বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৪

আমাদের ভালো থাকার কথা

 


আমরা ভালো নেই

আমাদের একটা স্বাধীন ভূখণ্ড লাগবে।

আমরা এখন যে ভূখণ্ডে আছি তা আমাদের শান্তি দিতে পারছে না— শান্তির নামে আল্লাহু আকবর বলে আমরা আলাদা হলাম।

আমাদের নতুন ভূখণ্ডের নাম পাকিস্তান!যেনো একেবারে পাক হয়ে গেলাম— আর কোনো নাপাকি লাগবে না মোর গায়। 


আমরা ভালো নেই।

আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়।

আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায় তারা, এমন বৈষম্য আমরা মেনে নিতে চাই না— আমাদের নিজস্ব ভূখণ্ড লাগবে। আবারও শান্তির নামে বৃটিশ মনোনিত মানচিত্র থেকে আমরা বের হয়ে আসলাম। আমাদের দেশ হলো— নতুন দেশের নাম বাংলাদেশ! 


বিজয়ের পতাকা পতপত করে আকাশে উড়লো— অনেক কান্নার নদী সাগরে গিয়ে মিশলো— সাগরজল বাষ্প হয়ে ফিরে এলো আবারও+ফিরে এলো আমাদের চোখে!


আমরা ভালো নেই।

আমাদের নতুন নিয়ম লাগবে।

পুরাতন নিয়ম সব বাদ। যিনি নতুন নিয়ম আনতে গেলেন তাকে হত্যা করো— সময় সুযোগ করে তাকে লাল সূর্য পতাকার মতো আকাশে তুলে দেয়া হলো। মুছে ফেলো তার সব স্মৃতি— তাও করা হলো থরেবিথরে। 


এলো নতুন সরকার।


নতুন সরকার এসে বললেন আগের সরকার ভালো ছিলো না— আমাকে সময় দেন— আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি— জনগণ তাকে কয়েকদিন সময় দিলো— তাকেও আরও আরও সময় না দিয়ে তার শরীর থেকে মাংস আলাদা করে ফেলা হল— পড়ে থাকলো কেবল তার পরাজিত হাড় সমগ্র!


শান্তির নামে আবারও এলো নতুন কবি— তিনিও কবিতায় কবিতায় বললেন আগের সরকার ভালো না— আমিই একমাত্র ধোয়া তুলসীপাতা— এমন ধোয়া তুলসীপাতাকেও চলে যেতে হলো ক্ষমতার পরপারে!  স্বৈরাচার স্বৈরাচার বলে মিডিয়া কাপালেন ক্ষমতাসুন্দর সরকার! 


তারপর দেশরক্ষার নামে তিনিও রোপণ করলেন ধান, নদীতে চললো নৌকা— ভাবলাম হয়ে যাবো আমরা মাছেভাতে বাঙালি— শান্তি এবার আমাদের সুনিশ্চিত— কুমড়ো ফুলের শান্তি ঠিক তখনো এলো না— এলো বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস!


আমাদের দীর্ঘশ্বাস দূর করে তরতাজা শ্বাসে ভরিয়ে দিতে আমাদের ফুসফুসে এলেন নতুন লাঙ্গল নৌকা জোয়াল—এসেই তিনি বাতাসে রাখলেন আগের সরকার নাকি জঘন্য অপরাধ— তিনার সরকার বেরামে আরাম তুলতুলে গাল— শিশুর মতো নিষ্পাপ। 


গরু হাটতে লাগলো—

জমিতে উঠলো ফসল— যে ফসল বলছে আগের সরকার কেবল লুটপাট করেছে— আমরাই কেবল ফসলে উন্নয়নশীল পাঠচক্রের আয়োজন করেছি— এমন উন্নয়নশীল পাঠচক্র আয়োজনকেও চলে যেতে হলো!


মিউজিক চেয়ারে এবার বসলেন নতুন গায়ক যিনি শান্তির নামে রচনা করছেন পুরনো লিরিক— মিউজিকের তালে তালে আমরা সবাই মাথা ঝুলাচ্ছি— আর বলছি, আমরাই বেস্ট— আগের সবকিছু  দুর্নীতি আর মন্দকাজের ওয়ান্ডে এন্ড টেস্ট!

রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪

উসমান ইবনে আফফান عثمان

তিনাকে সতর্ক করা হচ্ছে। আকাশ বাতাস তিনাকে সতর্ক করছেন— সতর্ক করছেন জমিনের গাছপালা। কারো সতর্কবানী কানে নিচ্ছেন না তিনি। তিনি শুনছেন তিনার একান্ত নিজস্ব স্বজনদের কথা। স্বজনদের উপর তিনি অনেক নির্ভরশীল হয়ে গেলেন। 


লোকজন তিনার বাসভবনের সামনে জমায়েত হতে শুরু করে— তিনি তাদেরকে তিন দিনের সময় দিলেন আন্দোলন ভেঙে বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্যে। আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠছে। কোনোভাবে আন্দোলন দমন করতে পারছেন না তিনি। 


তিনি আন্দোলনকারীদের সামনে আসলেন না— আসলেন তিনার পক্ষ থেকে তিনারই একজন স্বজন— এসে বক্তব্য দিলেন— 

তোমরা কি চাও? 

তোমরা কি লুটপাট করতে চাও?সময় থাকতে ফিরে যাও।তোমাদের ধারনা, তোমাদের ভয়ে আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান পদত্যাগ করে তোমাদের হাতে শাসনভার তুলে দেবেন?যদি তোমরা তা ভেবে থাকো তাহলে বোকামি করবে। আমরা কোনো জালেমের হাতে নিজেদের ন্যস্ত করতে ইচ্ছুক নই। 


'জালেম' শব্দটা আন্দোলনকারীদের মনে আরও তীব্র বেদনাঘাতের জন্ম দেয়— আন্দোলন আরও আরও তীব্র থেকে তীব্রতার অবয়ব ধারন করে— একসময় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখা দেয়। রাষ্টপ্রধানের পদত্যাগ দাবি করতে শুরু করে আন্দোলনকারীরা—বাসভবনের দিকে তীর ও পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। 


পাথর ও তীরের আঘাতে বাসভবনের তিনজন স্পেশাল সিকিউরিটি শহীদ হয়ে যান। তারপরও তিনি বিচলিত নন— কোরান তিলাওয়াতের কাজে আরও অধিকহারে মনোনিবেশ করেন। 


আন্দোলনকারীরা মারওয়ানকে তাদের হাতে তুলে দেয়ার জন্যে প্রস্তাব করে কিন্তু খলিফা তা শুনলেন না— তিনি শুনলেন মারওয়ানের কথা। অবশেষে খলিফাকে হত্যা করা হবে এমন কথা বলতে শুরু করে আন্দোলনকারীরা। 


আন্দোলন প্রতিবাদ চলছে। মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর তিনজন বিদ্রোহীকে নিয়ে খুব গোপনে খলিফার এক আনসারের বাড়ির ছাদ বেয়ে খলিফার বাড়িতে প্রবেশ করে। খলিফা তখন নিচতলায় কোরান পড়ছেন। মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর খলিফার দাড়ি ধরে টান দেন এবং অভদ্র ভাষায় খলিফাকে সম্বোধন করে। ঠিক সেই সময় মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের চোখে চোখ রেখে অত্যন্ত বিনয়ের ভঙ্গিতে খলিফা বলেন—


'আমি আল্লাহর বান্দা এবং তোমাদের খলিফা। তোমার পিতা জীবিত থাকলে আজ তোমার এই কাজ অত্যন্ত অপছন্দ করতেন।'


এই কথা শুনে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর লজ্জা পেয়ে পিছু হটেন। কিন্তু তার সঙ্গে আসা বিদ্রোহীরা খলিফার মাথায় তিনটি আঘাত করে। খলিফাকে রক্ষা করতে গিয়ে খলিফার স্ত্রী নাইলা এগিয়ে আসেন এবং তার আঙুল কেটে যায়। খলিফা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। খলিফার মাথার সামনে লাগা আঘাতটি মারাত্মক ছিলো। আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ খলিফার মাথা কেটে নিতে চায়লে অন্যরা বাধা দেয়। 


খুব বেশি সময় পাননি খলিফা উসমান ইবনে আফফান।মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার  কিছুক্ষনের মধ্যে তিনি মহান প্রভুর কাছে চলে যান।


ইসলামের তৃতীয় খলিফা ওসমান ইবনে আফফানের মৃতশরীর তার ঘরে এইভাবেই পড়েছিল তিনদিন। তিনাকে দাফন করার মতো সাহস কারো ছিলো না।


প্রায় চল্লিশ দিন ধরে খলিফাকে বন্দী করে রাখা হয়— মদিনার সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির দরজায় একজন করে লোক দাঁড় করে রাখা হয়েছিল যাতে তারা ঘরের বাইরে বের হতে না পারে। খাবার ও পানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।


আমাদের অবশ্যই মনে রাখা দরকার— উসমান ইবনে আফ্‌ফান عثمان بن عفان; ইসলামের তৃতীয় খলিফা— তিনি ৬৪৪ থেকে ৬৫৬ সাল পর্যন্ত খিলাফতে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং খলিফা হিসেবে তিনি চারজন খুলাফায়ে রাশিদুনের একজন। উসমান ছিলেন আস-সাবিকুনাল আওয়ালুনের একজন।  এছাড়াও তিনি আশারায়ে মুবাশ্‌শারার একজন এবং সেই ৬ জন সাহাবীর মধ্যে অন্যতম যাদের উপর নবি মুহাম্মাদ  ﷺ অধিক সন্তুষ্ট ছিলেন। তিনার উপাধি জিন্নুরাইন— হযরত মোহাম্মদ ﷺ তিনার দুই কন্যাকে আফ্‌ফানের পুত্র ওসমানের কাছে বিয়ে দেন— সেই থেকে তিনি দুই নুরের অধিকারী।

বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪

দিনাজপুর এবং আমার যত কথা

 বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের দিনাজপুর শহরের রেস্ট হাউজটি বা পর্যটন মোটেলটি ভালো— ভালো বলতে দিনাজপুর শহরে এর চেয়ে ভালো মোটেল কিংবা রেস্ট হাউজ আর নেই— তবে সে আরও ভালো হতে পারতো— রুমে সেই পুরাতন এসি— সেই পুরাতন সামগ্রিক সেটআপ— তোয়ালে থেকে শুরু করে নুয়ালে পর্যন্ত। পরিবেশ নিরব শান্ত, নিরাপত্তা পদ্ধতি যথেষ্ট ভালো। কিন্তু সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পর্যটন মোটেল দিনাজপুর আপডেট হতে পারেনি।


সকালে ঘুম থেকে উঠি নয়টায়— তারপর নাস্তা খাওয়ার পালা— নাস্তায় দুটি রুটি একটি ডিম একটি পানির বোতল এক কাপ কফি— বাড়তি একটি রুটি খেতে গেলেও এক্সট্রা  বিল পে করতে হবে! অথচ এক রাতের জন্য তারা আমার কাছ থেকে নিয়েছে তিন হাজার দুইশো টাকা!!


নাস্তা খেয়ে অটোরিকশা করে যাত্রা করি কান্তজিউ মন্দিরের উদ্দেশ্যে— আগে কান্তজিউকে বলতাম কান্তজির। মাত্র দুইশো টাকায় আসা-যাওয়া ভাড়া—আসাযাওয়াতে পথদুরত্ব প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার—চালক আবুজার আলী — সে কোরানের হাফেজ— দুই সন্তানের পিতা। অন্য রিকশা চালকদের মধ্যে কেউ চারশো টাকা কেউ পাচশো টাকা ডিমান্ড করেছে— ধরদামে তারা টিকেনি— টিকেছে আবুজার আলী।  


যাচ্ছে তো যাচ্ছে। যাচ্ছি তো যাচ্ছি। রাস্তার দুইপাশে হালকা পাতলা ঘরবাড়ি। আমবাগান— লিচু বাগান— ধানের ক্ষেত— আখ খেত চোখে পড়ে কেবল। চোখে আসে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়— রাস্তার একেবারে বগলে হাবিপ্রবির অবস্থান।


চোখে আসে চেহেল গাজী মাজার শরীফ— চল্লিশ জন সুফি সাধকের মাজার— যারা ধর্ম প্রচার করতে বাংলায় পা রাখে তাদের মধ্যে থেকে চল্লিশ জন এখানে শায়িত আছেন— চল্লিশ জনকে লম্বা করে একসঙ্গে সমাধিস্থ করা হয়েছে।


যাচ্ছি কান্তজিউ মন্দিরের ⛪ দিকে। যাচ্ছি তো যাচ্ছি। আর চোখ ভরে দেখছি সবুজ শান্ত প্রকৃতি— মন ভরে নিচ্ছি নির্মল বাতাসের শুদ্ধ আভাস বিশুদ্ধ প্রভাস। প্রাণনাথ রায় কান্তজিউকে বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ ও তার প্রথম স্ত্রী রুক্মিণীকে স্মরণত্যাগে অর্পণ করেছে। 


রুক্মিণীকে সংস্কৃত ভাষায় বললে, বলতে হয় रुक्मिणी যার বাংলা অর্থ  জ্যোতির্ময়ী বা প্রভাশালিনী। রুক্মিণীকে লক্ষ্মীর অবতার এবং সৌভাগ্যের দেবী হিসাবে বিবেচনা করে শাস্ত্রে। 


 রুক্মিণী হলো শ্রীকৃষ্ণের সহধর্মিণী ও দ্বারকার রাণী— রুক্মিণীকে নিয়ে বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ কান্দজিউতে বসবাস করে। কান্ত অর্থ কৃষ্ণ। কান্তজিউ মন্দির মানে কৃষ্ণ মন্দির। 


কান্তজিউ মন্দির দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের ঢেপা নদীর তীরে আশ্রিত। অলঙ্কারের বৈচিত্র্যে এবং ইন্দো-পারস্য স্থাপনা কৌশল অবলম্বনে মন্দিরটি নির্মিত— শ্রীকৃষ্ণের যুদ্ধ-বিগ্রহ অধিষ্ঠানের জন্য মন্দিরটি নির্মিত। মন্দিরটির অবস্থান শ্যামগড় এলাকায় হলেও বিগ্রহের নাম অনুসারে নতুন নাম দেয়া হয় কান্তনগর— বিগ্রহ মানে দেবতার মূর্তি— বিশেষ করে কৃষ্ণের বিশেষ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন অবয়ব ভাব। গ্রহ যখন অনুকূলে থাকে না তখন তাকেও বিগ্রহ বলে। 


দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌর এলাকার কোলঘেঁষে প্রবাহিত হওয়ার পর ঢেপা নদী দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে দিনাজপুর সদরের পৌর এলাকার নিকটবর্তী রাজাপোড়া ঘাট নামক স্থানে পুনর্ভবা নদীতে পতিত হয়েছে। পচিশ মাইল দৈর্ঘ্যের এই ছিমছাম নদীটি কান্দজিউ মন্দিরের ⛪ কপালে চুমু দিয়ে সামনের দিকে প্রাগ্রসর হয়েছে— নদী ও মন্দির কে যে কার অলঙ্কার বুঝা বড় মুশকিল!  ঢেপা নদী হলেও বেশভূষায় তাকে সাগরের আপন ছোট বোন মনে হয়। 


কান্তজিউ মন্দিরের টেরাকোটায় রামায়ণ ও মহাভারতের ঘটনা ও মুঘল আমলের বাংলার সাধারন মানুষের জীবনযাত্রার স্বাভাবিক প্রবাহ ছবিচিত্রের মাধ্যমে  কল্পনাবাস্তব থেকে দৃশ্যমান বাস্তব করে তোলা হয়েছে— মন্দিরের টেরাকোটার চিত্রে নারী পুরুষের যৌন জীবন অত্যন্ত সুন্দর উপায়ে স্পষ্ট— বিশেষ করে নারী ও পুরুষের শারীরিক গঠন খুবই সুন্দর মন্দিরের দেয়ালে আশ্রিত চিত্রে। কান্তজিউ মন্দির নির্মানে ব্যবহৃত পাথর আনা হয়েছে হিমালয়, আসামের পার্বত্যাঞ্চল ও বিহারের রাজ মহল পাহাড় থেকে— এছাড়াও ইট-বালি টেরাকোটা ও কঠিন পাথরের সংমিশ্রনে মন্দিরটি নির্মিত। 


মহারাজা প্রাণনাথ রায় মন্দিরটি ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ কাজ শুরু করে কিন্তু সে নির্মান কাজ শেষ করতে পারেনি— ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রাননাথপুত্র রাজা রামনাথ রায় নির্মান কাজ শেষ করে। মন্দিরটিতে নবরত্ন বা ‘নয় শিখর’ ছিলো কিন্তু ১৮৯৭ সালের  ভূমিকম্পে নবরত্ন ধ্বংস হয়ে যায় । বলে রাখা ভালো, রাজা প্রাণনাথের রক্তের কোনো সন্তান ছিলো না। 


বাংলাদেশের সর্বোৎকৃষ্ট টেরাকোটা শিল্পের চিহ্নময়ী কান্তজিউ এক নীরব প্রেম ও নীরবতার স্বাক্ষী— মন ভালো হয়ে আসে ভেতর থেকে এই মন্দিরের ভেতরের নীরবতার শরীরের কিছুক্ষণ ডুব দিয়ে থাকার পর— বহু পুরাতন বটগাছের দেখা মিলে— দেখা মিলে এক সুশৃঙ্খল সুশীতল ছায়াময় কায়ার সাথে যা হৃদয় দিয়ে দেখতে হয়— আমি যখন মন্দিরে প্রথম শরীর রাখি তখন মন আনন্দে ভরে উঠে। কারন ছোটোকাল  থেকে কান্তজিউ মন্দিরের নাম শুনে আসছি— আজ চোখে দেখছি। দিনাজপুর বলতে বুঝতাম কান্তজিউ মন্দির!


বলতে গেলে কান্তনগরটিই খুবই শান্ত— লিচু গাছের সমারোহ। ধান গাছের সমারোহ। মাটির ধরন না এটেল না বেলে না মিশ্র— একেবারে ভিন্ন ধরনের— জনবসতি হালকা। মানুষের মেজাজ শান্তশিষ্ট এবং ভদ্র— ঢেপা নদীর মতোই সেখানকার মানুষ এবং তাদের নীরব সেবামুখর উপায়ে বয়ে চলা— কথা কম কাজ বেশি। 


ঢাকা-দিনাজপুর প্রধান সড়ক ধরে মাত্র এক ঘন্টায় দিনাজপুর শহর থেকে পৌছে গেলাম কান্তজিউ মন্দিরে। এক ঘন্টার মতো অবস্থান করি। সময় তেমন হাতে ছিলো না— তবে সময় হাতে থাকার দরকার ছিলো— অর্ধদিবস কান্তজিরে যাপন করলে কিছুটা হলেও মনের স্বাদ পূর্ণ হতো— স্বাদ থেকে যাওয়া ভালো— পুনরায় ভরা স্বাদে যাওয়ার এক মনপথ নির্মাণ হলো মনে— কান্দজিউ কেবল মন্দির নয়— গবেষণার এক প্রামাণিক ল্যাবরেটরি!


কান্তজিউ মন্দির যখন নির্মিত হচ্ছে ঠিক একই সময় নির্মিত  হচ্ছে নয়াবাদ মসজিদ— ১.১৫ বিঘা জমিতে নয়াবাদ মসজিদটি নির্মিত হয়। কান্তজিউ মন্দির নির্মাণ করা জন্যে ইরান তুরান পারস্য থেকে লোকবল আমদানি করা হয়— জাতে তারা ছিলো মুসলমান— মুসলমানদের থাকা এবং ইবাদত করার আস্তানা হিসাবে মহারাজ প্রাননাথ রায় মুসলমানদের ১.১৫ বিঘা জায়গা বরাদ্দ করে। তবে মসজিদের ঢুকার মেইন দরজার উপর স্থাপিত ফলক থেকে প্রমানিত হয় মসজিদটি সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের রাজত্ব কালে ২ জৈষ্ঠ্য ১২০০ বঙ্গাব্দে, ইংরেজি ১৭৯৩ সালে নির্মিত— ঠিক তখন  জমিদার ছিলো রাজা বৈদ্যনাথ— সে দিনাজপুর রাজ পরিবারের সর্বশেষ বংশধর।


বিষয়টি ভাবতে ভালো লাগে— মনে পড়ে সেই গানের কথা— আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম— একজন হিন্দু শাষক নির্মাণ করে দিচ্ছেন মুসলমানদের মসজিদ— রাজ্যের নদী নালা খাল বিল কুকুর মানুষ সবকিছুর রাজার— সে কোন ধর্মের জায়গা থেকে রাজ্য পরিচালনা করলে রাজ্য তার গতি হারাবে— তবে রাজার নিজস্ব ধর্মবোধ থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে— এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত উপলব্ধি বা অভিমত। একজন রাজা নদীর মতো— সবাইকে জল দেয়— একটি রাষ্ট্রের সংবিধান গাছের মতো— সবাইকে ফল দেয়। 


এখানে মানে দিনাজপুরে যত জলমিছিল দেখেছি সব জলমিছিলের স্বচ্ছতা স্পষ্ট— কান্তজিউ মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঢেপা নদীর জল অত্যন্ত স্বচ্ছ— তেতুলিয়ার মহানন্দার জল মনমাতানো স্বচ্ছ— করতোয়া ও আত্রাই নদীর জল প্রানবন্ত এবং প্রানবন্ত চমৎকার স্বচ্ছ। রামসাগরের জলও চোখ ধাধানো মনমাতানো রূপসী যেনো অপরূপ রূপের মিছিল।


রামসাগর মানে কিন্তু বড় সাগর এমন না— যদিও রামসাগরকে বাংলাদেশের বৃহত্তম মানবসৃষ্ট দীঘি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  তটভূমিসহ রামসাগরের আয়তন ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার— দৈর্ঘ্য ১,০৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। পাড়ের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার। ভগবান রামের নাম অনুসারে রামসাগরের নামকরণ করা হয়নি। রামসাগরের নামকরন করা হয় প্রাণনাথ রায়ের পুত্র রামনাথ রায়ের নাম অনুসারে। রাজ্যে যখন প্রচন্ড খরা দেখা দেয় তখন দয়ালু রাজা প্রাণনাথ এই পুকুরটি মাত্র পনেরো দিনে ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিশ হাজার টাকা ব্যয় করে   খনন করেন— ১৫,০০,০০০ শ্রমিক পুকুরটি খনন করতে কাজ করেন।


পুকুর খনন করা হয়ে গেলো কিন্তু জল উঠছে না। রাজা বিশাল টেনশনে আছেন। তখন রাজা স্বপ্ন দেখেন তার পুত্রের জীবনের বিনিময়ে পুকুরে জল উঠবে— দয়ালু রাজা জনগণের কথা চিন্তা করে পুত্রের জীবন বিসর্জন দিতে রাজি হলেন— পুত্রও  রাজি হলো নিজের জীবন ত্যাগ করতে।  পুকুরের নিচে একটি মন্দির নির্মাণ করা হয় রাজার আদেশে। প্রাণনাথের পুত্র রামনাথ পুকুরের মন্দিরে গিয়ে পৌছতে না পৌছতে সলিলসমাধি ঘটে রামনাথের— সাগরের মতো বিশাল ত্যাগমহিমার পরিচয় দিলেন রামনাথ— সেই থেকে এই দিঘীর নাম রামসাগর! 


রামসাগরে গিয়ে দেখি প্রচুর লোক আধুনিক সব জিনিসপাতি নিয়ে মাছ ধরছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা মাছ ধরে— নিজে খানাদানা রান্না করে নিয়ে আসে— কেউ কেউ রান্না করার সামগ্রী ও রাধুনি নিয়ে আসে। কেউ কেউ দেখছি তাবু ⛺ করে রাতে থাকে— এ এক মহা যজ্ঞ!


রামসাগরে বনবিভাগের একটি বাংলো আছে— নীরব সুন্দর— রাতে থাকতে পারলে নীরবতার জঙ্গলে কেমন করে মানুষ থাকে তা ফিল করা যেতো— হয়তো সময় সুযোগ করে একদিন থাকবো। 


হাতে সময় বেশি নাই— একটু পরে সূর্য ☀ ডুবে যাবে— যাচ্ছি খানপুর সীমান্ত ফাড়ির দিকে— যাচ্ছি তো যাচ্ছি। খানপুর সীমান্ত ফাড়ির সাথেই বাংলাদেশের গ্রাম— আমরা দেখি এক বাড়ির সাথে আরেক বাড়ির সীমানা প্রাচীর— আর তাদের শিশুরা এক দেশের সাথে আরেক দেশের সীমানা প্রাচীর দেখে বড় হয়— নিষ্ঠুরতম আচরণ এটি, পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম আচরণ। 


এই খানপুর সীমান্ত ফাড়ি দেখে মন ভিষণ বিষন্নতার স্বপজাল বুনতে বুনতে ফিরে আসি দিনাজপুর শহরের পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেলে— রুমভর্তি মশা— সবচেয়ে ভিআইপি রুমে যদি এমন করে মশা থাকে তাহলে বাংলাদেশ কেমন করে পর্যটন খাত থেকে লাভবান হবে? অথচ বাংলাদেশ টুরিজম খাত থেকে প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক অর্থ উপার্জন করতে পারে— কেবল সুন্দর পরিকল্পনা সঠিক পদক্ষেপ এবং কার্যকর প্রয়োগ দরকার— তোমার যখন ভাঙবে ঘুম তখনই তোমার সকাল— কবে যে বাংলার সকাল হবে!?

রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪

অভিজিৎ সেনের সিনেমা 'প্রধান'

 অভিজিৎ সেনের সিনেমা 'প্রধান '— তার সিনেমা আগে দেখিছি বলে মনে পড়ে না— সামাজিক আবহের আদলে রাজনৈতিক ছায়াবরনে মারপিটধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র 'প্রধান'। তবে মারপিট কিন্তু একেবারে অবাস্তব স্টাইলের ধারণাকে বাস্তব করে দেখানোর প্রয়াস দেখাননি প্রধানের পরিকল্পনা টিম। প্রধান সিনেমায় ইনডোর শর্টগুলো তরতাজা ফিল দিয়েছে। যেহেতু ইমোশনাল প্রেক্ষাপট নির্মাণ এই সিনেমায় চরিত্র নির্মানের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেহেতু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দায়িত্বশীল উপায়ে। 



অনির্বাণ চক্রবর্তী বা জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় একজন রাজনীতিবিদ এবং ধর্মপুর গ্রামপরিষদের পঞ্চায়েত প্রধান— তার অভিনয় বিশেষ করে ইমোশন প্রকাশ খুবই দুর্দান্ত— কথা ছন্দে ছন্দে বলতে পছন্দ করেন।


জলপাইগুড়ির ধর্মপুর গ্রামটা কিন্তু খুবই সুন্দর— পাহাড় ও সমতলের দারুণ মিশ্রণ। ক্যামেরাতে যে ধর্মপুর এলাকা দেখানো হয়েছে তা খুবই সীমিত— আরও বড় পরিসরে দেখানো যেতো। 


দেব বা দীপক প্রধান— ধর্মপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা— তাকে ধর্মপুর থানায় পোস্টিং দেয়া হয় যাতে পনেরো বছর ধরে ভোটহীন ধর্মপুরে ভোটের ব্যবস্থা করতে পারে বা দুর্নীতিবাজ জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়কে সঠিকভাবে সায়েস্তা করতে পারে। 



ছবিটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেব, অনির্বাণ চক্রবর্তী, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সোহম চক্রবর্তী এবং সৌমিতৃষা কুন্ডু। ব্লকবাস্টার টনিক এবং প্রজাপতির পরে এই ছবিটি সেন এবং দেবের মধ্যে তৃতীয় সহযোগিতা। দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চার্স এবং বেঙ্গল টকিজের অধীনে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন দেব, অতনু রায়চৌধুরী এবং প্রণব কুমার গুহ।


এই ছবিটির মাধ্যমে মিঠাই খ্যাত সৌমিতৃষা কুন্ডুর বড় পর্দায় অভিষেক হয়। চলচ্চিত্রটি বড়দিনের সাপ্তাহিক ছুটি উপলক্ষে ২০২৩ সালের ২২শে ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।


সৌমিতৃষা কুন্ডু (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০০)অনানুষ্ঠানিকভাবে তার নামের আদ্যক্ষর দিয়ে গঠিত এসটিকে নামে ডাকা হয়— একজন ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনেত্রী। বহুমুখী অভিনয় প্রতিভা, সৌন্দর্য এবং জনপ্রিয়তার কারনে তাকে টলিউডে কাজ করা অন্যতম সফল ও সম্ভাবনাময় তরুণী অভিনেত্রী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সে 'এ আমার গুরুদক্ষিণা 'ধারাবাহিক দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করে এবং মিঠাই ধারাবাহিকটিতে মুখ্য ভূমিকায় দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করার জন্য ব্যাপক পরিসরে পরিচয় পায়।  


পাঁচ বছর ধরে টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ থাকার পর , ২০২৩ সালে দেব বিপরীতে অভিজিৎ সেনের 'প্রধান 'এর সক্রিয়  চরিত্রে তাঁর চলচ্চিত্র অভিষেক হয় যা ২০২৩ সালের অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে তার অভিনয়, পর্দায় উপস্থিতি এবং সহ-শিল্পীদের সাথে তার রসায়ন দারুণ ছিলো। প্রধান সিনেমাতে তার নাম রুমি প্রধান— দীপক প্রধানের স্ত্রী। ধর্মপুরে মাস্টার মশাইয়ের বাড়িতে তারা ভাড়া থাকে। পুলিশ হিসাবে দীপক যেমন সৎ সাহসী তেমনি  প্রত্যুৎপন্নমতি  এবং সমাহিত মানসিকতার অধিকারী।


প্রধান সিনেমাটি খুবই ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যায়— ইমোশনাল করে তোলার মতো দৃশ্য অনেক। যে মাস্টার মশাইকে চোরের অপবাদ নিয়ে স্কুল থেকে বের হয়ে আসতে হয় সেই মাস্টার মশাই হয়ে উঠেন ধর্মপুর পঞ্চায়েত প্রধান। চরিত্র খুব স্লো মোশনে পরিকল্পিত মিশনে কাহিনির ভেতরে ঢুকে পড়ে— প্রধান সিনেমার খুবই ভালো রকমের স্বার্থকতা ঠিক এখানেই।


সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়— দীপকের ঠাকুরমা— তার উপস্থিতি স্কিনে খুবই অল্প— যেনো তরকারিতে লবন। তার সংলাপ বাংলার সংস্কৃতি ধারার বাহক— এবং জেনারেশন গতির প্রতিনিধিত্ব করে। 


প্রধান সিনেমার সবচেয়ে বড় দিক পুলিশের ভূমিকা— পুলিশ তার প্রতিজ্ঞার মতো সৎ ও সেবামুখী হলে যেকোনো সমাজের অপরাধ জিরো লেভেলে নেমে আসবে তা কিন্তু আমরা এই সিনেমা প্রবাহে দেখতে পাই— অর্থাৎ অপরাধ দূর করতে জনগণ পুলিশ নিয়োগ করে, অপরাধী বা অপরাধের অংশ হতে নয়। রাজনীতি শাখাপ্রশাখার নরম গরম চাপে পুলিশের সততা রক্ষা করার কাজটি কত কঠিন তা কিন্তু প্রধান সিনেমা আমাদেরকে সুন্দর করে দেখাতে সক্ষম হয়েছে। 


সোহম চক্রবর্তী— প্রধান সিনেমায় তার নাম বিবেক। বিবেক শেষ পর্যন্ত  পনেরো বছর ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকা জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের গবাদি গুন্ডা বাহিনির হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। 


এককথায় প্রধান সিনেমাটি ভালোর ভেতর আলো— আলোর ভেতর বাঙালি সমাজের আয়না বা প্রতিবিম্ব। 




সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

মাটির ঘর

 

মাটির ঘর— জানালা থাকে— থাকে দরজা

মাটির ঘর— আলো থাকে— থাকে বাতাস 

মাটির ঘর— থাকে মানুষ— পশুপাখি থাকে 

থাকে অনেক কিছু— আধুনিক কিংবা প্রাচীন 

মাটির ঘর— থাকে আমার দেহ যাকে ভালোবাসি রোজ

আদর করি— গোসল করাই—খাবার খাওয়াই


মাটির ঘরে মৃত আমি সব কিছু করি

জীবিত হয়ে একদিন চলে যাবো সবকিছু ছাড়ি 


দেহ যার তার কাছে যাবে 

আমি যার যাবো তার কাছে 

আসা যাওয়া 

যাওয়া আসা 

ফুল হয়ে গাছে— গন্ধ হয়ে ফুলে ❀ 

জল হয়ে মুসাফির কূল থেকে কূলে

আল্লাহ

 


আল্লাকে দেখিনি

দেখেছেন আপনি 

আল্লাকে তো চিনি না 

চিনিয়েছেন আপনি 

আপনাকে দেখার পর 

আল্লাহকে দেখার ইচ্ছা ন করি 

আপনাকে দেখে দেখে আল্লাকে দেখি

শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪

অর্জুন কিংবা কৃষ্ণ



অর্জুন— রাধা আপনাকে ভালোবাসে কেনো?

কৃষ্ণ— রাধা আমাকে ভালো না বেসে থাকতে পারে না!

অর্জুন— কংস আপনাকে ঘৃণা করে কেনো?

কৃষ্ণ— আমাকে  ঘৃণা করা ছাড়া তার আর কোনো উপায় নাই!

অর্জুন— তাহলে, রাধা আর কংসের মধ্যে পার্থক্য কী?

কৃষ্ণ— একজন আমাকে দুনিয়া থেকে সরাতে চায়, আরেকজন তার দুনিয়াতে আমাকে বন্দী করতে চায়।

অর্জুন— তাহলে তো কেউ আপনাকে চিনতে পারেনি!

কৃষ্ণ— দুইজনই আমাকে বেশি চিনে ফেলেছে! 

অর্জুন— তাহলে আমি আপনাকে কম চিনি?

কৃষ্ণ— হা হা হা, তুমি আমাকে প্রশ্ন করছো, তারা কেউ আমাকে প্রশ্ন করে না।কৌতুহল থেকে প্রশ্ন, প্রশ্নের পরে আসে পরিকল্পনা, পরিকল্পনার পরে আসে সিদ্ধান্ত, সিদ্ধান্তের পরে আসে মীমাংসা। তারা আমার ব্যাপারে মীমাংসিত। আর তুমি কৌতুহলী, অর্জুন।