আমার পাশে যে মেয়েটি বসে আছে তার নাম আযহা। তাকে জিজ্ঞেস করলাম আজহা মানে কী? বললো, সাইনিং সামথিং। আজহা সরকারি চাকরি করে— মালদ্বীপের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো এক গোপনীয় বিভাগে। অবাক হয়ে গেলাম মানুষের ভীড় দেখে— অলিম্পাস মালে শহরের প্রাচীনতম সিনেমা হল। ইদানিং সংস্কার করা হয়েছে— আগে পরিবেশ ততটা নান্দনিক ছিলো না।
লাসভিয়াস ধিবেহী শব্দ যার অর্থ যদিও দেরি হয়ে গেছে— Though It's late. এই সিনেমা দেখতে গিয়ে জীবনে প্রথম ধিবেহী ভাষা টানা তিনঘণ্টা শুনলাম। প্রথমবারের মতো পরিচিত হলাম মোহাম্মদ নিয়াজ টেডির সাথে— সে সিনেমাটির পরিচালক ও লেখক।
আহমেদ ইশা এবং ওয়াশিয়া মোহাম্মদ অসাধারণ অভিনয় করেছে। আহমেদ ইশা অভিনয় করেছে মোহাম্মদ ইকবাল নামে আর ওয়াশিয়া মোহাম্মদ অভিনয় করেছে ইউশরা নামে। মিউজিক করেছেন মোহাম্মদ ইকরাম।
এই সিনেমার বলতে গেলে তেমন কোনো গল্প নাই। গল্প থাকলেও গল্প ধরার ক্ষমতা আমার তেমন নাই— ধিবেহী ভাষা আমি বুঝি না কিচ্ছু।
ইকবাল একটি কোম্পানিতে চাকরি করে ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টে। ইউশরা গানের লোক। একটি গানের অনুষ্ঠানে দুজনের দেখা হয়— তারপর পাথর গড়াতে গড়াতে প্রাসাদ নির্মিত হয়— তাদের বিয়েটা দেখানো হয়েছে পরিপূর্ণ ফ্ল্যাশব্যাক পদ্ধতি ব্যবহার করে। ইকবাল-ইউশরার একটি সন্তান— হামরা ইকবাল। হামরা ইকবাল হাসপাতালে ভর্তি— সিনেমার শুরু ঠিক সেখান থেকে।
হামরা ইকবাল জন্মগ্রহণ করার পর ইউশরা বা ওয়াশিয়া মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে— কোনোভাবেই সে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ মেনে নিতে পারছিলো না— তারমধ্যে একধরনের আত্মহত্যাচারন মানসিকতা দেখা দেয়। এখানে একটি বিষয় পরিচালক খুব সুন্দর করে দেখালো— পুরুষ আসলেই মাতৃত্বের কষ্ট বুঝতে পারেনা।
হামরা জন্মের পর নানাবিধ সোমাটিক বিশৃঙ্খলার কারনে ইউসরার শারীরিক সম্পর্কের প্রতি অনীহা জন্মে। কিন্তু ইকবালের শারীরিক চাহিদা আরও বেড়ে যায়— ফলে ফ্রয়েড জয় লাভ করে— ফলে রাতের গভীরে সে চলে যায় প্রতিনিয়ত সিডিউশ করা প্রতিবেশীনির কাছে এবং সে তাকে বিয়ে করে— ইউশরা ইকবালকে তালাক দেয় এবং আরেকজনকে বিয়ে করে।
ইউসার ফিরে পায় নতুন জামাই,ইকবাল খুজে পায় নবীন স্ত্রী— আর হামরা!? হামরা হারায় তার বাবা এবং মাকে।
হলভর্তি দর্শক— মাত্র কয়েকজন পুরুষ— আজহারের কাছে এর কারন জানতে চাই— প্রথম কারন হিসাবে সে আমাকে জানায় নিয়াজ ভালো পরিচালক, তাছাড়া সিনেমাটি আমাদের জীবনাচারকে ভিন্নভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছে এবং ঘরের ভেতরের দ্বন্দ্বকে সামনে এনেছে আধুনিক রসরঙ্গ অঙ্গে।
লাসভিয়াস সিনেমাতে ইকরাম সুন্দর মিউজিকের কাজ করেছে— ভাষা কিচ্ছু না বুঝেও বলা যায়— এটাই মিউজের আন্তরিক বিশ্বজনীন চেহারা।
অভিনয়ের অভিব্যক্তি একটি ভাষা। পর্দার কালার একটি ভাষা। দর্শকের ক্রিয়াশীল আচরণ একটি ভাষা। ক্যামেরার মুভমেন্ট একটি ভাষা। এতো এতো ভাষার মাঝে শব্দ না বুঝলেও সিনেমা অনুধাবন করা যায় সুন্দর উপায়ে। সিনেমাটিতে কিন্তু মিউজিক এবং সিনপ্যাটার্ন দারুণভাবে দেখানো হয়েছে।
শেষে হামরা মারা যায়। এবং একেবারে শেষে হামরা তার বাবাকে কিছু ইমোশনাল কথা বলে, একটি গান করে— নট লাইভ বাট রেকর্ড। গানটি যখন বাজে তখন আমার পাশে বসা মালদ্বীপের সরকারি চাকরিজীবী আযহা কাদছে— আস্তে আস্তে চশমার ফাক দিয়ে চোখের জল মুছে নিচ্ছে।
লাসভিয়াস সিনেমা দেখতে দেখতে আযহা কেবল চোখের জল ফেলছে এমন না— এমন দৃশ্যও আছে যা হিজাবি আযহাকে তার বোরখা ও পর্দার আড়ালে একটু হলেও ঘামতে সহযোগিতা করেছে— অবশ্যই হালাল দৃশ্য— কারন ডিরেক্টর মোহাম্মদ নিয়াজ টেড্রিকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে দেশটি মালদ্বীপ এবং মালদ্বীপে নিয়ম করে পাচবার আযান হয়। নিয়াজ নিজেও লাসভিয়াসে কয়েকবার আযান ও সালাতের দৃশ্য চরিত্রায়ন ও ক্যামেরায়নের মাধ্যমে দর্শকের সামনে স্পষ্ট করে তুলেছে।
আযহার চোখের জলের কথা ভাবতে ভাবতে যখন সিনেমার হল থেকে বের হচ্ছি সিনেমা পরিচালক পর্ষদের একজন জানতে চায়লো কেমন লাগলো আমার লাসভিয়াস। আমি বললাম—
First time I have made my realization on separation resistant and language attachment.