শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২২

বান্দরবান এবং নাফাখুম

 কবুতর শান্তির প্রতীক— এমনটাই বলা হয়ে থাকে— এমনটা বলার পেছনে অনেক কাহিনি রয়েছে— ইসলামিকসংস্থা একধরনের কাহিনি বলে— সমাজবিজ্ঞানী একধরনের কাহিনি বলে— রাষ্ট্র বিজ্ঞানীরা নিশ্চয়ই আরেকধারার কাহিনি বলবেন। তবে আমার কাছে একটি কথা খুব ভালো লেগেছে— কবুতর পরকীয়া করে না—  কবুতর সঙ্গী বদল করতে চায় না— সঙ্গী মারা গেলেও নতুন সঙ্গী নিতে বা তাকে দিতে বহু জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।তাই কবুতর শান্তির প্রতীক। 


নাফার খুব প্রিয় কবুতর। কারন একটাই। কবুতর পরকীয়া করে না। নাফার খুব ভালো বন্ধু তুন ইয়াত। তুন ইয়াতের সাথে নাফা আজ ঘুমধুম গ্রামে যাবে। বাড়ির বাইরে-টাইরে সে খুব একটা যায় না— যাওয়ার ইচ্ছা হয়। আজ সে যাবেই। 


তারা যাত্রা শুরু করে। পাহাড়ি রাস্তা তাদের চেনা। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা পৌঁছে যায় ঘুমধুম গ্রাম। গ্রাম ভালো লেগে যায় তাদের। রাতে তুন ইয়াতের খালার বাড়িতে থেকে যায় নাফা। সকালে বাড়ি ফিরে। সকাল বলতে প্রায় দুপুর হয়ে যায়।


বাড়ি ফিরে নাফা দেখে তার স্বামী হাসেলিয়া অগ্নিমূর্তি ধারন করে আছে— সে বিশ্বাস করতে পারছে না আর নাফাকে— নাফা কোনোভাবেই হাসেলিয়াকে বিশ্বাস করাতে পারছে না তুন ইয়াত তার একজন ভালো বন্ধু জাস্ট— এর বেশি কিছু না। পরিস্থিতি আরও জটিল হতে থাকে— হাসেলিয়ার ঘ্যানঘ্যান ঘ্যানঘ্যানানি বাড়তে থাকে। মেয়েদেরকে মেরুদণ্ড মনে করে এমন পরিবার বাংলাদেশে খুব কম।পাহাড়েও। পারিবারিক অযথা চাপ বাড়তে থাকে নাফার মানসিক পাড়ায়। একদিন সব কিছু উপেক্ষা করে উধাও! কোথায় গ্যাছে নাফা কেউ জানে না! 


হাসেলিয়ার ঘরে নতুন বউ আসে।  তুন ইয়াত তার প্রেমিকাকে বিয়ে করে। নাফা উধাও মানে উধাও— আর তার দেখা নাই। 


জোছনা রাত। মিহিদানার মতো মৃদুমন্দ বাতাস। পাহাড়ি বাহারি পাতায় যেনো রঙের যৌবন উন্মাদ খেলা— এমন সময় ঝর্ণার পাশে পাহাড়ি বৈচিত্র্যময় ফুলের ❀ শাড়ি পরে নৃত্য করছে এক নারী। গ্রামের সবাই ছুটে আসে তাকে দেখতে। মধ্যরাত। তুন ইয়াত তাকে দেখতে পাচ্ছে। হাসেলিয়া পাচ্ছে না। নাফাকে দেখতে পাওয়া একধরনের প্রেস্টিজিয়াস ইসু হয়ে দাঁড়িয়েছে— যারা নাফাকে দেখতে পাচ্ছে তারা নিজেকে অনেক পুন্যবান মনে করছে— আর পুন্যের ভিত্তিতে পাহাড়ে রাজা নির্ধারিত হয়। গ্রামের যেসকল স্বামী তাদের বউকে বিশ্বাস করে কেবল তারাই দেখতে পাচ্ছে ঝর্নানারীর মনভুলানো নৃত্য। তুন ইয়াতের সেই ঝর্নানারীকে চিনতে ভুল হয় নাই— নাফা— নাফা সেই নৃত্যরত নারীর নাম। 

