নবীনগর উপজেলার পূর্বাংশে নাটঘর ইউনিয়নের অবস্থান। নাটঘর ইউনিয়নের আয়তন ৬,৪৭৬ একর (২৬.২১ বর্গ কিলোমিটার)। জনসংখ্যা প্রায় তিরিশ হাজারের মতো।
এই নাটঘর ইউনিয়নের একটি গ্রাম রসুলপুর। মাত্র একটি ব্রিজকে কেন্দ্র করে এটি ইদানিং হয়ে উঠেছে মানুষের বিনোদন কেন্দ্র। বর্ষাকালে প্রচুর মানুষ একটু শ্বাস ফেলার ইচ্ছায় চলে আসে এই রসুলপুর গ্রামে। এই গ্রামের এক পাশে তিতাস নদী। বর্ষার জলে তিতাস নদী যখন টইটুম্বুর হয়ে ওঠে তখন চাষের জমি হয়ে ওঠে তরতাজা জলল প্রাণ। বাংলাদেশের মানুষ জল পছন্দ করে পছন্দ করে জলগোষ্ঠী জলের স্বাভাবিক ধারা-উপধারা প্রবাহ।
রসুলপুর ব্রিজ থেকে একটি রাস্তা সোজা চলে গেছে বিদ্যাকুটের দিকে। বর্ষাকালে এই রাস্তার দুই ধারের ধানি জমিতে কেবল জল আর জল । হাওড় নয় তবে হাওড়ের মতো ( গ্রীষ্মকালে হাওরকে সাধারণত বিশাল মাঠের মতো মনে হয়, তবে মাঝে মাঝে বিলে পানি থাকে এবং তাতে মাছও আটকে থাকে)।
নাটঘর ইউনিয়নের পশ্চিমে বিদ্যাকুট ইউনিয়ন, দক্ষিনে শিবপুর ইউনিয়ন ও কাইতলা উত্তর ইউনিয়ন; পূর্বে তিতাস নদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়ন, রামরাইল ইউনিয়ন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা এবং উত্তরে তিতাস নদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিন ইউনিয়ন ও সাদেকপুর ইউনিয়ন অবস্থিত। নাটঘর ইউনিয়ন জাতীয় সংসদের ২৪৭নং নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ এর অংশ।
আমরা তিনজন। আমি আর সৈকত। রিকশা চালাচ্ছে বাবু। আড়াইসিধা থেকে যাত্রা শুরু করলাম যাত্রাপুর হয়ে রসুলপুর গ্রামের দিকে প্রানশক্তিতে ভরপুর কোনো এক তরতাজা দুপুরে। এই গ্রামের গল্প অনেক শুনেছি। গ্রামটি দেখতে নাকি অনেক সুন্দর।সৌন্দর্য নির্ভর করে দেখার দৃষ্টিভঙ্গির উপর সৌন্দর্য নির্ভর করে মানসিকতার অবস্থানের উপর। গ্রামটি দেখার ইচ্ছা অনেকদিন আগের। অনেকদিন আগের বলতে গতবছর বর্ষাকালের। এই বছর এখনো বর্ষা আসে নাই। বাবুর বিভাটেক চলছে রসুলপুর গ্রামের দিকে। প্রচন্ড গরম। দুই হাজার সালের আগে প্রত্যেকটা গ্রাম ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। প্রাকৃতিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। প্রকৃতির আদরে লালিত। প্রচন্ড গরম। বাবুর বিভাটেক চলছে। বিভাটেক বয়ে যাচ্ছে তারুয়া চিলোকুট নরসিংসার আদমপুর হয়ে গোকর্ণ ঘাটের দিকে।
গ্রাম আর গ্রাম নাই ভাই। গরম আর গরম। কারণ গাছপালার দেখা নাই। আদমপুর গ্রামে ১৭-১৮ বছরের এক মেয়ে গাছ থেকে আম পাড়ছে। আমি আম চাইলাম। মেয়েটি হাসি দিয়ে দুইটি আম আমাদেরকে দিয়ে দিল। আমরা হাসি দিয়ে তাকে ধন্যবাদ দিলাম।
গ্যাসের খনি দেখতে পেলাম আদমপুর গ্রামে। আজ থেকে বিশ পঁচিশ বছর আগে আদমপুর গ্রামের এই গ্যাসের খনির দেখা মিলে। নতুন আরও গ্যাসের খনি আবিষ্কার হচ্ছে এখানে। মনটা আনন্দে ভরে গেল। এই গ্যাসের খনি প্রমাণ করে এই গ্রামে এক সময় প্রচুর গাছপালা ছিল। আজকে গ্রাম এলাকায় যেমন গাছপালা দেখতে পাওয়া যায় না তেমনি দেখতে পাওয়া যায়না গাছপালা লাগানোর প্রতি মানুষের আন্তরিক প্রচেষ্টা।
রসুলপুর গ্রামে অর্থাৎ রসুলপুর ব্রিজ বা গোকর্ণঘাট ব্রিজের সামনের রাস্তার দুই পাশে গড়ে উঠেছে কর্পোরেট রেস্টুরেন্ট বাচ্চাদের খেলাধুলার প্র্যাকটিক্যাল সামগ্রী, বসে আড্ডা দেওয়ার বহুবিধ আধুনিক সামগ্রীও দেখতে পাওয়া যায় এখানে। ঘোড়াও এখানে পাওয়া যায়-- ছবি তুললে ১০টাকা থেকে ২০ টাকা দিতে হয়। সৈকত জীবনে প্রথমবারের মত ঘোড়াতে 🏇 আরোহন করে। আহা কি আনন্দ তার চোখে-মুখে!
নরসিংসার বাজারে গিয়ে কলা খেলাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে সাধারণত কলা আসে নরসিংদী থেকে। নরসিংদী সারা বাংলাদেশে কলার জন্য বিখ্যাত। নরসিংসার বাজারের কলাওয়ালা চাচা খুব রসিক মানুষ। তিনি পাইকারি হারে কলা বিক্রি করেন। আমাদের কাছে পাইকারি মূল্যের চেয়েও কম দামে কলা বিক্রি করেন।
২০ টাকা দামের চটপটি খেয়ে আমরা আবার রওনা দিলাম বাড়ির দিকে। তখন সন্ধ্যা নামছে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে অন্ধকার নেমে আসে আমাদের মেঘনা নদীর জলে। বাবুর বিভাটেক এবার বিশ্রামে যাবে। আমরাও বিশ্রামে যাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন