ডেইজি সরকার সক্রিয় চরিত্র। ডেইজি সরকারকে কেন্দ্র করে সব চরিত্র প্রান পেয়েছে। রোমান একজন গুরুত্বপূর্ণ মাস্তান হয়ে উঠে ডেইজি সরকারের কারনে আশ্রয়ে— ডেইজি সরকারের আড়ালে রয়েছে আরও শক্তিশালী কোনো এক সরকার যাকে দেখা যায় না কিন্তু তার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।
পলিটিক্যাল স্রোত এবং আইনের বইগন্ধ যে একই গতিপথ খুজে নিয়ে থাকে বাংলাদেশে তা রায়হান রাফি অত্যন্ত চমকপ্রদ ইঙ্গিতপূর্ণ উপায়ে পর্দার সামনে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে পরাণ সিনেমার আলোকে।
প্রথম দর্শনে মনে হতে পারে পরাণ একটি প্রেমের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সিনেমা। আসলে সিনেমাটি প্রেমের পরিনতি থেকে শুরু হয়েছে এবং শেষ হয়েছে পরিনতির কারন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে— কজ এন্ড ইফেক্ট।
একজন ডেইজি সরকারের সামনে রোমান মাত্র একখান কুফির আলো— ফু দিলেই নিভে যাবে এবং গ্যাছেও বটে— একজন রোমান ডেইজি সরকারের সরাসরি মাঠ পর্যায়ের প্রতিনিধি— রোমানের সামনে অনন্যা কিংবা সিফাত পানহা কলার মতো নরম— টিপ দিলে গলে যাবে এবং গ্যাছেও বটে।অনন্যা Bipolar disorder রোগে আক্রান্ত বলে আপনারা অনেকেই পেটের বাতাস কিছুটা হালকা করতে পারেন।তাতে লাভ নেই— ঠাকুর ঘরের কলা কে খায় জনগণ আজ না জানলেও কালকে জানবেই, জানতেই হবে, কারন মানুষ চিরকাল বোকা তাহে না মিয়া ভাই, তাহে না।
সিলেটের ছেলে রায়হান রাফির একটি স্বাভাবিক প্রলুব্ধ প্রবণতা আছে,আর তা হলো জনপ্রিয় একটি ইসলামি সংগীতকে আস্তে করে সময়োপযোগী করে দর্শকের সামনে উপস্থিত করা— মৃত্যু চেতনার দিকে পর্দার সামনের মানুষদের নিয়ে যাওয়া তার আরেকটি গোপন অভিলাষ— "সাজিয়ে গুজিয়ে দে মোরে..
সজনী তোরা.." এই গানটি বাউল কামাল পাশার লেখা হলেও গ্রাম এলাকায় ওয়াজ মাহফিলে হুজুররা পরকালের গুরুত্ব বোঝানোর জন্যে তাদের সামনের দর্শকদের এই গানটি কেদে কেদে অথবা কান্নার অভিনয় করে শোনাত এবং এখনো শুনায়— পরাণ সিনেমায় এই গানটি বহুবার ব্যবহার হয়েছে এবং তাতেই দর্শকদের চোখের পানি নাকের পানি এক করতে হয়েছে।
রায়হান রাফির সিনেমায় প্রেম অলঙ্কার হিসাবে আসে। পোড়ামন ২ কিংবা দহন অথবা পরান সিনেমায় প্রেম কেবল অলঙ্কার— সামাজিক বাস্তবতা, রাজনৈতিক নির্জনতা কিংবা কোলাহল, চরিত্রের নীরব প্রেক্ষাপটের অলঙ্কার হিসাবে আসে প্রেম। পরান সিনেমায় সিফাত অনন্যার প্রেম অথবা সিফাত রোমানের দ্বন্দ্ব অথবা সিফাত অনন্যার প্রেম কেবলই দৃশ্য— দৃশ্যের পেছনের কাহিনি নিয়ন্ত্রণ করে আলী বাবা চল্লিশ চোর।
অনন্যা রোমানের প্রস্তাব অস্বীকার করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়নি—এমনকি নিয়াজী দারোগাও রোমান সার্কেলের কাছে বন্দী। ফলে রোমানের ক্ষমতাহাতে অনন্যা বাধ্য হয়ে ধরা দেয় এবং সুবিধা নিতে শুরু করে। মানবমন— অভ্যাসের দাস— স্বাধীন ডানার প্রত্যাশী। একসময় অনন্যাও রাজনীতির ভাষা বুঝে ফেলে। তবে জলে থেকে কতক্ষন ডাঙার যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
ডিরেক্টর রায়হান রাফি খুব সুন্দর করে ড্রোনের ব্যবহার করে। পরান সিনেমায় ড্রোনের তেমন ব্যবহার দেখা যায়নি। প্রত্যেকটা অভিনেতার সাবলীল মুভমেন্ট চোখে পরার মতো।শরীফুল রাজ বা রোমানের চরিত্রশক্তি যথেষ্ট মার্জিত সুন্দর গতিময়তায় যথাযথ আশ্বাসসঞ্চিত অবয়ব।
পরাণ সিনেমার ভাষা ব্যবহার সুতরাং কিংবা এবং টাইপের না— আমাদের চারপাশের চিরচেনা সৌরজগতের ভাষা— সংলাপের আচরণে ভাষার মাজেজা-পরিবেশ সোয়িং করেছে কিন্তু রোয়িং করেনি। বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও ঢাকা অঞ্চলের মানুষের ভাষা পরাণ সিনেমার জলপ্রপাতের ধারা অবিরাম প্রবহমান রেখেছে।
ইনডোর শট এবং আউটডোর শট প্রায় কাছাকাছি। পর্দায় রোমান গংদের প্রবেশ দৃশ্যটি চোখে লেগে থাকার মতো— তখন পর্দায় দারুণ এক কালার ভেসে উঠে— রিয়েল বাংলার বৃষ্টি— যেনো এক নতুন সৃষ্টি। তবে সিনেমার কালারমান শব্দমান টানা ধরে রাখতে পারেনি কালারম্যান— কখনো তামিম ইকবালের মতো উত্তেজিত হয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হয়ে গ্যাছে পরাণ সিনেমার কালারমান এবং শব্দমান।
প্রিয় বিরানি খেয়ে রোমান তারই মিত্র তুতুর হাতে মারা পরে— অবিশ্বাসের জাল বিস্তার করে ঘরের ভেতর কাহিনি ও চিত্রনাট্যকার ইচ্ছে করে— এখানেও ডেইজি সরকাররা বেচে যায় অথচ ডেইজি সরকাররাই শেষ রাতের বাদুড়। এইভাবে প্রতিবার প্রতিনিয়ত মাছের ব্যাপারী বেচে যায়— জেল জরিমানা খায় সেই লোক যে খাবারের মাছ ধরে।
সিফাতকে কুপিয়ে মারে রোমান, রোমানকে হত্যা করে তুতু — তুতু ও অনন্যাকে আইনি উপায়ে হত্যা করবে রাষ্ট্র— পুরষ্কারের মালা পরবে আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ। আর রাষ্ট্র? মাস্টার শট দিয়ে ড্রোনের মাধ্যমে দেখাবে সব কিছু ঠিক আছে আর গোপনে গোপনে বলবে দেশের পতাকার বাইরেও আমার একটি পতাকা আছে— আর সেই পতাকার নাম সিন্ডিকেট— সুতরাং আমার পতাকা তলে আসো— বেচে যাবে এবং এসি রোমে রোমান্টিক খাবারের ভরতলে যাবে সব— তোমার দেহ তোমার মন।
পরিচালক— রায়হান রাফি
প্রযোজক— লাইভ টেকনোলজিস
চিত্রনাট্যকার— শাহজাহান সৌরভ, রায়হান রাফি
শ্রেষ্ঠাংশে
বিদ্যা সিনহা সাহা মীম
শরিফুল রাজ
ইয়াশ রোহান
সুরকার
নাভেদ পারভেজ
চিত্রগ্রাহক
মিছিল সাহা
মুক্তি
১০ জুলাই ২০২২
দৈর্ঘ্য
১৩৯ মিনিট
একটি সাধারণ গল্পকে অসাধারণ করে দর্শকের সামনে উপস্থাপনের চেষ্টা— গল্পটি আমাদের সবার জানা— ২০১৯ সালের ২৬ জুন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে হত্যা হয় তার স্বামী রিফাত শরীফ আলোচিত সন্ত্রাস অথবা মিন্নির প্রেমিক সাব্বির আহমেদ নয়ন অর্ফে নয়ন বন্ডের হাতে।