তারপর থেকে সেই ঝর্নার নাম নাফাখুম।


নাফাখুমের চোখ বরাবর ঝুলন্ত ব্রিজ। ব্রিজটা শতবর্ষী দাদির পানখাওয়া দাতের মতো নড়ে কিন্তু পড়ে না। বিজ্রে দাড়িয়ে আছি। ঝরনার জলবাষ্প আমার সমগ্র শরীরে আছরে পড়ছে। রাত প্রায় তিনটা। নাফাখুমবাসী ঘুমাচ্ছে। আমিও ঘুমাতে পারি— ঘুম এক বিশ্রামের নাম। ঝরনার জলবাষ্প আমার অনুভূতির এলাকায় এমন প্রশান্তির ধারা বয়ে দিয়ে যাচ্ছে যা বিশ্রামের অধিক কিছু। কানে আসছে পাহাড়ি পাখির ডাক। এমন ডাক জীবনে প্রথমে কানে বাজছে। খুব সুন্দর মনের মানুষ মারা গেলে পাহাড়ি পাখির ডাক হয়ে যায়— মায়াভরা সুরের রাধাশ্যাম আহবান— যাকে ধরা যায় না,আবার পরিহারও করা যায় না— যেনো প্রদোষ প্রবর প্রদ্যোত।


নাফাকে দেখার জন্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ  এই কুয়াশায়ময় শীতল শীর্ষ ঝর্নার কাছে— কেউ পায় কেউ পায় না— কেউ থেকে যেতে চায় নাফাখুম অনিবার্য কালের শেষ রেখার শেষ ইচ্ছাবৃন্ত পর্যন্ত।


বান্দরবান থেকে থানছি। থানছি থেকে রেমাক্রি। রেমাক্রি থেকে নাফাখুম। বান্দরবান থেকে থানছি প্রায় ৯০ কিলোমিটার। থানছি মানে বিশ্রামের স্থান।বান্দরবান থেকে থানছি যাওয়ার আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা চোখের নিচে নরম শীতল আবহাওয়া নির্মাণ করে নিতে জানে— পাহাড়ি নরম কোমল তুলতুলে সবুজের শরীর মনের গভীরে বাসরের আয়োজন করে নিবে সচেতন মনকে ফাকি দিয়ে। কি বলিব চুলখোলা মেঘ বেগম আর বাতাস প্রিয়ার কথা— যেনো নির্জন বনে প্রিয়তমার ঠোঁটের উপত্যকায় অধর অধিকারের প্রথম প্রশান্তি!


ফাকে একটা কথা বলে নেয়া দরকার। আমার পরিচিত এক ছোট বোন পাহাড় থেকে একটি বিলাই আনে। বিলাই বা ফেলিস ক্যাটাস রাধার মতো রাতে অভিসার করে। রেমাক্রির চেয়ারম্যান মার্কেটে সে প্রায় এক মাসের মতো ছিলো। হঠাৎ একদিন রাতে বিড়ালের কান্না শুনতে পায়। তার ঘুম ভেঙে যায়। তার একটি অসম্ভব ক্ষমতা রয়েছে— তার পায়ের শব্দ শুনলেই বিলাই দৌড়ে আসে। তার পায়ের শব্দ শুনেই বিড়ালটি কান্না রেখে দৌড়ে আসে। বিলাই বা ফেলিস ক্যাটাস রাতে অভিসারে যায়। তাই রাতে তাদের কান্না বাড়ে— পার্টনার খুজতে থাকে। তাদের কান্না মূলত কান্না নয়— শ্যামের বাশি।


বিলাইটিকে সে গ্রামে নিয়ে আসে। ঘুম থেকে উঠে বিলাইটিকে আর খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকদিন বয়ে গেলো— পাওয়া যাচ্ছে নাতো যাচ্ছে না। পাওয়া গেলো— কারের উপরে। কার থেকে নামানো হলো। আবার চলে যায় কারের উপরে। কারের উপরে তাকে খাবার দাবার দেয়া হচ্ছে। বিলিভ ইট অর নট— প্রায় ছয় মাস বিলাইটি কারের উপরে ছিলো। শ্যামা প্রিয় উল্লাস পাহাড়ের বিলাইটিকে রাখতে পারেনি— পাহাড়ের বিলাইকে সে পাহাড়েই রেখে আসে। 


পাহাড়ের বিলাইটি কেনো সমতলে নিজের জায়গা করে নিতে পারেনি তা নিয়ে টিম বাংলাদেশের অনেক বড় মিটিং হয়েছিল। রেজাল্ট আসেনি। এসেছিল অনুমান। তবে আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি পাহাড়ের বিলাইকে সমতল- সম্মান-সম্মত করে তুলবো— তাতে বাংলাদেশের বহত ফায়দা হবে।


সিমলার রাস্তা আর বান্দরবানের রাস্তা যেনো সহোদরা— একজন পার্লারে যাওয়া শিখেছে অন্যজন প্রাকৃতিক উপায়ে নিজেকে সজ্জিত করে রেখেছে। মানে কী? মানে খুব সোজা। বান্দরবান এবং তার রাস্তাঘাট এখনো প্রাকৃতিক— তবে প্রাচীন নহে। সেইদিন হয়তো বেশি দূরে নয় যখন দেখবো বান্দরবানের শরীরেরও আধুনিক পৃথিবীর চলমান ছোয়া। তবে নীলাচল( সাজানো পাহাড়) থেকে রাতের পাহাড়কে মনে হয়েছে প্রায় সিমলাময়— মানে পাহাড়ের অলিগলিতেও দিনে দিনে পড়ছে আধুনিক পৃথিবীর ছোয়া। সেই সন্ধ্যা রাতের নীলাচল— তার আঁচল বিছানো বাতাস শরীরে যে প্রশান্তির ধারা বয়ে দিয়েছে তা বজায় থাকবে কোষের কোনায় কোনায় আজীবন— সত্যিই পাহাড় ব্যতীত এমন প্রশান্তির বাতাস অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না— এমন বাতাস কোথাও খুজে পাবে নাকো তুমি— বাতাস প্রিয়ার রানী সে যে আমার পাহাড় ভূমি। 


নাফার শরীরে এখনো আধুনিক পৃথিবীর চলমান ছোয়া স্পর্শ করতে পারেনি। আজ সে এসেছে কুয়াশার পোশাকে। অসম্ভব অবলা সৌন্দর্য আজ তার অঙ্গে— কাশফুলের শরীরে ভরা জোছনা পড়লে উপর থেকে যেমন দেখায় তেমন সমাহিত সৌন্দর্য সমাহার নাফার সমগ্র শরীরে— শরীরে তার বাতাবি লেবু আর রজনীগন্ধার মোহমায়া ঘ্রাণ। পাহাড়ি লাতা ডাকছে— সকাল হয়ে এলো— মনে হলো এক পলক। এবার মুখে কথা ফুটে আমার— নাফাকে বলি, চলো আমার সাথে। নাফা হাসে। হাসি তো নয়— যেনো ছাতিম ফুলের গন্ধ উড়ছে আকাশে বাতাসে। আবার ভাবি নাফাকে কেনো আমার সাথে যেতে বলি— আমিও তো থেকে যেতে পারি। আমরা সবই কেনো আমার করতে চাই— আমরা কী হতে পারি না তার কিংবা তাদের।


পাহাড়কে আমাদের মতো করতে গেলে বড় ভুল হয়ে যাবে। পাহাড়ের নিজস্ব প্রান আছে একেবারে নিজের মতো— সবার মতো— আবার সবার থেকে সবচেয়ে আলাদা। থানছি থেকে রেমাক্রি যাওয়ার পথে যে স্বর্গলাভ হয়, রেমাক্রি থেকে নাফাখুম যাওয়ার পথে যে অন্তরলোক অনুভূতির সন্ধান মেলে তা পৃথিবীর কোথাও এমন করে আছে বলে আমার মনে হয় না। নৌকা চলছে— দুপাশে সবুজের আকাশ— সবুজ আকাশের উপরে মেঘময় বাতাসি নীলার চুলের বাহার— পুরাতন বড় বড় পাথর— বাতাসের বিশুদ্ধ উচ্চারণ— নৌকা চলছে— মাটি পুরাতন হতে হতে পাথর প্রাসাদ হয়ে, হয়ে গ্যাছে গাছের নিরাপদ আশ্রয়। কতশত গাছ আছে এই পাহাড়ে বলা মুশকিল। কেউ কেউ হয়তো জরিপ আমাদের সামনে উপস্থাপন করবে কিন্তু তা সত্য নয়— পাহাড়ের ভাষা যারা জানে তারা হয়তো অনুমান করতে পারবে— তবে সঠিক তথ্য অনেক অনেক দূরে।


দেশের দক্ষিণে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি পাহাড়ি নদী সাঙ্গু—  সাঙ্গুকে শঙ্খ নদী বলতে বেশ আরাম লাগে আমার— কর্নফুলীর পর এটি চট্টগ্রাম বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী— বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে কয়টি নদীর উৎপত্তি তার মধ্যে শঙ্খ নদী অন্যতম— মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার মদক এলাকার পাহাড়ে সাঙ্গু নদীর জন্ম— বান্দরবান জেলা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, আনােয়ারা ও বাঁশখালীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাঙ্গু সাপের মতো রাবারের দেহ আর সর্পিল ভঙ্গিতে  বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে— উৎসমুখ হতে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত সাঙ্গুর দৈর্ঘ্য ১৭০ কিলোমিটার— ১৮৬০ সাল— চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের গেজেটিয়ার প্রকাশকালে ব্রিটিশ শাসকরা ইংরেজিতে এটিকে সাঙ্গু নাম দেন তবে মারমা সম্প্রদায়ের ভাষায় শঙ্খকে রিগ্রাই থিয়াং অর্থাৎ স্বচ্ছ পানির নদ বলা হয়। বান্দরবানের শঙ্খ-তীরবর্তী লােকজনের ৯০ শতাংশই মারমা— যাদের প্রথম এবং প্রধান দেবি বা দেবতা এই শঙ্খ নদী। 


শঙ্খ নদীর মায়াময় শরীর দিয়ে আমরা বয়ে যাচ্ছি রেমাক্রির দিকে। সুন্দরী গ্রাম চোখে পড়ে কিন্তু সময় স্বল্পতার কারনে তাকে এক্সপ্লোর করতে পারিনি। চোখে আসে রাজা পাথর। রাজা পাথরকে ঘিরে বহু কিসসা কাহিনি দাড়িয়ে গ্যাছে। পুর্নিমা রাতে এই পাথরের কাছে মানুষ যা প্রার্থনা করে তাই নাকি পায়। পূর্নিমা রাতে এই পাথরের উপরে বসে ধ্যান করলে বেশ প্রশান্তি প্রশান্তি ফিল হবে বলে মনে হচ্ছিল আমার কাছে— মানুষ নিজের মতো করে ভাবতে পছন্দ করে— মানুষ নিজের মতো করে নিজের দেবতা নির্মাণ করে— পাহাড়িদের কাছে এই রাজা পাথর খুবই আরাধ্য পূজনীয় আত্মা— তারা মনে করে এই রাজা পাথর জীবিত এবং এই রাজা পাথর এবং তার রানী পাথর থেকে  শঙ্খ নদীর সমস্ত পাথরের জন্ম। তাহলে বুঝতে পারছি শঙ্খ নদীতে তিন প্রকার পাথরের দেখা মিলবে— রাজা পাথর, রানী পাথর এবং তাদের সন্তান পাথর। শীতকালে এই পাথরের রাজ্যে শঙ্খজল তেমন থাকে না। ফলে এই নদীতে চলমান ছোট ছোট আন্ডারওয়েট নৌকা চলতে সমস্যা ফিল করে। 


শঙ্খ নদীতে চলতে চলতে কতশত গাছবৃক্ষ চোখে পড়ে— কারো নাম ধরে ডাকতে পারি নাই— একটি গাছ কেবল তার বুক আর পীঠ দিয়ে আমাকে পরিচিত পরিচিত সুখ দিয়েছে— কলা গাছ। কিন্তু এই দুর্গম পাহাড়ের ঢাল থেকে কেমন করে পাহাড়ি পরিশ্রম কলা সংগ্রহ করে ভেবেই অবাক হচ্ছিলাম— তাদের পক্ষে সম্ভব— পাহাড়ের সমস্ত জেনেই তারা পাহাড়ের মানুষ।


একটি কথা শুনে আপনারা আমার সাধারণ জ্ঞানের লেভেল সম্পর্কে ধারনা নিতে পারেন— পাহাড়ে যাওয়ার আগেও জুম চাষ কি জানতাম না— জুম বলতে একটি ফসলকে বুঝতাম যা পাহাড়ের ঢালে জন্মে। পাহাড়ে গিয়ে নিজের চোখে দেখলাম এবং জানলাম জুম হলো ফসল চাষ করার জন্যে পাহাড়ি পদ্ধতি। জুম পদ্ধতিতে বিভিন্ন রকমের ফসল চাষ করতে পাহাড়িদের আজাইরা মাটিনষ্টকারি সার কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না— পাহাড়ে প্রচুর পরিমানে জায়গা এখনো পতিত যেখানে বিভিন্ন রকমের ফসল চাষ করা যায় জাস্ট পারিশ্রমিক খরচে।


নাফাখুম যাওয়ার পর দেখি দারুণ উপভোগ্য বৈচিত্র্যময় ক্ষুধা লেগেছে আমার— আলসার কালচারের কালে এমন অনার্য সুন্দর ক্ষুধা লাগা অবশ্যই আশীর্বাদের ব্যাপার— গোসল করে আসতে আসতে খাবার রেডি— লাল চালের গরম ভাত,পাহাড়ি মুরগির ডিম আর পাহাড়ি ডাল। তিন প্লেট ভাত একাই খেলাম— আরও খেতে যাবো এমন সময় ইসলামের নবীর উপদেশের কথা মনে ফুটে উঠে— একটু ক্ষুধা রেখেই উঠে গেলাম।


নাফাখুমে ১৮ পরিবারের বসবাস— সবাই আদিতে বৌদ্ধ— ইদানিং তারা খৃষ্টান হয়েছে— ১ পরিবার নাফাখুমে কেবল বৌদ্ধ ধর্মের— থানছি বান্দরবানের পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় প্রায় মানুষ ইদানিং খৃষ্টান ধর্মালম্বীদের সাথে হাতে হাত রেখে আলোর পথে চলে আসতেছে— এই আলো এমন এক আলো যা চোখে দেখা যায় না মনে উপলব্ধি করা যায় না কিন্তু থিউরি দিয়ে বুঝতে হয়— আরাকান রাষ্ট্র থিউরি। আমি এসব থিউরি ফিউচার কম জানি— আমি পাহাড়ে এসে কয়েকটি শব্দ শিখতে পেরেছি— বাংলা ভাষার শব্দ—


ক্রাও= মোরগির ডিম 

ভি ও= হাসের ডিম 

ক্রা= মোরগি 

হ তে = ঠিক আছে

কলিগ কলিগ= একটু একটু 

লা ফা= চা 


পাহাড়ি কোনো মেয়ে বোরখা পরে না।কোনো ছেলেকে দেখিনি পরতে পাঞ্জাবি— দেখেছি ছেলেমেয়ে একসঙ্গে কাজ করতে একসঙ্গে ব্যবসা করতে। পাহাড়ি ছেলেমেয়েদের শরীরে মেদ নেই— পাহাড় তাদের শরীরকে মেদহীন করেছে— করেছে ক্রিয়াশীল। তবে পাহাড়ি মানুষ ব্যবসা করা শিখে গ্যাছে— শিখে গ্যাছে দুইকে কেমন করে চার বানাতে হয়।


আসেন আসেন, বসেন বসেন, চলো চলো,যাই যাই— এই জাতীয় শব্দ টিমটুরের জাতীয় সঙ্গীত— অথচ আমি এক জায়গায় বসে কাটিয়ে দেই সাত-আট ঘন্টা কখনো কখনো— টিম নিয়ে ভ্রমণ করতে আমার ভালো লাগে না— একা একা ভ্রমণ করতে দারুণ ভালো লাগে আমার— টিম নিয়ে ভ্রমণ করার শিক্ষা আমাকে দেয়া হয়নি— শিখতে পারি নাই— একা অথবা দুইজন মিলে ভ্রমণ উপভোগ করি আমি। কেনো?  অনেক কারন!  সব কারন বলতে চাই না—তবে একটা কৌতুক বলি— শুনুন— এক লোক এক জুতিসের কাছে গেলেন হাত দেখাতে— জুতিস তার হাত দেখে একটি সাবান দিলেন— লোকটি তো অবাক! সাবান কেনো দিলেন জুতিস বাবা!!

বাবা আমাকে সাবান কেনো দিলেন? কাউকে দিচ্ছেন পাথরের আংটি কাউকে দিচ্ছেন রূপার আংটি, আমাকে সাবান কেনো?  

জুতিস বাবা লোকটিকে বললো," আগে হাত ধৌত করে আসেন" 


আসলেই রেজা ভাই, ভ্রমনে যাওয়ার আগে হাত ধৌত করার দরকার আছে। তবে রেজা ভাই ভুলবেনা পাহাড়ের বাতাস— এ যেনো বাতাস নয়— স্বর্গের অপ্সরার কোমল হাত— চাষ করে শরীরে শান্তির আভাস— জেগে উঠে দেহমনে ভালোবাসার প্রিয়তম রাত প্রতাপ সাবাশ।


প্লাবন শেষ। নুহ নবী কাককে পাঠালেন পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করে আসার জন্যে। কাক আর ফিরে আসেনি। তারপর কবুতরকে পাঠালেন। কবুতর যথাসম্ভব যথাসময়ে ফিরে আসে। ঠোঁটে করে নিয়ে আসে জলপাইয়ের পাতা।পায়ে তার পেকমাটি। কবুতরের পায়ে পেকমাটি দেখে নুহ নবী বুঝতে পারেন পৃথিবী বসবাসের উপযোগী হয়েছে। সেই সময় নুহ নবী কবুতরের জন্যে আল্লার কাছে দোয়া করেন এবং কবুতর আজ শান্তির প্রতীক।


নাফার পছন্দ কবুতর। কবুতরের পুষ্টিমানভরা মাংসের জন্যে নয়— কবুতরের পোষমানা স্বভাবের জন্যে। নাফা ফিরে আসতে জানে। নাফা এমন পাখি যে বেড়াতে যায় কিন্তু দিনশেষে তার ঘর চায়। নাফাকে হাসেলিয়ারা বুঝতে পারে না— আর বুঝতে পারে না বিধায় সংসারের গভীর গভীরতর অসুখ এখন— কবুতর একবার অতীত ভুলে গেলে আর অতীতে ফিরে যায় না— কবুতর শান্তির প্রতীক—নাফা কবুতর হয়ে বেচে থাকে তুন ইয়াতের বিশ্বাসী আত্মায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন