মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫

ত্যাগানন্দ


আমার জন্যে প্রথম শাড়ি পরেছিলে যখন 

আমার মনে তখন পাঞ্জাবি ইদ 

তোমার শরীরে নামায পরে পালন করি ইদ উল ফিতর 

একবার ডুবে যাই আমি 

একেবারে ডুবে যাই আমি তোমার রক্তের ভেতর 

শাদা শাদা রক্তের ভেতর প্রেমের আযান 

রক্তনদী পারি দিয়ে চুপ করে বসে থাকি 

জলের শব্দে দিন আসে না 

ঢেউ উঠে না স্থলে 

কামের ঢেউয়ে প্রেম ভাঙে 

ইলমুল ইয়াকিন

আইনুল ইয়াকিন

হাক্কুল ইয়াকিন— একবার বুক দেখায় 

                          একবার পীঠ দেখায় 

আমার হৃদয়ে বয়ে যাওয়া মরুভূমির গাঙে 

তোমার ভরা গাঙে ভোগের তুফান 

আমার মনে তখন ইদ উল আযহা

নিজের ভেতরে 

নিজের সাথে 

নিজেরে দিয়েছি প্রভুর নামে কোরবান

রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫

ট্রেন নিয়ে ভাবনা

 আমরা যখন ট্রেনে চড়ি, যাত্রাপথের সময়টা অনেকেই কাটাই মোবাইল স্ক্রলে, আলাপচারিতায়, কিংবা নিছক অবসর কাটিয়ে— কিন্তু এই সময়টাই হতে পারে পাঠচর্চা আর মননের নতুন জানালা। কল্পনা করুন, প্রতিটি ট্রেনে যদি থাকে একটি ছোট্ট লাইব্রেরি! বইয়ের সুবাস, শান্ত পরিবেশ, আর কিছু জ্ঞানতৃষ্ণু সহযাত্রী — একটা ট্রেনভ্রমণ তখন হয়ে উঠবে একেবারে ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা।


যাত্রা মানেই যেন শুধু গন্তব্য নয় — নতুন জ্ঞান, নতুন ভাবনার শুরু।


তবে শুধু উদ্যোগ নিলেই হবে না, রক্ষা করতে হবে এর মৌলিক উদ্দেশ্যকে। যেমন আজকের ক্যান্টিন বা ক্যাটারিং সার্ভিসে দেখা যায় — দালালচক্রের দখলে যায় সব, সাধারণ যাত্রীরা বঞ্চিত থাকেন। তাই প্রস্তাব, লাইব্রেরি ও ক্যান্টিন ব্যবহারের অধিকার থাকবে শুধু টিকিটধারী যাত্রীদের জন্য— টিকিট ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ডিজিটাল এনফোর্সমেন্ট ব্যবস্থা থাকলে এই নিয়ম বাস্তবায়ন কঠিন হবে না।


শুধু ট্রেন নয়, প্রতিটি বড় রেলস্টেশনেও থাকতে পারে একটি ঘর — লাইব্রেরি, একটি স্বাস্থ্যকর কফিশপ বা চা স্টল, আর প্রার্থনার জায়গা যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে "জ্ঞানঘর" — যেখানে মানুষ জানতে পারবে কেন প্রার্থনা করে, কার জন্য করে, কীভাবে চিন্তা ও অনুভব গভীর হয়— আধুনিক সময় কেমন করে বিজ্ঞানের উপর ভর করে আছে। 


শুধু অবকাঠামো নয়, আমাদের দরকার চিন্তার পরিবর্তন। লাইব্রেরি গড়ে তোলার সাথে সাথে আমাদের গড়তে হবে পাঠকও।


কল্পনা করুন, আপনি বসে আছেন ট্রেনের মাঝামাঝি ছোট্ট এক সবুজ বাগানে— চারপাশে পাতার ফিসফাস, হাওয়ার মৃদু দোলা, হাতে ধরা এক কাপ গরম কফি বা লাল চা — আর হৃদয়ের গভীরে শুরু হয় এক নিঃশব্দ ভাবনা— এই বাগানেই আছে ছোট্ট একটি কফিশপ, যেখানে প্রতিটি চুমুক মানে আত্মার আরাম।


কিছু দূরে, ট্রেনের বুকে একটি সাউন্ডপ্রুফ থিয়েটার রুম— যেখানে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ সিনেমা টিকিট কেটে দেখা যায় যাত্রাকালে । শঙ্খচিলের কান্না, পদ্মার ডাক, কিংবা একালের কোনো সাহসী গল্প — বড়পর্দায় জীবন্ত।


প্রত্যেক বগিতে রয়েছে একটি ডিজিটাল স্ক্রিন, প্রতি এক ঘণ্টা পর পর ভেসে ওঠে — বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, নদী, পাহাড়, শেকড় আর গান। গল্পের মতো করে বলা হয়, “এই যে তুমি যাচ্ছো — জানো কি এই পথের পাশেই জন্মেছিল এক কবি?” “এই স্টেশনেই একদিন নেমেছিলেন এক বীর যোদ্ধা!”


শিশু, কিশোর, প্রবাসী, বৃদ্ধ — সবার চোখে নতুন আলো।

আর ট্রেনের এক কোণে  একটি প্রার্থনালয়— একেবারে পরিচ্ছন্ন, তেলাপোকার বাসাবিহীন। তার পাশেই একটি ডিসপেনসারি, আছে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার, একজন সেবাপরায়ণ নার্স — যেন যাত্রাপথে হঠাৎ অসুস্থতাও পায় মমতার ছোঁয়া।


বাংলাদেশ রেলওয়ে, আমরা চাই এমন এক ট্রেন — যেখানে শুধু গন্তব্য নয়, থাকে চিন্তা, পাঠ, সিনেমা, সেবা ও সংস্কৃতির গভীর ছায়া।

আমরা চাই, এই স্বপ্নট্রেন বাস্তব হোক।

চলন্ত বাংলাদেশ হোক সৌন্দর্যে পূর্ণ এক যাত্রা।


এটা কেবলই স্বপ্ন নয় — এটা হতে পারে বাস্তব, যদি আমরা সকলে চাই।


আরিনা পেমি — এক পাহাড়ি মেয়ে, চাকমা বাবার আর বাঙালি মায়ের মেয়ে। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, কিন্তু মন পড়ে থাকে পাহাড়েই। এবার সে ফিরছে নিজের শিকড়ে — "স্বপ্নট্রেন"-এ চড়ে।


ট্রেনটা যখন চট্টগ্রাম পেরিয়ে পাহাড়ে ঢুকে পড়ে, জানালার কাঁচে মুখ রাখে আরিনা। তার চোখে তখন আলোয় ধোয়া সবুজ পাহাড়, যেন মায়ের আঁচলের মতো কোমল। জুমের ক্ষেতগুলো নিচে ঝুঁকে আছে, যেন পাহাড় নিজেই প্রণাম করছে যাত্রীদের।


ট্রেনের ভেতরের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে এক কাব্যিক ভাষ্য:

"এই যে ডান পাশে যে গ্রামটা দেখছেন, ওখানে জন্মেছিলেন রাখাইন বয়নশিল্পী মামা থোয়াই। তাঁর হাতে তৈরি একখানা গামছা আজও জাদুঘরে রক্ষিত..."


আরিনা হঠাৎ চমকে ওঠে। সে তো এই গল্প জানত না! নিজের মাটির এমন ইতিহাস সে কখনও জানেনি — শহরের পাঠ্যপুস্তকেও না, লোকমুখেও না।


ট্রেনের মাঝখানে ছোট্ট সেই বাগান আর কফিশপে বসে সে এক কাপ লাল চা খায়। পাশে বসে থাকা বৃদ্ধ এক মারমা দাদু তাকে বলেন বান্দরবানের লোকগান, আর ট্রেনের থিয়েটার রুমে শুরু হয় "মনপুরা" সিনেমা। কাচের ভেতর জ্বলজ্বলে পর্দা, আর বাইরের প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম সে দৃশ্যপট — আরিনা কখনো কেঁদে ফেলে, কখনো হেসে ওঠে।


একটা ছোট ছেলেকে হঠাৎ পায়ে ব্যথা পেয়ে কাঁদতে দেখে সে নিয়ে যায় ডিসপেনসারিতে, যেখানে সেবিকা তাকে স্নেহভরে সেবা দেন।

আরিনা ভাবে,

"এটা কি সত্যি? আমি কি স্বপ্নে আছি?"


