মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১

মিশন এক্সট্রিম জয় ভীম নোনাজলের কাব্য

 মিশন এক্সট্রিম। একটি সিনেমার নাম। পরিচালক ফয়সাল আহমেদ। রচয়িতা সানী সানোয়ার। চিত্রনাট্যকার সানী সারোয়ার। এই সিনেমার মধ্যে দিয়ে মিস বাংলাদেশ জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশীর চলচ্চিত্রাঙ্গনে অভিষেক ঘটে। এই সিনেমায় আমরা জিয়াদুলকে দেখতে পাই। জিয়াদুলের পারিবারিক নাম সৈয়দ নাজমুস সাকিব। সাকিব জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র। এখন একটি কলেজের ইংরেজির শিক্ষক— তার মিমিক করার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে— শুনতে পেয়েছিলাম ভাইব্রাদারদের মাধ্যমে। এই সিনেমায় জিয়াদুল বিপদগামী মতবাদধারী যুবক। সিনেমায় সে বেশি সময় বাচতে পারেনি। তার মৃত্যু হয় পুলিশের গুলিতে। 


সানী সারোয়ার পুলিশ মানুষ। এসপি, অপারেশন, এন্টি টেরোরিজম ইউনিট। এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) হলো উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে গঠিত বাংলাদেশ পুলিশের একটি শাখা। বাংলাদেশে কাউন্টার টেরোরিজমের ন্যাশনাল ইউনিট হিসেবে এটির কাজ করার কথা— ২০১৭ সালে ২০ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশের এই ইউনিটটির সৃষ্টি। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এই ইউনিটের  কার্যধারা শুরু।


ঢাকা এ্যাটাক কিংবা মিশন এক্সট্রিম মূলত এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের কামকাজের পর্দাভিত্তিক তরল আস্ফালন। অর্থাৎ জঙ্গি তৎপর সময়ে পুলিশের মহান মহান ভূমিকার কথা ত্যাগের কথা অভিনেতা অভিনেত্রী তাদের টেস্ট বেস্ট চেষ্টার মাধ্যমে স্পর্শ স্পষ্ট করে তুলেছে প্রায়। সাউন্ড টেস্ট, কালার স্ট্রিমিং, ক্যামেরার প্রয়োগ পরিধি ভালো লাগার মতো। কিন্তু। তামিল সিনেমা 'জয় ভীম'— টি জে জ্ঞানাভেল পরিচালিত, সুরিয়া ও জ্যোতিকা সাধনার প্রযোজনায় 'জয় ভীম' দেখার পর মিশন এক্সট্রিম দেখার আর ইচ্ছাপুলক মনচোখে জাগে না। 


কথাটি কেনো বললাম? 

ভাইরে, পুলিশিং এক জিনিস আর সিনেমা নির্মান আরেক টপিক। আইসক্রিমের আর মোবাইলের বিজ্ঞাপন কেনো সিনেমার চরিত্রের সংলাপে আনতে হবে?


'জয় ভীম' সিনেমাটি ১৯৯৩ সালের ইরুলার উপজাতির কোনো এক দম্পতির সাথে পুলিশের ঘটে যাওয়া আচরণের বিচারিক প্রেক্ষাপটে রচিত। সত্য ঘটনার সাথে পারিপার্শ্বিক সত্য ও আলঙ্কারিক সত্য এক করে সিনেমা নির্মাণ করলে পর্দায় শিল্পমনে চোখ রাখা যায়। তাই জয় ভীমে শিল্পমনে চোখ রাখতে পারলেও মিশন এক্সট্রিমে রাখা যায় না। মিশন এক্সট্রিমে সংলাপ ও গল্প বুননে আরও শক্তিশালী মনোযোগ দেয়ার প্রত্যয় প্রয়োজন ছিলো। 


কারন মিশন এক্সট্রিম ফিচার ফিল্ম না। ফিচার ফিল্ম হলে অনেক অপরাধ ক্ষমা করা যায়। রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের নোনাজলের কাব্যের অনেক অপরাধ আমরা ক্ষমা করেছি— টুনির অপরাধ আমরা ক্ষমা করেছি। তাসনুভা তামান্না বা টুনি যেখানে ছোট্ট সময় থেকে চরিত্রসময় পর্যন্ত জেলেপাড়ার সন্তান সেখানে তার ভাষা হওয়া উচিত ছিলো শতভাগ নির্ধারিত জেলেপাড়াময় অথচ তার ভাষায় নাগরিক টান। তবে ভালো লেগেছে নোনাজলের কাব্যের টপিক যা একান্ত বাংলাদেশের নিজস্ব গল্প— ভাঙনের গল্প সংগ্রামের গল্প আশা ও প্রত্যাশার গল্প। 


'নোনাজলে কাব্য' সিনেমার সাধারণ মানুষও মতবাদের ফাদে আটকে যায়— সেখানেও বিপদগামী তৎপরতা সক্রিয়। তাইতো ভাস্কর রুদ্র প্রান্তিক জেলেপল্লীতে এক অভিশাপের নাম। চেয়ারম্যান ও তার চ্যালারা বিশ্বাস করতে শুরু করে রুদ্রের নির্মিত মূর্তির জন্যে তাদের আয়ের প্রধান উৎস ইলিশ মাছ আর জালে ধরা দিচ্ছে না। বৈজ্ঞানিক জীবন আর সুবিধাবাদী বিশ্বাস জীবনের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রভাব, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জেলেদের দৈনন্দিন জীবন সংগ্রাম ও সংস্কৃতিক প্রভাব নোনাজলের কাব্য নামক ফিচার ফিল্মে টানটান আলোছায়া মায়ায় ১০৬ মিনিটে পর্দায় উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে ফ্রেঞ্চ-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার চেষ্টা কিংবা প্রচেষ্টা। 


আবার মিশন এক্সট্রিমে আসি। এই সিনেমার শেষে তাসকিন রহমানের ডায়লগটি ভালো লেগেছে— "আলোতে যা খেলা আঁধারে তা যুদ্ধ।"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন