তিনাকে সতর্ক করা হচ্ছে। আকাশ বাতাস তিনাকে সতর্ক করছেন— সতর্ক করছেন জমিনের গাছপালা। কারো সতর্কবানী কানে নিচ্ছেন না তিনি। তিনি শুনছেন তিনার একান্ত নিজস্ব স্বজনদের কথা। স্বজনদের উপর তিনি অনেক নির্ভরশীল হয়ে গেলেন।
লোকজন তিনার বাসভবনের সামনে জমায়েত হতে শুরু করে— তিনি তাদেরকে তিন দিনের সময় দিলেন আন্দোলন ভেঙে বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্যে। আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠছে। কোনোভাবে আন্দোলন দমন করতে পারছেন না তিনি।
তিনি আন্দোলনকারীদের সামনে আসলেন না— আসলেন তিনার পক্ষ থেকে তিনারই একজন স্বজন— এসে বক্তব্য দিলেন—
তোমরা কি চাও?
তোমরা কি লুটপাট করতে চাও?সময় থাকতে ফিরে যাও।তোমাদের ধারনা, তোমাদের ভয়ে আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান পদত্যাগ করে তোমাদের হাতে শাসনভার তুলে দেবেন?যদি তোমরা তা ভেবে থাকো তাহলে বোকামি করবে। আমরা কোনো জালেমের হাতে নিজেদের ন্যস্ত করতে ইচ্ছুক নই।
'জালেম' শব্দটা আন্দোলনকারীদের মনে আরও তীব্র বেদনাঘাতের জন্ম দেয়— আন্দোলন আরও আরও তীব্র থেকে তীব্রতার অবয়ব ধারন করে— একসময় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখা দেয়। রাষ্টপ্রধানের পদত্যাগ দাবি করতে শুরু করে আন্দোলনকারীরা—বাসভবনের দিকে তীর ও পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে।
পাথর ও তীরের আঘাতে বাসভবনের তিনজন স্পেশাল সিকিউরিটি শহীদ হয়ে যান। তারপরও তিনি বিচলিত নন— কোরান তিলাওয়াতের কাজে আরও অধিকহারে মনোনিবেশ করেন।
আন্দোলনকারীরা মারওয়ানকে তাদের হাতে তুলে দেয়ার জন্যে প্রস্তাব করে কিন্তু খলিফা তা শুনলেন না— তিনি শুনলেন মারওয়ানের কথা। অবশেষে খলিফাকে হত্যা করা হবে এমন কথা বলতে শুরু করে আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলন প্রতিবাদ চলছে। মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর তিনজন বিদ্রোহীকে নিয়ে খুব গোপনে খলিফার এক আনসারের বাড়ির ছাদ বেয়ে খলিফার বাড়িতে প্রবেশ করে। খলিফা তখন নিচতলায় কোরান পড়ছেন। মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর খলিফার দাড়ি ধরে টান দেন এবং অভদ্র ভাষায় খলিফাকে সম্বোধন করে। ঠিক সেই সময় মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের চোখে চোখ রেখে অত্যন্ত বিনয়ের ভঙ্গিতে খলিফা বলেন—
'আমি আল্লাহর বান্দা এবং তোমাদের খলিফা। তোমার পিতা জীবিত থাকলে আজ তোমার এই কাজ অত্যন্ত অপছন্দ করতেন।'
এই কথা শুনে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর লজ্জা পেয়ে পিছু হটেন। কিন্তু তার সঙ্গে আসা বিদ্রোহীরা খলিফার মাথায় তিনটি আঘাত করে। খলিফাকে রক্ষা করতে গিয়ে খলিফার স্ত্রী নাইলা এগিয়ে আসেন এবং তার আঙুল কেটে যায়। খলিফা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। খলিফার মাথার সামনে লাগা আঘাতটি মারাত্মক ছিলো। আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ খলিফার মাথা কেটে নিতে চায়লে অন্যরা বাধা দেয়।
খুব বেশি সময় পাননি খলিফা উসমান ইবনে আফফান।মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যে তিনি মহান প্রভুর কাছে চলে যান।
ইসলামের তৃতীয় খলিফা ওসমান ইবনে আফফানের মৃতশরীর তার ঘরে এইভাবেই পড়েছিল তিনদিন। তিনাকে দাফন করার মতো সাহস কারো ছিলো না।
প্রায় চল্লিশ দিন ধরে খলিফাকে বন্দী করে রাখা হয়— মদিনার সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির দরজায় একজন করে লোক দাঁড় করে রাখা হয়েছিল যাতে তারা ঘরের বাইরে বের হতে না পারে। খাবার ও পানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
আমাদের অবশ্যই মনে রাখা দরকার— উসমান ইবনে আফ্ফান عثمان بن عفان; ইসলামের তৃতীয় খলিফা— তিনি ৬৪৪ থেকে ৬৫৬ সাল পর্যন্ত খিলাফতে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং খলিফা হিসেবে তিনি চারজন খুলাফায়ে রাশিদুনের একজন। উসমান ছিলেন আস-সাবিকুনাল আওয়ালুনের একজন। এছাড়াও তিনি আশারায়ে মুবাশ্শারার একজন এবং সেই ৬ জন সাহাবীর মধ্যে অন্যতম যাদের উপর নবি মুহাম্মাদ ﷺ অধিক সন্তুষ্ট ছিলেন। তিনার উপাধি জিন্নুরাইন— হযরত মোহাম্মদ ﷺ তিনার দুই কন্যাকে আফ্ফানের পুত্র ওসমানের কাছে বিয়ে দেন— সেই থেকে তিনি দুই নুরের অধিকারী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন