অভিজিৎ সেনের সিনেমা 'প্রধান '— তার সিনেমা আগে দেখিছি বলে মনে পড়ে না— সামাজিক আবহের আদলে রাজনৈতিক ছায়াবরনে মারপিটধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র 'প্রধান'। তবে মারপিট কিন্তু একেবারে অবাস্তব স্টাইলের ধারণাকে বাস্তব করে দেখানোর প্রয়াস দেখাননি প্রধানের পরিকল্পনা টিম। প্রধান সিনেমায় ইনডোর শর্টগুলো তরতাজা ফিল দিয়েছে। যেহেতু ইমোশনাল প্রেক্ষাপট নির্মাণ এই সিনেমায় চরিত্র নির্মানের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেহেতু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দায়িত্বশীল উপায়ে।
অনির্বাণ চক্রবর্তী বা জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় একজন রাজনীতিবিদ এবং ধর্মপুর গ্রামপরিষদের পঞ্চায়েত প্রধান— তার অভিনয় বিশেষ করে ইমোশন প্রকাশ খুবই দুর্দান্ত— কথা ছন্দে ছন্দে বলতে পছন্দ করেন।
জলপাইগুড়ির ধর্মপুর গ্রামটা কিন্তু খুবই সুন্দর— পাহাড় ও সমতলের দারুণ মিশ্রণ। ক্যামেরাতে যে ধর্মপুর এলাকা দেখানো হয়েছে তা খুবই সীমিত— আরও বড় পরিসরে দেখানো যেতো।
দেব বা দীপক প্রধান— ধর্মপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা— তাকে ধর্মপুর থানায় পোস্টিং দেয়া হয় যাতে পনেরো বছর ধরে ভোটহীন ধর্মপুরে ভোটের ব্যবস্থা করতে পারে বা দুর্নীতিবাজ জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়কে সঠিকভাবে সায়েস্তা করতে পারে।
ছবিটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেব, অনির্বাণ চক্রবর্তী, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সোহম চক্রবর্তী এবং সৌমিতৃষা কুন্ডু। ব্লকবাস্টার টনিক এবং প্রজাপতির পরে এই ছবিটি সেন এবং দেবের মধ্যে তৃতীয় সহযোগিতা। দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চার্স এবং বেঙ্গল টকিজের অধীনে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন দেব, অতনু রায়চৌধুরী এবং প্রণব কুমার গুহ।
এই ছবিটির মাধ্যমে মিঠাই খ্যাত সৌমিতৃষা কুন্ডুর বড় পর্দায় অভিষেক হয়। চলচ্চিত্রটি বড়দিনের সাপ্তাহিক ছুটি উপলক্ষে ২০২৩ সালের ২২শে ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।
সৌমিতৃষা কুন্ডু (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০০)অনানুষ্ঠানিকভাবে তার নামের আদ্যক্ষর দিয়ে গঠিত এসটিকে নামে ডাকা হয়— একজন ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনেত্রী। বহুমুখী অভিনয় প্রতিভা, সৌন্দর্য এবং জনপ্রিয়তার কারনে তাকে টলিউডে কাজ করা অন্যতম সফল ও সম্ভাবনাময় তরুণী অভিনেত্রী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সে 'এ আমার গুরুদক্ষিণা 'ধারাবাহিক দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করে এবং মিঠাই ধারাবাহিকটিতে মুখ্য ভূমিকায় দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করার জন্য ব্যাপক পরিসরে পরিচয় পায়।
পাঁচ বছর ধরে টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ থাকার পর , ২০২৩ সালে দেব বিপরীতে অভিজিৎ সেনের 'প্রধান 'এর সক্রিয় চরিত্রে তাঁর চলচ্চিত্র অভিষেক হয় যা ২০২৩ সালের অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে তার অভিনয়, পর্দায় উপস্থিতি এবং সহ-শিল্পীদের সাথে তার রসায়ন দারুণ ছিলো। প্রধান সিনেমাতে তার নাম রুমি প্রধান— দীপক প্রধানের স্ত্রী। ধর্মপুরে মাস্টার মশাইয়ের বাড়িতে তারা ভাড়া থাকে। পুলিশ হিসাবে দীপক যেমন সৎ সাহসী তেমনি প্রত্যুৎপন্নমতি এবং সমাহিত মানসিকতার অধিকারী।
প্রধান সিনেমাটি খুবই ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যায়— ইমোশনাল করে তোলার মতো দৃশ্য অনেক। যে মাস্টার মশাইকে চোরের অপবাদ নিয়ে স্কুল থেকে বের হয়ে আসতে হয় সেই মাস্টার মশাই হয়ে উঠেন ধর্মপুর পঞ্চায়েত প্রধান। চরিত্র খুব স্লো মোশনে পরিকল্পিত মিশনে কাহিনির ভেতরে ঢুকে পড়ে— প্রধান সিনেমার খুবই ভালো রকমের স্বার্থকতা ঠিক এখানেই।
সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়— দীপকের ঠাকুরমা— তার উপস্থিতি স্কিনে খুবই অল্প— যেনো তরকারিতে লবন। তার সংলাপ বাংলার সংস্কৃতি ধারার বাহক— এবং জেনারেশন গতির প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রধান সিনেমার সবচেয়ে বড় দিক পুলিশের ভূমিকা— পুলিশ তার প্রতিজ্ঞার মতো সৎ ও সেবামুখী হলে যেকোনো সমাজের অপরাধ জিরো লেভেলে নেমে আসবে তা কিন্তু আমরা এই সিনেমা প্রবাহে দেখতে পাই— অর্থাৎ অপরাধ দূর করতে জনগণ পুলিশ নিয়োগ করে, অপরাধী বা অপরাধের অংশ হতে নয়। রাজনীতি শাখাপ্রশাখার নরম গরম চাপে পুলিশের সততা রক্ষা করার কাজটি কত কঠিন তা কিন্তু প্রধান সিনেমা আমাদেরকে সুন্দর করে দেখাতে সক্ষম হয়েছে।
সোহম চক্রবর্তী— প্রধান সিনেমায় তার নাম বিবেক। বিবেক শেষ পর্যন্ত পনেরো বছর ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকা জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের গবাদি গুন্ডা বাহিনির হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
এককথায় প্রধান সিনেমাটি ভালোর ভেতর আলো— আলোর ভেতর বাঙালি সমাজের আয়না বা প্রতিবিম্ব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন