মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৮

আমার আর বই পড়া হলো না

কামড়ার শীতসিটে সাধারনত সিট থাকে ছয়টি। প্রায় দেখা যায় সেখানে যাত্রী বসে আছে নূন্যতম নয় জন কখনো বারো জন।

ধরুন একজন সিট পেয়েছে, এই একজন আরও একজন নিয়ে কিংবা আরও দুইজন নিয়ে সুন্দর করে বসে পড়বে। তারপর দেখা যায় বস্তির মতো চমৎকার এক আড্ডার জায়গায় পরিনত হয়-- পা পু বে বু চলতে থাকে। যে যাত্রী একটু চিন্তা করবে বলে এসি কামরায় সিট নিয়েছে তার অবস্থা তিন তের উনচল্লিশটা বাজে।

এমন একটি ঘটনার কথা আজকে আপনাদের বলবো। আমার সিট নাম্বার  সতেরোর গ। কামরায় ঢুকে দেখি কাউ মাউ চেচামেচি শুরু হয়ে গেছে।

কেন?

চাচা বলতেছেন, "আপনাদের সিট তিন জনের আপনারা কেন পাঁচ জন বসবেন?"

বিবাদী পক্ষ দুনিয়ার যুক্তি এনে হাজির করছে, যুক্তি দিয়ে মানবতার দায় দিয়ে বিবাদী পক্ষ প্রমান করার চেষ্টা করছে তারা রাইট।

আমাদের সিটে আমি আর ঔ চাচা, আর একজন বসতে পারবেন। অবশেষে আর একজন সুন্দর আপা তার সুন্দর হাজব্যান্ড নিয়ে উপস্থিত। এবার চাচা আরও ক্ষেপে গেলেন। চাচার আচরন দেখে সুন্দর হাজব্যান্ড রেগে কামড়া থেকে বের হয়ে যেতে চায়লে সুন্দর আপা নতুন প্রেমিকের মতো হাত টেনে ধরে রাখে-- 'না না তুমি যেতে পারবা না'।

আয় মাবুদ আমি একি দেখিতেছি!

এক পর্যায়ে রেগে বিপরীত পক্ষের দুই হিরো বের হয়ে গেলো। থাকলো এবার দুই মহিলা আর এক পুরুষ। আমাদের পাশে থাকলো সুন্দর আপা, সুন্দর আপার হাজব্যান্ড চলে গেলো আমাদের বিপরীত পাশে।

এইবার তিন মহিলার শুরু হলো হচপচ আলোচনা, ইনিয়ে বিনিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে আরম্ভ করে-- কে কত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, কার দাদা নানা কত বড় অফিসার, কার জুতা কত পরিষ্কার ইত্যাদি ইত্যাদি।

আর আমার পাশের চাচা টাইপের ভাইজান শুরু করেন ফোনালাপ।ফোনালাপে তিনিও এসপি ডিসি উদ্ধার করে ছাড়ছেন।

একপক্ষের ফোনালাপ আর অন্য পক্ষের অবস্থান জাহিরের পাল্লায় পড়ে আমার আর বই পড়া হলো না। আমার বই পড়া হয়তো খুব ভালো করেই হতো যদি তাদের মতো মানবিকতার আর নিয়ম কানুনের দায় আমিও দিতে পারতাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন