মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫

তারপর গাধা

গাধাকে সিংহাসনে বসতে দিলাম। 

— তারপর 

গাধা সিংহাসনকে পীঠে নিলো। 

— তারপর 

সিংহাসনকে পীঠে নিয়ে গাধা হাটতে লাগলো। 

— তারপর 

সিংহাসনকে পীঠে নিয়ে হাটতে হাটতে গাধা দেশের বাইরে চলে গেলো। 

—তারপর 

সিংহাসনকে গাধা দেশের বাইরে রেখে আসলো। 

—তারপর 

তারপর গাধা আরেকটি বোঝাভার খুজতে লাগলো।

সত্য বলতে সত্যিই কিছু আছে!?

 সিনেমা বিনোদনের মাধ্যম— বিনোদনের মাধ্যমে সিনেমা  সমাজ, বিচার, নীতি ও মানবমনের জটিলতা অন্বেষণের এক শক্তিশালী রূপ— ব্যতিক্রমী এবং গভীর চিন্তনমূলক চলচ্চিত্র সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত “সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই”। ২০২৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই বাংলা চলচ্চিত্রটি একটি আইনি থ্রিলার, যা মূলত আমেরিকান ক্লাসিক 12 Angry Men এবং তার হিন্দি রূপান্তর Ek Ruka Hua Faisla-র আধুনিক ও প্রাসঙ্গিক বাংলা পুনরায় নির্মাণ।


চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রে রয়েছে একটি বিচারপ্রক্রিয়া, যেখানে বারো জন জুরি সদস্য এক তরুণের বিরুদ্ধে খুনের মামলায় রায় দিতে বসেন। শুরুতে সবাই ছেলেটিকে দোষী বলে মনে করলেও, একজন সদস্য যুক্তির মাধ্যমে অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে থাকেন। এই ধাপে ধাপে যুক্তি, তর্ক ও মানবিক বিবেচনার উত্তরণই চলচ্চিত্রটির আসল সৌন্দর্য। ঘটনাটি ঘটতে থাকে স্বপ্নের মাধ্যমে। এক ঘুমে বিচার শেষ— তাও মাতাল ঘুম। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় অভিনয় করেছেন ব্রজেশ্বর দত্ত চরিত্রে—তিনি প্রধান বিচারপতি— তার বাড়িতে একটি পার্টির সময় একটি খুনের মামলার আলোচনা শুরু হয়। তারই ঘুমেই বিচারের কাজটা চলে।   


"সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই" নামটিই চলচ্চিত্রটির দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দেয়। এখানে 'সত্য' আপেক্ষিক—যা আমরা চোখে দেখি, তা হয়তো পূর্ণ সত্য নয়। প্রত্যেক মানুষের অভিজ্ঞতা, সামাজিক অবস্থান ও মানসিক অবস্থা ‘সত্য’কে ভিন্নভাবে উপলব্ধি করে। এই চলচ্চিত্র আমাদের শেখায়, কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে নিরপেক্ষ ভাবনায় এবং সহানুভূতিশীল দৃষ্টিতে বিষয়টি দেখা জরুরি।


চলচ্চিত্রটির সবচেয়ে বড় শক্তি এর অভিনয়— অভিনয়টা চলে থিয়েটার মোডে— সংলাপের আলাপ এখানে মুখ্যত আলোচনার দাবি রাখে।


কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, অর্জুন চক্রবর্তীসহ প্রথিতযশা শিল্পীদের অভিনয়ে প্রত্যেক জুরি সদস্য এক একটি জীবন্ত চরিত্র হয়ে উঠেছে। সংলাপভিত্তিক দৃশ্যগুলিতে তাদের চোখের চাহনি, কণ্ঠস্বরে ওঠানামা, ছোট ছোট অঙ্গভঙ্গিতে ফুটে উঠেছে চরিত্রের গভীরতা।

সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় একঘেয়ে সেটিংও দর্শককে বেঁধে রাখে। একই ঘরে পুরো সিনেমা চললেও সংলাপ ও চরিত্রের মধ্যেকার উত্তেজনা কখনোই ক্লান্তি এনে দেয় না। চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা এবং আবহসংগীত অত্যন্ত সংযত ও অর্থবহ। সিনেমার সেট বানানো হয়েছে ছয়টি জায়গায়, ঠিক সিনেমার সেট নয়— বলতে গেলে আলোচনার সেট— রুমে, মাঠে, মাঠে মানে গল্ফ ⛳ মাঠে, সিনেমার হলে, ওভারব্রিজে, সাগরে এবং শেষে জঙ্গলে। জঙ্গল মানে মঙ্গল। জঙ্গলে বুঝতে পারে প্রত্যেকেই এই আলোচনাটা শুরু হওয়ার দরকার ছিলো সাতচল্লিশের আগে, তাহলে হিসাবটা অন্যরকম হতে পারতো। 


আজকের বিশ্বে যেখানে দ্রুত বিচার, গণমাধ্যমের চাপ এবং পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি বিচারব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে, সেখানে এই চলচ্চিত্রটি এক সতর্কবার্তা। আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিটি অভিযুক্ত ব্যক্তির পেছনে একটি জীবন, একটি গল্প থাকে—আর সেই গল্প শোনার দায় আমাদের।

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় – চরিত্রের নাম সত্য, যিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি অভিযুক্তকে নির্দোষ মনে করেন এবং বাকিদের মত পরিবর্তনে প্রভাব ফেলেন। সত্যের এন্ট্রিতেই একধরনের চমক খেলে যায় মনে— তার কস্টিউম এতো সুন্দর লাগছিলো, বিশেষ করে চোখের চশমাটা— মনে হলো পরমব্রত নিজেকে যেনো খুজে পেলো। 


"সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই" একটি সিনেমা এবং সিনেমার আদলে একটি  আয়না যা সমাজের বিচারব্যবস্থা, ব্যক্তিগত পক্ষপাত এবং নৈতিক দ্বন্দ্বগুলিকে প্রকাশ্যে আনে। এটি এমন একটি চলচ্চিত্র যা শেষ হওয়ার পরও দর্শকের মনে প্রশ্ন তোলে, আলোচনার জন্ম দেয় এবং আত্মবিশ্লেষণের সুযোগ তৈরি করে। এই চলচ্চিত্রটি শুধু ভাল সিনেমা প্রেমীদের জন্য নয়, বরং শিক্ষার্থী, বিচারপতি, আইনজীবী, শিক্ষকসহ সকল সচেতন মানুষের জন্যে— কারণ এখানে প্রশ্ন করা হয়েছে, “আমরা যা সত্য ভাবি, তা আসলেই কতটা সত্য?”


"সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই" সিনেমাটি যদি 12 Angry Men এবং Ek Ruka Hua Faisla–র বাংলা রূপান্তর হয়, তবে এটির কাহিনি ও সংলাপ কি হুবহু মিলেছে?— উত্তর হল: আংশিক মিল রয়েছে, তবে এটি নিছক অনুবাদ নয়—বরং একটি সৃজনশীল পুনরায় নির্মাণ (creative adaptation)।


তাহলে মিল কোথায়?


মূল কাঠামো ঠিক রাখা হয়েছে— বারো জন জুরি—এক তরুণের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ— প্রাথমিকভাবে সবাই ছেলেটিকে দোষী বলে ধরে নেওয়া— এবং একজন সদস্য ধাপে ধাপে সন্দেহ জাগিয়ে বাকিদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেওয়া—এই প্রেক্ষাপটটি মূল ছবির (12 Angry Men) মতোই।


কিছু গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি ও নাটকীয় মুহূর্তও মূল সিনেমার ছায়া বহন করে। যেমন—

প্রত্যক্ষদর্শীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন।

প্রমাণভিত্তিক সন্দেহের গুরুত্ব (reasonable doubt)।

সামাজিক ও মানসিক পক্ষপাত।


তাহলে এই সিনেমার পার্থক্য বা নতুনত্ব কোথায়?


বাংলার সংস্কৃতির উপযোগী করে সংলাপ রচিত হয়েছে। ব্যবহৃত শব্দ, ভঙ্গি, সামাজিক টানাপোড়েন— সবকিছুই আধুনিক কলকাতার প্রেক্ষিতে রূপান্তরিত— প্রতিটি জুরি সদস্যের পেছনে আছে ভিন্ন পেশা, শ্রেণি, এবং জীবন অভিজ্ঞতা, যা সৃজিত নিজস্ব ভঙ্গিতে পুনর্গঠন করেছেন— কিছু চরিত্রে নতুন মনস্তত্ত্ব যোগ করা হয়েছে। অনেক সংলাপ নতুনভাবে লেখা হয়েছে, যাতে বাংলা ভাষার নিজস্ব রস ও শৈলী বজায় থাকে— হুবহু অনুবাদ নয় বরং ভাবানুবাদ ও রূপান্তর ঘটেছে— সৃজিত মুখোপাধ্যায় নিজেই একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এটি Ek Ruka Hua Faisla-র ‘রিমেক’ হলেও তিনি এটি “রিমিক্স নয়, রিইমাজিনেশন” হিসেবে তৈরি করেছেন।


রিইমাজিনেশন (Reimagination) শব্দটি মূলত একটি সৃজনশীল ধারণা, যার মাধ্যমে পূর্ব-বিদ্যমান কোনো সাহিত্য, সিনেমা, নাটক বা গল্পকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন প্রেক্ষাপট, এবং নতুন ব্যাখ্যায় পুনর্গঠিত করা হয়। এটি রিমেক বা রিমিক্স থেকে ভিন্ন, কারণ এখানে কেবল গল্পটি পুনরাবৃত্ত হয় না—বরং গল্পটির অন্তর্নিহিত ভাবনা বা থিমটিকে নতুনভাবে কল্পনা করা হয়। Reimagination = পুরনো গল্প + নতুন চোখে দেখা + নতুন বাস্তবতায় রূপান্তর।


১৯৮০–৯০ দশকের দিকে এই শব্দটি জনপ্রিয় হতে শুরু করে, বিশেষ করে চলচ্চিত্র ও সাহিত্য বিশ্লেষনে—হলিউড ও ব্রিটিশ ফিল্ম থিওরিস্টরা প্রথমে “reimagining” বা “reimagination” শব্দটি ব্যবহার শুরু করেন, যখন পুরোনো ক্লাসিক চরিত্র (যেমন: শার্লক হোমস, ব্যাটম্যান, সুপারম্যান, রোমিও-জুলিয়েট ইত্যাদি) আধুনিক ভাষা, প্রেক্ষাপট ও দর্শনে ফিরে আসতে শুরু করে। তাই বলছি, Reimagination শব্দটি ভাষাবিজ্ঞান বা অভিধানের নির্দিষ্ট আবিষ্কার নয়— শিল্প ও সংস্কৃতির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বই, চলচ্চিত্র ও নাটকের জগতে জন্ম নিয়েছে এই শব্দটি। 


এই সিনেমাটি যে একটি রিইমাজিনেশন তার প্রমাণ আমরা পাই যখন দেখি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের সীমানা পেরিয়ে কোনো চরিত্র সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না ঠিক তখন। আমাদের বাঙালিরদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা জাতিগত উপলব্ধির  জায়গায় আমরা খুব গরীব এবং কৃপন।  জাস্ট কোপন বা লটারি দিয়ে এই জাতির মননে লোভ জাগ্রত করা যায়। আমাদের পার্সোনাল দ্বন্দ্ব জাতিগত দ্বন্দ্ব উস্কানিতে রাখে— আহারে আমাদের কোনো সামষ্টিক ঘৃণা বা ভালোবাসা নেই! 


"সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই" সিনেমাটির নামকরনে মনে হয় যেনো এটি একটি দার্শনিক জার্নি। সিনেমা দেখতে দেখতে মনে হতে থাকে  আলোচনাটা হালকা অতীত রাজনৈতিক, আরেকটু সামনে গিয়ে মনে হয় আলোচনাটা সামাজিক লুচিমাংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সবশেষে গিয়ে বুঝতে পারি সিনেমাটা আসলে একজন মাতালের জেগে উঠার গল্প— ঘোরগ্রস্ত বাঙালির ঘুম শেষে সকালের খবর যেনো চেতনার আলো নিয়ে এলো।  তবে একটি কথা আমাকে বলতে হবে— কাওয়ালি গানটার টাইম অব ইন্টারেস্ট দারুণ ছিলো কিন্তু ডট ডট ডট!  কিন্তু কাওয়ালি গানটি আরও সুন্দর করে উপস্থাপন করা যেতো, সেট আরও ভালোভাবে সাজানো যেতো, গান নির্বাচন আরও দারুণ হতে পারতো। কিন্তু হলো না।  


সিনেমা শুরু হচ্ছে বাতাসের শব্দ দিয়ে কিন্তু প্রথম দৃশ্যে নাস্তার টেবিল। নাস্তায় ভাত নেই,আলুর ভর্তাও নেই, লুচিকুচিও নেই— আছে ব্রেড,আছে জেলি, আছে জুসের গ্লাস। আর চরিত্রের সংলাপে গার্হস্থ আলোচনা— কলকাতার একেবারে উঁচু শ্রেনির আলাপ— বিয়ে না করা, সিনেমা নির্মাণ এবং ক্যারিয়ার, অফিস পলিটিক্স অথবা ইদুরদৌড় ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা আবার রুটি কাটে, সরি, ব্রেড— চামচ দিয়ে কেটে খায়। আর পার্টিতে হাবুল দা আসতে পারবে না— কারন তার শরীরটা মেজমেজ করতেছে। কিন্তু একজন হাবুল দার জন্যে পার্টি তো আর থেমে থাকে না। উঁচু শ্রেণির পার্টি সারাবছর লেগেই থাকে। হাবুল দা পার্টিতে না আসতে পারলেও বিচারপতির স্বপ্নে কিন্তু ঠিকই আসে— শুধু আসে না, এসে একেবারে বিচার জমিয়ে তুলে। বিচারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় একজন মাত্র ব্যক্তি— সত্য। সত্য বারবার বলতেছে একটি কথা— ছেলেটিকে গিল্টি বলার আগে আমাদের মগজ ব্যবহার করা প্রয়োজন। এবং একের পর এক প্রশ্ন তুলতে থাকে, তার প্রশ্ন উঠতে থাকে, ক্যামেরার কোলাজ শট দারুণভাবে উঠানামা করতে থাকে— বিষয়টি সুন্দর। সিনেমার কালার যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়েছে এবং চেষ্টা অপচেষ্টার অবয়ব না পেয়ে প্রচেষ্টার নাম নিয়েছে বলা যায়। সত্যিই সিনেমাটি বহুদিক থেকে আলোচনা সমালোচনা পণ্যোৎপাদন-পর্যালোচনা করার মতো একখান সিনেমা।

এই সিনেমা একটা ম্যাসেজ দিতে চেয়েছে— তা হলো স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক মানুষ থাকা জরুরি বিচারক হিসেবে। কোনো ট্রমায় আক্রান্ত মানুষ সুস্থ হওয়ার দাবি রাখে— সমাজকে সুস্থ করার দায়িত্ব নিতে পারে না— একজন ট্রমায় আক্রান্ত মানুষ তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায় বা অস্বাভাবিক আচরণ দিয়ে পৃথিবীর তাবৎ আচরণের গতিবিধি জাজ করতে থাকে— সে তখন নিজেই একটা কমেন্টবক্স যেখান থেকে একই দৃষ্টিকোন বারবার বের হতে থাকে— ফলে বহুচলক পথের মধ্যে দিয়ে স্বাভাবিক সত্য আবিষ্কার করা যায় না। তাই সিনেমাটি একটি প্রতীকধর্মী মেজাজে গল্পের শরীরে লাইট ক্যামেরা এ্যাকশন হয়ে কাজ করেছে। প্রকৃতির একটা সুন্দর দিক হলো তাকে বহুদৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করা যায়, তারপরও মনে হয় আরও আরও ব্যাখ্যা করা যায় আরও আরও দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা থেকে।  এই সিনেমাটি যাপিত জীবনের প্রকৃতিকে ধরতে পেরেছে— ফলে এই সিনেমাটিকে বহুদূর পথচলা মুসাফির মনে হচ্ছে যার ঝুলিতে লেগে আছে লেপ্টে আছে অনেক অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও সত্যজিজ্ঞাসার ছাপ।

মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫

ত্যাগানন্দ


আমার জন্যে প্রথম শাড়ি পরেছিলে যখন 

আমার মনে তখন পাঞ্জাবি ইদ 

তোমার শরীরে নামায পরে পালন করি ইদ উল ফিতর 

একবার ডুবে যাই আমি 

একেবারে ডুবে যাই আমি তোমার রক্তের ভেতর 

শাদা শাদা রক্তের ভেতর প্রেমের আযান 

রক্তনদী পারি দিয়ে চুপ করে বসে থাকি 

জলের শব্দে দিন আসে না 

ঢেউ উঠে না স্থলে 

কামের ঢেউয়ে প্রেম ভাঙে 

ইলমুল ইয়াকিন

আইনুল ইয়াকিন

হাক্কুল ইয়াকিন— একবার বুক দেখায় 

                          একবার পীঠ দেখায় 

আমার হৃদয়ে বয়ে যাওয়া মরুভূমির গাঙে 

তোমার ভরা গাঙে ভোগের তুফান 

আমার মনে তখন ইদ উল আযহা

নিজের ভেতরে 

নিজের সাথে 

নিজেরে দিয়েছি প্রভুর নামে কোরবান

রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫

ট্রেন নিয়ে ভাবনা

 আমরা যখন ট্রেনে চড়ি, যাত্রাপথের সময়টা অনেকেই কাটাই মোবাইল স্ক্রলে, আলাপচারিতায়, কিংবা নিছক অবসর কাটিয়ে— কিন্তু এই সময়টাই হতে পারে পাঠচর্চা আর মননের নতুন জানালা। কল্পনা করুন, প্রতিটি ট্রেনে যদি থাকে একটি ছোট্ট লাইব্রেরি! বইয়ের সুবাস, শান্ত পরিবেশ, আর কিছু জ্ঞানতৃষ্ণু সহযাত্রী — একটা ট্রেনভ্রমণ তখন হয়ে উঠবে একেবারে ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা।


যাত্রা মানেই যেন শুধু গন্তব্য নয় — নতুন জ্ঞান, নতুন ভাবনার শুরু।


তবে শুধু উদ্যোগ নিলেই হবে না, রক্ষা করতে হবে এর মৌলিক উদ্দেশ্যকে। যেমন আজকের ক্যান্টিন বা ক্যাটারিং সার্ভিসে দেখা যায় — দালালচক্রের দখলে যায় সব, সাধারণ যাত্রীরা বঞ্চিত থাকেন। তাই প্রস্তাব, লাইব্রেরি ও ক্যান্টিন ব্যবহারের অধিকার থাকবে শুধু টিকিটধারী যাত্রীদের জন্য— টিকিট ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ডিজিটাল এনফোর্সমেন্ট ব্যবস্থা থাকলে এই নিয়ম বাস্তবায়ন কঠিন হবে না।


শুধু ট্রেন নয়, প্রতিটি বড় রেলস্টেশনেও থাকতে পারে একটি ঘর — লাইব্রেরি, একটি স্বাস্থ্যকর কফিশপ বা চা স্টল, আর প্রার্থনার জায়গা যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে "জ্ঞানঘর" — যেখানে মানুষ জানতে পারবে কেন প্রার্থনা করে, কার জন্য করে, কীভাবে চিন্তা ও অনুভব গভীর হয়— আধুনিক সময় কেমন করে বিজ্ঞানের উপর ভর করে আছে। 


শুধু অবকাঠামো নয়, আমাদের দরকার চিন্তার পরিবর্তন। লাইব্রেরি গড়ে তোলার সাথে সাথে আমাদের গড়তে হবে পাঠকও।


কল্পনা করুন, আপনি বসে আছেন ট্রেনের মাঝামাঝি ছোট্ট এক সবুজ বাগানে— চারপাশে পাতার ফিসফাস, হাওয়ার মৃদু দোলা, হাতে ধরা এক কাপ গরম কফি বা লাল চা — আর হৃদয়ের গভীরে শুরু হয় এক নিঃশব্দ ভাবনা— এই বাগানেই আছে ছোট্ট একটি কফিশপ, যেখানে প্রতিটি চুমুক মানে আত্মার আরাম।


কিছু দূরে, ট্রেনের বুকে একটি সাউন্ডপ্রুফ থিয়েটার রুম— যেখানে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ সিনেমা টিকিট কেটে দেখা যায় যাত্রাকালে । শঙ্খচিলের কান্না, পদ্মার ডাক, কিংবা একালের কোনো সাহসী গল্প — বড়পর্দায় জীবন্ত।


প্রত্যেক বগিতে রয়েছে একটি ডিজিটাল স্ক্রিন, প্রতি এক ঘণ্টা পর পর ভেসে ওঠে — বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, নদী, পাহাড়, শেকড় আর গান। গল্পের মতো করে বলা হয়, “এই যে তুমি যাচ্ছো — জানো কি এই পথের পাশেই জন্মেছিল এক কবি?” “এই স্টেশনেই একদিন নেমেছিলেন এক বীর যোদ্ধা!”


শিশু, কিশোর, প্রবাসী, বৃদ্ধ — সবার চোখে নতুন আলো।

আর ট্রেনের এক কোণে  একটি প্রার্থনালয়— একেবারে পরিচ্ছন্ন, তেলাপোকার বাসাবিহীন। তার পাশেই একটি ডিসপেনসারি, আছে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার, একজন সেবাপরায়ণ নার্স — যেন যাত্রাপথে হঠাৎ অসুস্থতাও পায় মমতার ছোঁয়া।


বাংলাদেশ রেলওয়ে, আমরা চাই এমন এক ট্রেন — যেখানে শুধু গন্তব্য নয়, থাকে চিন্তা, পাঠ, সিনেমা, সেবা ও সংস্কৃতির গভীর ছায়া।

আমরা চাই, এই স্বপ্নট্রেন বাস্তব হোক।

চলন্ত বাংলাদেশ হোক সৌন্দর্যে পূর্ণ এক যাত্রা।


এটা কেবলই স্বপ্ন নয় — এটা হতে পারে বাস্তব, যদি আমরা সকলে চাই।


আরিনা পেমি — এক পাহাড়ি মেয়ে, চাকমা বাবার আর বাঙালি মায়ের মেয়ে। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, কিন্তু মন পড়ে থাকে পাহাড়েই। এবার সে ফিরছে নিজের শিকড়ে — "স্বপ্নট্রেন"-এ চড়ে।


ট্রেনটা যখন চট্টগ্রাম পেরিয়ে পাহাড়ে ঢুকে পড়ে, জানালার কাঁচে মুখ রাখে আরিনা। তার চোখে তখন আলোয় ধোয়া সবুজ পাহাড়, যেন মায়ের আঁচলের মতো কোমল। জুমের ক্ষেতগুলো নিচে ঝুঁকে আছে, যেন পাহাড় নিজেই প্রণাম করছে যাত্রীদের।


ট্রেনের ভেতরের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে এক কাব্যিক ভাষ্য:

"এই যে ডান পাশে যে গ্রামটা দেখছেন, ওখানে জন্মেছিলেন রাখাইন বয়নশিল্পী মামা থোয়াই। তাঁর হাতে তৈরি একখানা গামছা আজও জাদুঘরে রক্ষিত..."


আরিনা হঠাৎ চমকে ওঠে। সে তো এই গল্প জানত না! নিজের মাটির এমন ইতিহাস সে কখনও জানেনি — শহরের পাঠ্যপুস্তকেও না, লোকমুখেও না।


ট্রেনের মাঝখানে ছোট্ট সেই বাগান আর কফিশপে বসে সে এক কাপ লাল চা খায়। পাশে বসে থাকা বৃদ্ধ এক মারমা দাদু তাকে বলেন বান্দরবানের লোকগান, আর ট্রেনের থিয়েটার রুমে শুরু হয় "মনপুরা" সিনেমা। কাচের ভেতর জ্বলজ্বলে পর্দা, আর বাইরের প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম সে দৃশ্যপট — আরিনা কখনো কেঁদে ফেলে, কখনো হেসে ওঠে।


একটা ছোট ছেলেকে হঠাৎ পায়ে ব্যথা পেয়ে কাঁদতে দেখে সে নিয়ে যায় ডিসপেনসারিতে, যেখানে সেবিকা তাকে স্নেহভরে সেবা দেন।

আরিনা ভাবে,

"এটা কি সত্যি? আমি কি স্বপ্নে আছি?"


রাঙামাটি পেরিয়ে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান হয়ে যখন ট্রেন কক্সবাজারে এসে দাঁড়ায়, তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছিল সমুদ্রের মুখে।

আরিনা ট্রেন থেকে নামবার আগে জানালায় একবার চোখ রাখে — পাহাড়ের সেই কুয়াশায় ঢাকা মুখ যেন তাকে বিদায় জানায়।


তার চোখে জল, কিন্তু ঠোঁটে হাসি।

এই ট্রেন তার কাছে শুধু একটা বাহন নয় —

এ এক চলন্ত পাঠশালা, এক বাগান, এক সিনেমা হল, এক ছোট্ট বাংলাদেশ।

আর সে বুঝে যায়, "বাংলাদেশকে জানার সবচেয়ে সুন্দর পথ হতে পারে এমনই এক ট্রেনজার্নি।"



দরবেশ রাজা মহান

 দরবেশ— মহারাজ, আপনার রাজ্যে আমি যা ইচ্ছে বলি, ভয় লাগে না।


মহারাজ (মৃদু হাসিতে)— এটাই তো চেয়েছি, কেউ যেন আমার নয়—সত্য বলতে ভয় না পায়।  


দরবারি— কিন্তু যদি কেউ ভুল বলে?


মহারাজ— তবে সত্য দিয়ে তাকে ভুল দেখাতে হবে, শাস্তি দিয়ে নয়।

দরবারি— তাহলে কি রাজ্যে  শাস্তি দেয়ার প্রক্রিয়া থাকবে না।

 

প্রজ্ঞা— রাজার রাজ্যে কেউ সত্য কথা বলতে ভয় পায় না, এটাই রাজার সবচেয়ে বড় জয়। শাস্তি হলে সবার আগে রাজার হবে তারপর প্রজার! 


দরবারি— তাহলে যারা অন্যায় করে তাদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত হবে? 


প্রজ্ঞা— কেউ অন্যায় করে না: তাকে অন্যায়কারী বানানো হয়!


মহারাজা— আমার একটি কথা মনোযোগ দিয়ে শোন—Lies grow stronger in the shadow of fear— Easy for a King to choose to light the way with truth.


(দরবারে সবাই করতালি দেয়, মঞ্চে আলো ধীরে নিভে আসে)

পলিথিন মুখ

 লোকটি ফেইসবুকে পোস্ট দিচ্ছে, আল্লাহ সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী— কিছুক্ষণ পর লোকটি পরিকল্পনা করছে কেমন করে বোনদেরকে সম্পত্তির ন্যায্য বন্টন থেকে বঞ্চিত করা যায়! 


লোকটা ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে,আল্লাহ সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী, আর মনে মনে কল্পনা বানাচ্ছে কেমন করে ভালো মানুষের পোশাক পরে আরও আরও জালিয়াতি দুর্নীতি করে প্রচুর টাকাপয়সার মালিক হওয়া যায়!! 


লোকটা ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে, জনগনই সকল ক্ষমতার একমাত্র উৎস— আর তলে তলে জনগণকে বিক্রি করে টাকা নিয়ে যাচ্ছে উৎস থেকে নিজের ব্যক্তিগত উৎসবে!


আসুন, আমরা ইফতার পার্টির আয়োজন করি ফায়েবস্টার হোটেলে এবং গরীব মানুষের জন্যে দোয়া ঢেলে দেই এবং জুড়ে জুড়ে জোড়ায় জোড়ায় সমকন্ঠে বলি— এদেশের মেহনতি মানুষের জয় ✌ হোক এবং ফাইবস্টার মানসিকতার ফাক দিয়ে কোনো শ্রমজীবী মানুষের হাড়ভাঙা মেহনত করা দেখে আরবি ভাষায় বলি— আল্লাহুম্মা বারিক লাহু! 


লোকটা বক্তব্য শুরু করার আগে বলছে, ক্ষমতা দেয়ার মালিক আল্লাহ এবং ক্ষমতা নেয়ার মালিক আল্লাহ। আর তলে তলে  ক্ষমতালোভীদের সাথে হাত মেলাচ্ছে পাছে তার পাছা দিয়া ক্ষমতা বের হয়ে যায় এই ভয়ে! 


আর একজন অধম মানুষ, আপনাদের ভাষায় বোকা কিংবা লাস্টবেঞ্চের ফাস্টে বসা মানুষটি কেবলই বলে যাচ্ছে— লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনায্-জ্বালিমীন!

মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

রসবতী

 



রসবতী রসকন্যা নদীমাতৃক দেশে

তার জলে মাছ আমি পাখি তার কেশে

বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০২৫

এক হাতে তালি বাজে

 প্রত্যেক ইবাদত ভাই ভাই। প্রত্যেক ইবাদত জলের মতো যৌথকোষ। ইবাদত মানে নিজের প্রতি সচেতন থাকা। জলের কোনো অংশে ঢিল মারলে যেমন জলকোষে ঢেউ লাগে তেমনি কোনো ইবাদতে মনোনিবেশ করলে ইবাদতকোষে ঢেউ লাগে।


সালাতে সিয়াম, যাকাত, হজ্ব রয়েছে। সালাত বান্দার সাথে আল্লার সম্পর্ক নির্মাণ করে যা হজ্বের নামান্তর, সালাতে শরীরের যাকাত দেয়া হয়ে যায়, সালাত একপ্রকার সিয়াম কারন সরিষা পরিমান খাবারও সালাতরত অবস্থায় খাওয়া যায় না।


ইসলামে সালাত কেন?


সালাতের উদ্দেশ্য মানুষকে মানুষমুখী করা, উগ্রতা থেকে মানসিকতাকে হেফাজত করা। সালাতের মাধ্যমে আসমানের আল্লাহ মানুষের চিন্তায় নেমে আসে। দুনিয়ামুখী মানুষ আল্লাহমুখী হওয়ার বর্নময় প্রশিক্ষণ লাভ করে। 


কুরানে আছে তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করেছি, তোমাদের আগেও ফরজ করা হয়েছিল যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। 


আলোচ্য বিষয় যেন তাকওয়া অর্জন করতে পারো। মানে সিয়ামের উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন। 


তাকওয়া হল মানসিকতার স্তর। মানসিকতা মানুষমুখী হলে আইনের শাষনের প্রয়োজন নেই যেখানে প্রত্যেক মানুষ প্রত্যেক মানুষের কল্যানের চিন্তা করবে। আর ইবাদতের অর্থই হল মানসিক স্টেশন তৈরি করা, মানুষকে আরও আরও মানবিক করে তুলা— পাঞ্জাবি টুপি বোরখা ধর্ম না, ধর্ম এক বোধগত চর্চার নাম, মতবাদগত আচরনের নাম। আমাদের দেহের ভেতরে আরেকটি দেহ রয়েছে যে কেবল ভোগ করতে চায় অর্থাৎ ভোগে তার আনন্দ। দেহের ভেতরে যে দেহ আছে সেই দেহের ভেতরে আরও আরও দেহ আছে— যাদের কাজ একেবারে আলাদা। আলাদা কাজের সন্ধান পেতে গেলে নিজের ইচ্ছাকে আলাদা উপায়ে সাজাতে হয়— ভোগের আনন্দে নিজেকে ব্যস্ত না রেখে, ত্যাগের ভেতরে যে ভোগ আছে সেই আনন্দে নিজেকে ব্যস্ত করতে হবে।


আরবি ভাষায় যখন কোনো কিছুর ইচ্ছার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক বোঝানো হয়, তখন "شاء" শব্দটি ব্যবহার করা হয়।"شاء"ক্রিয়াটি নিজের মধ্যে সম্পূর্ণ ইচ্ছা ও ক্ষমতার প্রকাশ বহন করে। কোনো মানুষ যখন বলছে ইনশাআল্লাহ (إن شاء الله) তখন তার নিজের ইচ্ছার আর মূল্য থাকে না। কারন إن (ইন্) শব্দটা شرطية جملة (shartiya jumlah, অর্থাৎ শর্তসূচক বাক্য)— ইংরেজিতে বলা হয় conditional particle!     বৃষ্টি আসলে আমি বের হবো। বিষয়টা ক্লিয়ার বৃষ্টি না আসলে আমি বের হবো না। 'আল্লাহ যদি চান বা ইচ্ছা করেন' এই কথার মধ্যে দিয়ে বিষয়টি ক্লিয়ার যে বান্দার সামগ্রিক জীবন বা ক্রিয়া আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। একজন মুসলমান নিজেকে যখন সম্পূর্ণ উপায়ে আল্লাহর নিকট সপে দিয়েছে তখন তার ব্যক্তিগত কষ্ট বা আনন্দ থাকার কথা না। আনন্দ বা কষ্টের উপরের স্তরের নাম প্রশান্তি যাকে আরবিতে জান্নাত বলে।  তাহলে জাহান্নামকে  বাংলায় কি বলে? দ্বিধা— জাহান্নামের বাংলা দ্বিধা, ইংরেজিতে বললে কনফিউজড!  


I can go there by the grace of almighty Allah। আপনি যখন আল্লাহকে Almighty বলবেন তখন I can ব্যবহার করতে পারবেন না। কারন can শব্দটি কেবল কর্তার নিজস্ব ক্ষমতা প্রকাশ করে। আপনি যখন by the grace শব্দগুচ্ছের ব্যবহার করবেন তখন আপনি CAN নামক মডেল ভার্বের ব্যবহার করতে পারবেন না। কারন CAN শব্দটি কেবল সাবজেক্টের (I) ক্ষমতা প্রকাশ করে। I can go there on my own/ I can get there myself / I can go there myself= Sounds like I am feeling independent about it!  ঠিক তেমনি "شاء" ক্রিয়াটি কেবল আল্লাহর ক্ষমতা প্রকাশ করে, আপনার অল্প থেকে অল্প পরিমান ক্ষমতাও প্রকাশ করে না। তাই ইনশাআল্লাহ" (إن شاء الله) আরবি শব্দগুচ্ছটি একমাত্র আল্লাহর ক্ষমতাকে প্রকাশ করে, কর্তা এখানে একমাত্র আল্লাহ— যে ব্যক্তি এই শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করছেন তিনি একেবারে নাথিং। ইনশাআল্লাহ" (إن شاء الله) শব্দগুচ্ছে যে ক্রিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে আরবি ব্যাকরনে তাকে বলে فعل ماضٍ بمعنى المستقبل ( ফে'লু মাদিন বিমা'নাল মুস্তাকবাল) মানে ভবিষ্যত বোঝাতে ব্যবহৃত অতীতকালের ক্রিয়া। এটি কেন করা হয়? এটি করা হয় কোনো কাজের নিশ্চয়তা বোঝাতে— কোনো কাজের সুপ্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা বোঝাতে। 


তাই "শাআ" (চাইলো) বলা হয়, যেন আল্লাহর ইচ্ছা অব্যর্থ এবং নিশ্চিত। তাই ইনশাআল্লাহ" (إن شاء الله) বাংলা অনুবাদ আল্লাভরসা বলা যাবে না। ধরেন— নদী পার হবেন। আপনি নৌকার উপর ভরসা করলেন। মাঝি কিন্তু আপনি নাও হতে পারেন। ইনশাআল্লাহ" (إن شاء الله)  শব্দগুচ্ছের মানে নৌকাও আল্লাহ, মাঝিও আল্লাহ, আপনি কেবল বসে থাকবেন। তেমনি "ما" + "شاء" + "الله"(  মা শা'আল্লাহ)— একটি সম্পূর্ণ বাক্য—  এখানেও ব্যক্তির ইচ্ছার কোনো গুরুত্ব বহন করে না— আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন বা আল্লাহ যা চেয়েছেন তাই হয়েছে। তাই ইবাদত মানে হলো নিজের সীমানা আবিষ্কার করা এবং নিজের সীমানায় আল্লাহর প্রভাব উপলব্ধি করতে পারার এক মানসিক প্রক্রিয়া— যার জন্যে ব্যক্তির প্রয়োজন হয় তাসলিম (تسليم) – আত্মসমর্পণ: আত্মাকে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর হাতে সমর্পণ করা। মাহাব্বা (محبة) – ভালোবাসা:

আল্লাহর প্রতি নিখুঁত ভালোবাসার প্রকাশ। খশু‘ ও খুযু‘ (خشوع و خضوع) – নম্রতা ও বিনয়: অন্তরের গভীর থেকে আসা ভয়, শ্রদ্ধা ও বিনয়ের অনুভব। ইখলাস (إخلاص) – নিঃস্বার্থতা: একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা— এমন মানসিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যখন একজন ব্যক্তি তার প্রভুর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবে তখন তার ব্যক্তিগত বিষয়াদি সাময়িক থাকবে না— সামগ্রিক হয়ে যাবে। মানুষের মানসিকতাকে সাময়িক থেকে সামগ্রিক দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ইবাদতের আলোচনা আমাদের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে— 

প্রভাত আসে

আমার সকাল তোমার আলোয় শুরু হোক

রাত নামে

আমার ক্লান্তি তোমার করুণায় ঢেকে যাক

ইবাদত আমার আত্মার নিশ্বাস

কালোর ভেতর আলোর ছায়া 

ছায়ার ভেতর মায়া হয়ে করছো তুমি বাস

শনিবার, ৩ মে, ২০২৫

প্রজ্ঞা জ্ঞান ইবাদত

 প্রজ্ঞা— কিছু বলতে চাও?

জ্ঞান— বহুদিন ধরে বলতে চাচ্ছি কিন্তু বলতে পারতেছিনা। 

প্রজ্ঞা— সংশয় রেখো না— বলে ফেলো। 

জ্ঞান— আপনাকে আমার খুব প্রয়োজন। 

প্রজ্ঞা— আচ্ছা। খুব ভালো কথা। তোমার জন্যে কি করতে পারি?

জ্ঞান— আমার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গ্যাছে, আপনি আমার মাথায় জল দিয়ে দেন। 

প্রজ্ঞা— তোমাকে যখন খাওয়ার পর দাওয়া নিতে বললাম তখন তুমি আমার কথা শুনলে না, যখন তোমাকে রোদে ঘুরতে নিষেধ করলাম তখন আমার কথা শুনলে না, যখন তোমাকে রাতে জাগতে নিষেধ করলাম তখন আমার কথা শুনলে না, এখন তোমার কথা আমাকে শুনতে হবে!? 

জ্ঞান— হবে। কারন এখন আপনাকে আমার খুব প্রয়োজন।

প্রজ্ঞা— তোমার মাথায় জল আমি অবশ্যই দিবো কিন্তু সেই জল তোমার তাপমাত্রা কমাতে পারবে কিনা আমি জানি না। 

জ্ঞান— আপনার কথাটা কেমন যেনো লাগলো! 

প্রজ্ঞা— ঠিক ধরেছো। প্রয়োজনের শেকড় কোথায় জানো? 

জ্ঞান— না। 

প্রজ্ঞা— প্রয়োজনের শেকড়ের নাম সম্পর্ক। তোমার সম্পর্ক রোগের সাথে, রোদের সাথে, রাতজাগার সাথে— আমার সাথে না। তাই আমার দায়িত্ববোধ তোমাকে স্পর্শ করবে, আমার হৃদয় তোমার সাথে জড়িত হবে না। মনে রেখো হে মহামান্য জ্ঞান, প্রয়োজন শব্দটা পারস্পরিক এবং গোছানো শব্দ— এটি সাজানো শব্দ নয়। শেকড় যখন বাতাসে ভেসে বেড়ায় তখন গাছের সাথে মাটির যে প্রয়োজন, মাটির সাথে গাছের যে প্রয়োজন তা কেবল বেলুন হয়ে যায়— উড়ে আর উড়ে, ঘুরে আর ঘুরে।

রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

ইবাদত জ্ঞান শিক্ষা

মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গাছের উপর নির্ভরশীল— এমন উপকারী বন্ধু গাছও কার্বনডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে যা মানুষের জন্যে ক্ষতিকর— গাছ মানুষের উপকার বা অপকারের আশায় কিচ্ছু করে না— গাছ যা করে তা কেবল নিজের প্রয়োজনে করে— গাছ যা কিছু করে নিয়মের সীমানায় থেকে করে— মানুষ নিয়মের সীমানা প্রায় ভুলে যায়।


জ্ঞান— তাহলে মানুষের বড় বন্ধু কে?

প্রাজ্ঞ— মানুষের কোনো বন্ধু নেই— মানুষ অনেক বড় সিন্ধুর মাঝে অনেক ছোট বিন্দু।


ইবাদত— তাহলে তো তার জন্যে কোনো নিয়ম থাকার কথা নেই!

প্রাজ্ঞ— অবশ্যই। নিয়মের কোনো নিয়ম নেই।


শিক্ষা— তাহলে আমরা যে নিয়ম টিয়মের কথা বলি। 

প্রাজ্ঞ— তাহলে বলি শোনো— আমাদের কান কোনো শব্দ শুনে না,শুনে আমাদের ব্রেইন, আমাদের ব্রেইন কোনো শব্দ শুনে না,শুনে আমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা, আমাদের অভিজ্ঞতা জাস্ট বানানো একটা গেইম যার শুরু এবং শেষ একই রকম।

 

মেধা— তাহলে আমরা একই কাজ করছি? 

প্রজ্ঞা— তাপের একটা নিয়ম আছে যা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে,চাপের একটা নিয়ম আছে যা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে,জলের একটি নিয়ম আছে যা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে,খাবারের একটি নিয়ম আছে যা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে, সমাজের একটি নিয়ম আছে যা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে, ব্যক্তি যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলে সেটা জাস্ট নিয়মের ছায়া। 


ইবাদত— এটাই কি নিয়তি? 

প্রাজ্ঞ— অনেকটা তাই, কারন মানুষ সূর্যের ☀ তাপ পরিবর্তন করতে পারবে না, মানুষ ঝড় তুফান পরিবর্তন করতে পারবে না, পৃথিবীতে বহু উপাদান সক্রিয় রয়েছে যা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষ সেখানে জাস্ট অসহায়, সেটাই নিয়তি।


শিক্ষা— তাহলে মানুষের বন্ধু কে? 

প্রাজ্ঞ— মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু পজিটিভ এবং নেগেটিভ।


ইবাদত— বুঝতে পারলাম না। 

প্রাজ্ঞ— এই পৃথিবীতে সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় আছে— নারী এবং পুরুষ, ভালো এবং মন্দ, শান্তি এবং অশান্তি। যা তোমাকে শান্তি দিবে তা থেকে জন্ম হবে অশান্তি। যা তোমাকে অশান্তি দিবে তা থেকেই জন্ম নিবে শান্তি।


ইবাদত— আচ্ছা, তাহলে এই পৃথিবীতে শতভাগ শান্তি বা অশান্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই! 

প্রাজ্ঞ— ঠিক তাই!

শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

ধান



আমাকে খরচ করে আমি হয়েছি ধনী

তীরে পৌঁছা নৌকা তেলের কাছে ঋনী

বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

বেরামধরা কান্না



শাড়ির আচলে লোকানো নদী

জানে না সাগর কই 

আগুনে পোড়ালেই হয় না প্রিয় 

শখের স্বাদের খই

কথার মধু গাছের মধু হয় না কখনো এক 

দেশ বানাতে লাগে তোমার অনিবার্য ত্যাগ 

স্বার্থের চুলায় যখনি তুমি বসাবে ভোগের রান্না 

পাকস্থলীতে জমা হবে প্রিয় বেরামধরা কান্না

বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫

প্রাজ্ঞ মেধা শিক্ষা জ্ঞান


ন্যায় বিচার হলো ভালো বীজের মতো— ভালো বীজ 'পানি'তে রাখলে কাজ হয় না— ভালো বীজ বাতাসে রাখলে গাছ হয় না— বীজকে রাখতে হয় মাটিতে। ন্যায় বিচার ন্যায় বিচার বলে ফেনা তুললে লাভ হবে না ওহে মাওলানা ডট কম— মাটি তোমার কথা শুনতে অনেক আগেই হয়েছে অক্ষম।


জ্ঞানী— হে মহান প্রাজ্ঞ, তাহলে সমাধান কী?

প্রাজ্ঞ— সমাধান একমাত্র বৃষ্টি— মেঘ থেকে নেমে আসা বৃষ্টি। 

মেধা— বিষয়টি সহজ করে বললে সুবিধা হয়। 

প্রাজ্ঞ— রহমত হলো বৃষ্টির মতো— রহমতের উদয় হবে এবং রহমত প্রথমে মাটির নষ্ট হয়ে যাওয়া গুনাবলি ফিরিয়ে আনবে, তারপর রহমত এন্ড গং ন্যায়ের কথা বলবে।


শিক্ষা— তার জন্যে আমাদের তো প্রস্তুত থাকতে হবে নতুবা রহমত এসে মাইন্ড করবে না!? 

প্রাজ্ঞ— নদী শুকিয়ে গেলে মাছের প্রস্তুতিতে জলের কি আসে যায়! 

জ্ঞানী— আসলেই, বিল্ডিং ভেঙে গেলে ইট কাচামাল মাত্র। 

প্রাজ্ঞ— দারুণ দারুণ, তোমাদের কথালাপ দারুণ মুগ্ধতা ছড়ায়।

বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫

ফিরতে হবে একেবারে



মরে তো যাবেই তুমি

যেভাবেই বাচো

নিজের সাথে ঘর করো

মনের সাথে নাচো

মনরে পাগল বলে করেছে যারা গান 

নিজেরে সস্তা করে বাড়িয়েছে সমাজের দাম 

নিজের হাটে নিজেরে কিনো 

আকাম ছেড়ে করো প্রিয় নিজধরা কাম 

গাছ কিন্তু কালো নয়

গাছে আসে কালো কালো জাম

বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

জ্ঞান প্রজ্ঞা মেধা

 জ্ঞান— আমাকে একটা কথা বলো তো? 

শিক্ষা— কি কথা হে মহান জ্ঞান?


জ্ঞান— নৌকা পানিতে ভাসে। পাথর কেনো ডুবে যায়?

শিক্ষা— নৌকা জলে শরীর রেখে যে জায়গা দখল করে তার ওজন জলের ওজনের চেয়ে কম: পাথর জলে যখন শরীর রাখে তখন তার ওজন জলের ওজনের চেয়ে বেশি।


জ্ঞান— প্রিয় মেধাবী তুমি উত্তরটা দাও তো। 

মেধাবী— নৌকার মোট ঘনত্ব পানির চেয়ে কম হওয়ায় এটি ভেসে থাকে, আর পাথরের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় এটি ডুবে যায়।


জ্ঞান— বাহ: তোমরা দুজনে সুন্দর বললে। নৌকা আর পাথরের  জীবন থেকে তোমরা কি কোনো লেসন খুঁজে পাও?

শিক্ষা— আপনিই বলুন হে প্রানপ্রিয় জ্ঞান।


জ্ঞান— দুনিয়ার চাওয়া পাওয়ায় এমনভাবে মন রাখো যাতে চাওয়া পাওয়ার ওজন দুনিয়ার চেয়ে বেশি না হয়: বেশি হলে ডুবে যাবে: কম হলে ভেসে থাকবে এবং তীরে যেতে পারবে। 

মেধাবী— লোভ-লালসার ভারে যখন মন হয় পাথর: সত্যের স্রোতে ডুবে যায় সে নিরব অন্তর: যে হৃদয় থাকে আলোয় ভরা,বিস্তৃত আকাশ: সে ভাসে নৌকার মতো— দিগন্তে নির্ভর আলোময় বাতাস।


জ্ঞান— সুন্দর বলেছো হে মেধাবী পুত্র আমার। তোমাদের কল্যাণ অনিবার্য হোক।


Wisdom— Tell me something.

Education— What is it, O great Wisdom?


Wisdom— A boat floats on water. Why does a stone sink?

Education— A boat displaces water in such a way that the weight of the displaced water is greater than its own weight, so it floats. A stone, on the other hand, has a weight greater than the water it displaces, so it sinks.


Wisdom— My dear intelligent one, can you answer?


Intelligent One— A boat floats because its overall density is less than that of water, while a stone sinks because its density is greater than that of water.


Wisdom— Well said! Can you find a lesson from the lives of the boat and the stone?

Education— Please, O beloved Wisdom, tell us.

Wisdom— Keep your desires and ambitions balanced, so they do not weigh you down more than the world around you. If they become too heavy, you will sink; if they remain light, you will float and eventually reach the shore.


Intelligent One— When the heart is burdened with greed, it sinks silently in the stream of truth. But the heart that is filled with light and vast like the sky floats like a boat—guided by the luminous winds of the horizon.

Wisdom— Beautifully said, my wise child. May your path always be blessed.


ReJa

18/03/2025

রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

একের ভেতর একত্ববাদ




একা হও 

একা হও 

আরও একা হয়ে যাও 

একা হলে পাবে তুমি একের দেখা 

একের ভেতর সবই পাবে যা তুমি চাও 

চাওয়া রেখে 

পাওয়া রেখে 

একের ঘরে শুন্য হয়ে মহাকালে মিশো 

শরীরের তাবেদারি ভুলে গিয়ে মনেতে বসো 

মনের শরীরে স্থির করো শরীরের মন 

সাময়িক আপন দূরে যাবে 

নিজের হবে তোমার সামগ্রিক আপন

বুধবার, ৫ মার্চ, ২০২৫

তোমরা যারা সুখে আছো



কাটাতারে ঝুলে আছে প্রেম

নৃত্য করেন 

আনন্দে নৃত্য করেন আরামের আয়োজনে 

আপনিও ঝুলে যাবেন আনন্দে— আনন্দের কাটাতারে 

আনন্দ থেকে প্রেম এনে যারা রান্না করে ইচ্ছা 

তাদের ইচ্ছায় বাগান বানায় মুক্তি— মুক্তিফুল ঘর করে রোজ

মুক্তিফুল ঘর করে রোজ তাদের ইচ্ছার বাগানে

সুগন্ধি তবলা বাজায় মনের সিথানে 

কাটাতারে দেশ থাকে

সংবিধান থাকে

পিস্তল বাহিনি থাকে

উন্নয়ন টুন্নয়ন— এসব যেনো কী— এসবও থাকে 

ডিপস্টেট— এগুলো যেনো কী— এগুলোও থাকে 

থাকে না কী?

বলো দেখি 

বলো 

এখনি বলো 

বহু অতীত দেনা হয়েছে কার্যের মার্জিন খাতায় 

বলো 

এখনি বলো— ঘুমভাবের পীড়িত মেধা 

কাটাতারে থাকে না কী!? 

জানি তুমি বলবে না

ঘুম তোমার ভাঙবে না 

কারন তুমি ঘুমাওনি 

ঘুমের টুপি পরে আছো দিবানিশি 

আর আমি!? 

কাটাতার উড়িয়ে দেবার অস্ত্রটা পেলে খুশি ☺

রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আলাদা আলো

গাছের চোখ ঢেকে রেখেছে কতিপয় পাতা 

গাছ এখন অন্ধকারে

ঘুরছে না গাছের চোখের চাকা 

গাছ চুপ— বলছে না কথা 

তালপাখা চুপচাপ— আওয়াজ দিচ্ছে না বাতাস 

তারপরও ডালপালা হচ্ছে না মোটেও হতাশ 

গাছ জানে

জানে না পাতা— আসন্ন শীতে মরে যাবে সে

গাছে বসবে কচিকাঁচা পাতা 

গাছ দেখবে আবার পুরাতন চোখে 

বলবে কথা আরও আরও সুন্দর পুরাতন মুখে 

যে রেখেছে চোখ বন্ধ করে 

চোখ বন্ধ করেও সে অন্ধকারের আলোটা দেখে

মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢেউডাকা বেউ

 তীরে আসা ঢেউ

ফিরে গেলে জল হয়ে

নিজ ঘরে নিজ ঘরে 

জোছনার ফল হয়ে 

ফিরে গেলে চুপিসারে 

জানলো না কেউ 

ব্যথা দিলে রোজ যারে 

সুখ দিলে রোজ তারে 

ফুল হয়ে ফল হয়ে 

জলঘরে জলঘরে

অকূলের পথ বেয়ে

চাঁদময় মায়া ধরে 

কায়া ধরো ঢেউ হয়ে 

  ছায়া দাও রোজ 

   নিখোঁজের মনে দাও— শান্তির খোঁজ

     তীরে আসা ঢেউ

       মরনে লবন তুমি— মনেধরা বেউ 


Waves that touch the shore

Return as water once more

Silent steps, a silver glow

Moonlit fruits that softly flow


No one knew, no one heard

Pain was given, joy was stirred

Flower, fruit waves untold

Drifting back to waters cold


Through boundless tides they sway

Clutching moonlight on their way

Oh, be a wave, embrace the sea

Shade the lost in harmony


Waves that touch and fade from view

Salt in death— yet bound to you


১১/০২/২০২৫

৯:৩০মিনিট 

জাম্পিং পয়েন্ট 

গলে ফোর্ট

শ্রীলঙ্কা

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

প্রেমের রাজধানী

 আমি তো চাই তুমি বসে থাকো

     তুমি বসে থাকো একা 

একা বসে থাকো পাথরের ভেতর

     পাথরফুল তোমার চারপাশে

মুগ্ধব্যাকুল তুমি পাথরফুলের গন্ধে

     তবে বিচলিত নও তুমি প্রাত্যহিক ছন্দে 

মাটির মানুষ আমি বারবার তোমাকে দেখি

    বারবার তোমাকে দেখি পাথরের আয়নায়

জানি আমি মাটির মানুষের প্রবেশ নেই পাথরে 

      কোনো প্রবেশ নেই পাথরঘরে 

একবার তুমি বের হয়ে আসো পাথরবৃষ্টি রাতে

পাথরবৃষ্টি রাতে অভিসারের অভিনয়ে খুব গোপনে 

এসে ধরে ফেলো আমায়—মাছ মাংস শরীর আমার 

করে নাও আমাকে নিজস্ব তোমার 

তোমার স্পর্শে হয়ে উঠি যেনো সামগ্রিক প্রেমিক 

      প্রেমিকের কোনো দেশ নেই 

    প্রেমিকের কোনো জাতমালা নেই 

  প্রেমিকের নেই কোনো ভয়দুর্গ প্রাচীর 

যুদ্ধ হলেও দেশে দেশে প্রেমিকের দেশ প্রেমিকা 

দ্বন্দ্ব হলেও জনে জনে প্রেমিকের রাজধানী প্রেমিকা

  প্রেম স্বয়ং সময় 

     তুমি আমি 

        আমি তুমি তার দেহগত সেবক দেহাতীত সেবিকা

শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সময়মাঝি

 খেলছে শিশু সাগর জলে

    ভাঙছে ঢেউ পায়ের তলে 

       সাহসী মন তার হাতিয়ার

           সময়কুলে চলছে সাতার

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫

জীবনের খুঁজে

 জীবন ছোটো— আসলেই খুব ছোট— নির্ধারিত সময় গড়িয়ে যায় নদীর স্রোতের মতো নির্ধারিত কক্ষপথের জলপথে স্থলপথে বাতাসপথে—অপেক্ষা করে না, থমকে দাঁড়ায় না! তবু এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমরা আঁকড়ে ধরি অসংখ্য স্বপ্ন, বড় বড় চাওয়া-পাওয়া।


কিন্তু সত্যিই কি এত বড় স্বপ্ন ছাড়া জীবন অর্থপূর্ণ হতে পারে না!?


ছোট ছোট চাওয়া, ছোট ছোট ভালোবাসা, ছোট ছোট আনন্দ—এসবকে যদি আমরা গুরুত্ব না দিই, তাহলে কেমন করে পার হব জীবনের বিস্তীর্ণ নদী?


প্রতিদিন সূর্য ওঠে, আলো ছড়িয়ে দেয়, কিন্তু আলো কি শুধু উজ্জ্বলতাই আনে? না, সে আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরে ছোট ছোট সুখের গল্প, যেগুলো আমরা প্রায়শই উপেক্ষা করি।


চলো, আমরা একটু থামি। একটু বসি পাশাপাশি, চোখের ভেতর রাখি চোখ, হৃদয়ের গভীরে ঢেলে দিই ভালোবাসা। রচনা করি এমন এক জীবন, যেখানে অর্থ কেবল শব্দে সীমাবদ্ধ থাকে না—বরং তা ছড়িয়ে যায় যাপিত জীবনের প্রতিটি পরতে, প্রতিটি অনুভূতিতে— যেখানে জীবন মানে কেবল দৌড় নয়, বরং প্রতিটি মুহূর্তকে আলিঙ্গন করা—আলিঙ্গনে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উপভোগে লেগে থাকা। 


তাই চলো, সাজাই জীবনকে, ঠিক যেমন করে তুমি সাজাতে ভালোবাসো। ছোট ছোট স্বপ্নগুলোকে বড় করে দেখি, ছোট ছোট মুহূর্তগুলোকে সেরা করে তুলি। কারণ দিনশেষে, এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে প্রকৃত সুখ, প্রকৃত জীবনের অর্থ— Life is not about chasing big dreams, but about embracing small moments that make the journey meaningful.

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৫

লেজের হাড়

 ভাবের আকাশ 

   ভবে শেষ 

    ইহকাল হাসে 

     তুলে লেজ 

      জ্বলে আগুন 

       বাড়তে থাকে তেজ 

        লেজে যখন তেজ জ্বলে 

         ঘুরে তখন মাথা 

        তুফান আসলে মনে 

      কাজ করে না ছাতা 

    কান্নার জল ভালো 

  রান্নায় আলু 

       বন্যার পলিমাটি 

         ভরা চান্দের আলো 

           ভাব ভবে থেকে থেকে 

            বাংলা কান্দে 

             বস্তুদেশ রাজাবিশ্ব 

               প্রজাবাংলা ফান্দে

সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৫

জাগ্রত

 



স্বপ্ন তোমার খেয়ে দিচ্ছে

   বিদেশি এক পোকা

     স্বপ্ন ধরে জেগে উঠো

       শান্তি প্রিয় খোকা

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫

বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৫

আগুনফুল

আগুনফুল আমার বাগানে বাগান 

যে আগুন ধরে না তাকে যখন ধরানো যায়

তাকে যখন ধরানো যায় সে জ্বলে অনেকক্ষণ 

আগুনফুল আমার উড়তে চায় বাতাসে আকাশ

আগুন বেচে আছে যতক্ষণ ততক্ষণ সে মরে না

নরম হয় না আগুন জলের ভয়ে 

জল মরে না 

জল মরেই আছে জীবনের সমান 

জলে আর আগুনের যুদ্ধ 

জল আর আগুনের যুদ্ধে আগুন মারা যায় 

জল মরে না 

জল বেচে থাকে বিবাহিত সময়ের আত্মার মতো 

জল পতনমুখী পোকা 

আগুন উপরমুখী পাখা

আগুনের পাখায় ভর করে সভ্যতা খাবার খায়

সভ্যতা খাবার খায় সকাল বিকাল 

সকাল বিকাল কার কাছে যাও তুমি 

কার কাছে যাও তুমি আগুন মাথায় নিয়ে 

জল হয়ে তোমার শরীরে বুনন করি সিন্ধু সভ্যতার চাদর 

চাদরের অন্দরে আগুন লুকানোর পর

আগুন লুকানোর পর তোমাকে স্পষ্ট দেখতে পাই 

তোমাকে আজকাল মানুষ মনে হয় 

মানুষের মতো একটা স্বচ্ছ নদী মনে হয় তোমাকে 

সুযোগ করে তোমার জলে স্নান করতে দিও প্রিয়

সোমবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২৫

ভাব

ভালোবাসা এক অচিন পাখি 

ভাব যত গভীর 

তত গভীরে সে মন চালায় 

ভাব এক রঙিলা পাখি

যত গভীরে তার তলদেশ 

তত উপরে সে পাখা ফালায়

বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৫

মুষল

 শেষের কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকে রোদ

ছায়াতলে আরাম করে আরামপ্রিয় বোধ