রাঙামাটি পেরিয়ে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান হয়ে যখন ট্রেন কক্সবাজারে এসে দাঁড়ায়, তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছিল সমুদ্রের মুখে।

আরিনা ট্রেন থেকে নামবার আগে জানালায় একবার চোখ রাখে — পাহাড়ের সেই কুয়াশায় ঢাকা মুখ যেন তাকে বিদায় জানায়।


তার চোখে জল, কিন্তু ঠোঁটে হাসি।

এই ট্রেন তার কাছে শুধু একটা বাহন নয় —

এ এক চলন্ত পাঠশালা, এক বাগান, এক সিনেমা হল, এক ছোট্ট বাংলাদেশ।

আর সে বুঝে যায়, "বাংলাদেশকে জানার সবচেয়ে সুন্দর পথ হতে পারে এমনই এক ট্রেনজার্নি।"



দরবেশ রাজা মহান

 দরবেশ— মহারাজ, আপনার রাজ্যে আমি যা ইচ্ছে বলি, ভয় লাগে না।


মহারাজ (মৃদু হাসিতে)— এটাই তো চেয়েছি, কেউ যেন আমার নয়—সত্য বলতে ভয় না পায়।  


দরবারি— কিন্তু যদি কেউ ভুল বলে?


মহারাজ— তবে সত্য দিয়ে তাকে ভুল দেখাতে হবে, শাস্তি দিয়ে নয়।

দরবারি— তাহলে কি রাজ্যে  শাস্তি দেয়ার প্রক্রিয়া থাকবে না।

 

প্রজ্ঞা— রাজার রাজ্যে কেউ সত্য কথা বলতে ভয় পায় না, এটাই রাজার সবচেয়ে বড় জয়। শাস্তি হলে সবার আগে রাজার হবে তারপর প্রজার! 


দরবারি— তাহলে যারা অন্যায় করে তাদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত হবে? 


প্রজ্ঞা— কেউ অন্যায় করে না: তাকে অন্যায়কারী বানানো হয়!


মহারাজা— আমার একটি কথা মনোযোগ দিয়ে শোন—Lies grow stronger in the shadow of fear— Easy for a King to choose to light the way with truth.


(দরবারে সবাই করতালি দেয়, মঞ্চে আলো ধীরে নিভে আসে)

পলিথিন মুখ

 লোকটি ফেইসবুকে পোস্ট দিচ্ছে, আল্লাহ সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী— কিছুক্ষণ পর লোকটি পরিকল্পনা করছে কেমন করে বোনদেরকে সম্পত্তির ন্যায্য বন্টন থেকে বঞ্চিত করা যায়! 


লোকটা ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে,আল্লাহ সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী, আর মনে মনে কল্পনা বানাচ্ছে কেমন করে ভালো মানুষের পোশাক পরে আরও আরও জালিয়াতি দুর্নীতি করে প্রচুর টাকাপয়সার মালিক হওয়া যায়!! 


লোকটা ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে, জনগনই সকল ক্ষমতার একমাত্র উৎস— আর তলে তলে জনগণকে বিক্রি করে টাকা নিয়ে যাচ্ছে উৎস থেকে নিজের ব্যক্তিগত উৎসবে!


আসুন, আমরা ইফতার পার্টির আয়োজন করি ফায়েবস্টার হোটেলে এবং গরীব মানুষের জন্যে দোয়া ঢেলে দেই এবং জুড়ে জুড়ে জোড়ায় জোড়ায় সমকন্ঠে বলি— এদেশের মেহনতি মানুষের জয় ✌ হোক এবং ফাইবস্টার মানসিকতার ফাক দিয়ে কোনো শ্রমজীবী মানুষের হাড়ভাঙা মেহনত করা দেখে আরবি ভাষায় বলি— আল্লাহুম্মা বারিক লাহু! 


লোকটা বক্তব্য শুরু করার আগে বলছে, ক্ষমতা দেয়ার মালিক আল্লাহ এবং ক্ষমতা নেয়ার মালিক আল্লাহ। আর তলে তলে  ক্ষমতালোভীদের সাথে হাত মেলাচ্ছে পাছে তার পাছা দিয়া ক্ষমতা বের হয়ে যায় এই ভয়ে! 


আর একজন অধম মানুষ, আপনাদের ভাষায় বোকা কিংবা লাস্টবেঞ্চের ফাস্টে বসা মানুষটি কেবলই বলে যাচ্ছে— লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনায্-জ্বালিমীন!

মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

রসবতী

 



রসবতী রসকন্যা নদীমাতৃক দেশে

তার জলে মাছ আমি পাখি তার কেশে

বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০২৫

এক হাতে তালি বাজে

 প্রত্যেক ইবাদত ভাই ভাই। প্রত্যেক ইবাদত জলের মতো যৌথকোষ। ইবাদত মানে নিজের প্রতি সচেতন থাকা। জলের কোনো অংশে ঢিল মারলে যেমন জলকোষে ঢেউ লাগে তেমনি কোনো ইবাদতে মনোনিবেশ করলে ইবাদতকোষে ঢেউ লাগে।


সালাতে সিয়াম, যাকাত, হজ্ব রয়েছে। সালাত বান্দার সাথে আল্লার সম্পর্ক নির্মাণ করে যা হজ্বের নামান্তর, সালাতে শরীরের যাকাত দেয়া হয়ে যায়, সালাত একপ্রকার সিয়াম কারন সরিষা পরিমান খাবারও সালাতরত অবস্থায় খাওয়া যায় না।


ইসলামে সালাত কেন?


সালাতের উদ্দেশ্য মানুষকে মানুষমুখী করা, উগ্রতা থেকে মানসিকতাকে হেফাজত করা। সালাতের মাধ্যমে আসমানের আল্লাহ মানুষের চিন্তায় নেমে আসে। দুনিয়ামুখী মানুষ আল্লাহমুখী হওয়ার বর্নময় প্রশিক্ষণ লাভ করে। 


কুরানে আছে তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করেছি, তোমাদের আগেও ফরজ করা হয়েছিল যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। 


আলোচ্য বিষয় যেন তাকওয়া অর্জন করতে পারো। মানে সিয়ামের উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন। 


তাকওয়া হল মানসিকতার স্তর। মানসিকতা মানুষমুখী হলে আইনের শাষনের প্রয়োজন নেই যেখানে প্রত্যেক মানুষ প্রত্যেক মানুষের কল্যানের চিন্তা করবে। আর ইবাদতের অর্থই হল মানসিক স্টেশন তৈরি করা, মানুষকে আরও আরও মানবিক করে তুলা— পাঞ্জাবি টুপি বোরখা ধর্ম না, ধর্ম এক বোধগত চর্চার নাম, মতবাদগত আচরনের নাম। আমাদের দেহের ভেতরে আরেকটি দেহ রয়েছে যে কেবল ভোগ করতে চায় অর্থাৎ ভোগে তার আনন্দ। দেহের ভেতরে যে দেহ আছে সেই দেহের ভেতরে আরও আরও দেহ আছে— যাদের কাজ একেবারে আলাদা। আলাদা কাজের সন্ধান পেতে গেলে নিজের ইচ্ছাকে আলাদা উপায়ে সাজাতে হয়— ভোগের আনন্দে নিজেকে ব্যস্ত না রেখে, ত্যাগের ভেতরে যে ভোগ আছে সেই আনন্দে নিজেকে ব্যস্ত করতে হবে।


আরবি ভাষায় যখন কোনো কিছুর ইচ্ছার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক বোঝানো হয়, তখন "شاء" শব্দটি ব্যবহার করা হয়।"شاء"ক্রিয়াটি নিজের মধ্যে সম্পূর্ণ ইচ্ছা ও ক্ষমতার প্রকাশ বহন করে। কোনো মানুষ যখন বলছে ইনশাআল্লাহ (إن شاء الله) তখন তার নিজের ইচ্ছার আর মূল্য থাকে না। কারন إن (ইন্) শব্দটা شرطية جملة (shartiya jumlah, অর্থাৎ শর্তসূচক বাক্য)— ইংরেজিতে বলা হয় conditional particle!     বৃষ্টি আসলে আমি বের হবো। বিষয়টা ক্লিয়ার বৃষ্টি না আসলে আমি বের হবো না। 'আল্লাহ যদি চান বা ইচ্ছা করেন' এই কথার মধ্যে দিয়ে বিষয়টি ক্লিয়ার যে বান্দার সামগ্রিক জীবন বা ক্রিয়া আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। একজন মুসলমান নিজেকে যখন সম্পূর্ণ উপায়ে আল্লাহর নিকট সপে দিয়েছে তখন তার ব্যক্তিগত কষ্ট বা আনন্দ থাকার কথা না। আনন্দ বা কষ্টের উপরের স্তরের নাম প্রশান্তি যাকে আরবিতে জান্নাত বলে।  তাহলে জাহান্নামকে  বাংলায় কি বলে? দ্বিধা— জাহান্নামের বাংলা দ্বিধা, ইংরেজিতে বললে কনফিউজড!  


I can go there by the grace of almighty Allah। আপনি যখন আল্লাহকে Almighty বলবেন তখন I can ব্যবহার করতে পারবেন না। কারন can শব্দটি কেবল কর্তার নিজস্ব ক্ষমতা প্রকাশ করে। আপনি যখন by the grace শব্দগুচ্ছের ব্যবহার করবেন তখন আপনি CAN নামক মডেল ভার্বের ব্যবহার করতে পারবেন না। কারন CAN শব্দটি কেবল সাবজেক্টের (I) ক্ষমতা প্রকাশ করে। I can go there on my own/ I can get there myself / I can go there myself= Sounds like I am feeling independent about it!  ঠিক তেমনি "شاء" ক্রিয়াটি কেবল আল্লাহর ক্ষমতা প্রকাশ করে, আপনার অল্প থেকে অল্প পরিমান ক্ষমতাও প্রকাশ করে না। তাই ইনশাআল্লাহ" (إن شاء الله) আরবি শব্দগুচ্ছটি একমাত্র আল্লাহর ক্ষমতাকে প্রকাশ করে, কর্তা এখানে একমাত্র আল্লাহ— যে ব্যক্তি এই শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করছেন তিনি একেবারে নাথিং। ইনশাআল্লাহ" (إن شاء الله) শব্দগুচ্ছে যে ক্রিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে আরবি ব্যাকরনে তাকে বলে فعل ماضٍ بمعنى المستقبل ( ফে'লু মাদিন বিমা'নাল মুস্তাকবাল) মানে ভবিষ্যত বোঝাতে ব্যবহৃত অতীতকালের ক্রিয়া। এটি কেন করা হয়? এটি করা হয় কোনো কাজের নিশ্চয়তা বোঝাতে— কোনো কাজের সুপ্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা বোঝাতে। 


তাই "শাআ" (চাইলো) বলা হয়, যেন আল্লাহর ইচ্ছা অব্যর্থ এবং নিশ্চিত। তাই ইনশাআল্লাহ" (إن شاء الله) বাংলা অনুবাদ আল্লাভরসা বলা যাবে না। ধরেন— নদী পার হবেন। আপনি নৌকার উপর ভরসা করলেন। মাঝি কিন্তু আপনি নাও হতে পারেন। ইনশাআল্লাহ" (إن شاء الله)  শব্দগুচ্ছের মানে নৌকাও আল্লাহ, মাঝিও আল্লাহ, আপনি কেবল বসে থাকবেন। তেমনি "ما" + "شاء" + "الله"(  মা শা'আল্লাহ)— একটি সম্পূর্ণ বাক্য—  এখানেও ব্যক্তির ইচ্ছার কোনো গুরুত্ব বহন করে না— আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন বা আল্লাহ যা চেয়েছেন তাই হয়েছে। তাই ইবাদত মানে হলো নিজের সীমানা আবিষ্কার করা এবং নিজের সীমানায় আল্লাহর প্রভাব উপলব্ধি করতে পারার এক মানসিক প্রক্রিয়া— যার জন্যে ব্যক্তির প্রয়োজন হয় তাসলিম (تسليم) – আত্মসমর্পণ: আত্মাকে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর হাতে সমর্পণ করা। মাহাব্বা (محبة) – ভালোবাসা:

আল্লাহর প্রতি নিখুঁত ভালোবাসার প্রকাশ। খশু‘ ও খুযু‘ (خشوع و خضوع) – নম্রতা ও বিনয়: অন্তরের গভীর থেকে আসা ভয়, শ্রদ্ধা ও বিনয়ের অনুভব। ইখলাস (إخلاص) – নিঃস্বার্থতা: একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা— এমন মানসিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যখন একজন ব্যক্তি তার প্রভুর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবে তখন তার ব্যক্তিগত বিষয়াদি সাময়িক থাকবে না— সামগ্রিক হয়ে যাবে। মানুষের মানসিকতাকে সাময়িক থেকে সামগ্রিক দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ইবাদতের আলোচনা আমাদের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে— 

প্রভাত আসে

আমার সকাল তোমার আলোয় শুরু হোক

রাত নামে

আমার ক্লান্তি তোমার করুণায় ঢেকে যাক

ইবাদত আমার আত্মার নিশ্বাস

কালোর ভেতর আলোর ছায়া 

ছায়ার ভেতর মায়া হয়ে করছো তুমি বাস

শনিবার, ৩ মে, ২০২৫

প্রজ্ঞা জ্ঞান ইবাদত

 প্রজ্ঞা— কিছু বলতে চাও?

জ্ঞান— বহুদিন ধরে বলতে চাচ্ছি কিন্তু বলতে পারতেছিনা। 

প্রজ্ঞা— সংশয় রেখো না— বলে ফেলো। 

জ্ঞান— আপনাকে আমার খুব প্রয়োজন। 

প্রজ্ঞা— আচ্ছা। খুব ভালো কথা। তোমার জন্যে কি করতে পারি?

জ্ঞান— আমার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গ্যাছে, আপনি আমার মাথায় জল দিয়ে দেন। 

প্রজ্ঞা— তোমাকে যখন খাওয়ার পর দাওয়া নিতে বললাম তখন তুমি আমার কথা শুনলে না, যখন তোমাকে রোদে ঘুরতে নিষেধ করলাম তখন আমার কথা শুনলে না, যখন তোমাকে রাতে জাগতে নিষেধ করলাম তখন আমার কথা শুনলে না, এখন তোমার কথা আমাকে শুনতে হবে!? 

জ্ঞান— হবে। কারন এখন আপনাকে আমার খুব প্রয়োজন।

প্রজ্ঞা— তোমার মাথায় জল আমি অবশ্যই দিবো কিন্তু সেই জল তোমার তাপমাত্রা কমাতে পারবে কিনা আমি জানি না। 

জ্ঞান— আপনার কথাটা কেমন যেনো লাগলো! 

প্রজ্ঞা— ঠিক ধরেছো। প্রয়োজনের শেকড় কোথায় জানো? 

জ্ঞান— না। 

প্রজ্ঞা— প্রয়োজনের শেকড়ের নাম সম্পর্ক। তোমার সম্পর্ক রোগের সাথে, রোদের সাথে, রাতজাগার সাথে— আমার সাথে না। তাই আমার দায়িত্ববোধ তোমাকে স্পর্শ করবে, আমার হৃদয় তোমার সাথে জড়িত হবে না। মনে রেখো হে মহামান্য জ্ঞান, প্রয়োজন শব্দটা পারস্পরিক এবং গোছানো শব্দ— এটি সাজানো শব্দ নয়। শেকড় যখন বাতাসে ভেসে বেড়ায় তখন গাছের সাথে মাটির যে প্রয়োজন, মাটির সাথে গাছের যে প্রয়োজন তা কেবল বেলুন হয়ে যায়— উড়ে আর উড়ে, ঘুরে আর ঘুরে।