ফিশের দিকে। সি ফিশ অল্প খেয়ে বলে "খাবো খাবো না, তিতা তিতা।" বাচ্চা-বয়স থেকে সে ইগনোর করা শিখছে— প্রাপ্ত বয়স্ক সময়ে যা তার মধ্যে ইগো ইগনোর নির্মান করবে, তুলনা করা শিখবে— প্রাচুর্যের তুলনা হোক ও হোক দারিদ্র্যের তুলনা— তারা ভয়ঙ্কর যা মানুষকে নিয়ন্ত্রণহীন করে তুলে— মানুষ যখন তার মেজাজের কাছে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে তখন তার মোড তিনশো ষাট ডিগ্রি অ্যাংগেলে সোয়িং করে— প্রথমে নিজের প্রতি অবিশ্বাস, পরে নিজের পারিপার্শ্বিকতার উপর অনাথবন্ধু সম্পর্ক গড়ে উঠে।


বাচ্চাটি খাচ্ছে আর কার্টুন দেখছে। তার মাবাবা তাতে বিশাল খুশিতে ☺ বাগবাকুম। কারন তাদের হানিমুনে বাচ্চাটি বিরক্ত করছে না— আরে ভাই, প্রশিক্ষণের সময় যে সন্তান বিরক্ত করে না প্রয়োজনের সময় সেই সন্তানই আপনাকে বিবস্ত্র করবে। তার মানে এমন কথা বলছি না, কেয়ারিং করতে করতে আপনি নিজেই বাচ্চার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হয়ে উঠেন। 


সাইকেল অব ডেভলপমেন্ট বলে, ১৮ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত থিংকিং স্টেজ— এই সময়ে বাচ্চা সন্তান শিখে কিভাবে ভাবতে হয়— এই সময় অভিভাবকদের অতিরিক্ত কেয়ারিং করার ফলে অনেক বাচ্চা ভাবার অবকাশ হারায়— ফলে থিংকিং স্টেজে ব্লক তৈরি হয় যা হার্ট ব্লকের চেয়ে ভয়ঙ্কর। একটা কথা খুব করে মনে রাখা প্রয়োজন— সন্তানের জন্যে সব করে দেওয়া মানে সন্তানের ভবিষ্যৎ পথে একটি বিরাট গর্ত নির্মান করে দেওয়া যা অতিক্রম করার শিক্ষা মায়ের আদুরে বাবার প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠা সন্তানের থাকে না। 


সন্তানকে ছেড়ে দিন। প্রত্যেকটা বয়সের একটা চ্যালেঞ্জ থাকে, তাকে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে দিন।কখনো জিতবে কখনো হারবে। তাতে অসুবিধা নেই। তাতে বিশাল সুবিধা হলো আপনার ছায়ায় আস্তে আস্তে তার মেরুদণ্ড শক্ত হয়ে উঠবে— জীবন সংগ্রামের উঁচুনিচু পাহাড় জয় করতে শিখবে। সন্তানকে আকাশের ঘুড়ি না মনে করে হাতঘড়ি মনে করতে পারেন— যার কাটা আপন গতিতে চলে— যার নিজস্ব ব্যাটারি বা মতামত রয়েছে কিন্তু আপনার হাতে বা আপনার চোখের সামনে থাকে। 


সন্তানকে আপনি একটি অলঙ্কারের সাথে পরিচিত করাতে পারেন। অলঙ্কারটি বাজারে কিনতে পাওয়ার যায় না— পাওয়া যায় নৈতিকতার অভিধানে— অলঙ্কারটির নাম 'সত্যকথা' বলা। সন্তান যেনো আপনার শাষনের ভয়ে আপনার সাথে মিথ্যা না বলে। প্রথমে শাষনের ভয়ে মিথ্যা বললে পরবর্তীতে লাভের স্বার্থে মিথ্যা বলবে। মা হিসাবে আপনি ভয়ের ফায়দা নিবেন না,মানে সন্তানকে ঘুম পাড়ানির মাসিপিসির গল্প বলুন কিন্তু অন্ধকার থেকে জ্বিনভূত ডেকে আনবেন না অথবা সন্তান ভয় পায় এমন কোনো বিষয় তার মনের সামনে বার বার ডেকে না এনে  বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার দিকে সন্তানকে কনভার্ট করানোর সহজিয়া উপায় খুঁজে বের করা উত্তম। 


ভয় দেখিয়ে সন্তানকে পৃথিবীর সাথে পরিচিত করাতে  পারেন, আবার প্রেমের মাধ্যমেও তাকে পৃথিবীর সাথে পরিচিত করাতে পারেন— ইটস আপ টু ইউ। ভয়ের ভবিষ্যৎ ভালো না,প্রেমের ত্রিকাল আরামদায়ক এবং ফলদায়ক— ভয় আর প্রেমের মাঝখানে অবস্থান করে উচ্ছ্বাস— সন্তান যেনো উচ্ছ্বসিত থাকে দারুণভাবে— প্রতিযোগিতা করবে— কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে না— কেবল সময়ের সাথে— ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উত্থান পতন রয়েছে, সময়ের তা নেই। সন্তান যেনো হয়ে উঠে সময়ের সন্তান।

1 টি মন্তব্য:

  1. এই তো দেখছি সাদাত হোসাইন লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে 😅😅পাত্তা তোরা কোথাও পাস না। একটা আস্ত ইসলামি শুয়োরের দল ধান্দাবাজি করে ধরা পড়ে পালানো ছাড়া কিছুই তোদের করার নেই 😅😅😅 আর কয়েকটা ফেক প্রোফাইল খোল শুয়োরের বাচ্চা গুলো।

    উত্তরমুছুন