রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

ইঙ্গিত

 ভুলে যাওয়া পাখি

  আলো ঝিকিমিকি 

    সন্ধ্যা রাতের কথা 

      মনে পড়ে কী 

       একা তারে বসে 

         হাওয়া খেতে খেতে 

           কার কথা ভাবো 

            অতীতে অতীতে 

             যাকে তুমি চাও 

               নাপেয়ে পেয়ে যাও 

              জোছনার মতো জল 

            আলোতে আলোতে 

           মনের গহীনে

         আরও গোপনে

      প্রকাশ হলে ভালো 

     চলিতে চলিতে

   অচেনা অজগর বোধ 

  চোখের পেছনে রোদ 

ফিরিতে ফিরিতে

ক্লিয়ার হলে ভালো 

যতসব কর্ম

মান অভিমান বর্ম 

বলিতে বলিতে

রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৫

তরল

 


না করলে মনে হয় 

আকাশ যেনো আমার উপর ভেঙেপড়া রোদ

করলে মনে হয় 

মেঘ যেনো বৃষ্টি হয়ে তরল প্রতিরোধ

শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৫

কাচুলি সন্ধ্যা



কাচুলি সন্ধ্যা উদাম করো উদার অন্ধকারে 

সুরকি মানুষ তোমার জলে বাতাস নড়েচড়ে 

হাওয়া ওগো হাওয়া ওগো আঘাত কেন করো 

ঘুমপাড়ানির প্রজা সকল কুয়াশা গল্প ধরো

ভূত নামবে 

জ্বিন নামবে 

নামবে রাতের ফুল

সাগর কোমড় খুজতে খুজতে পেছনে যাচ্ছে কূল

কূল নাই 

কিনার নাই— সর্বনাশা ডাক

লোভের নিচে লোভ লাগালো অলস দুপুর কাক

ধানের বীজ গানের বীজ কোথায় যেনো যাচ্ছে 

নূপুরপরা সন্ধ্যাতারা ☆ হাওয়ায় আলো মাখছে 

অমলধবল শাড়ির ভাজ অতীত গিলে খাচ্ছে 

এক মাঘে চেতনাশীত দারুণ অরুণ নাচছে 

ম্যাসাকারে আষাঢ়গীত রক্তবীজে বাজছে

একলা পাখি একলা আকাশ একা নীড়ে ফিরছে

সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কৈবর্ত থেকে গাবর



বেরজাল। এই জালকে আমরা বেরজাল বলি। বেরজাল হলো এক ধরনের বড় জাল, সাধারণত নদী, খাল, বিল বা পুকুরে টেনে টেনে মাছ ধরার জন্য ব্যবহার করা হয়। বেরটানা মানে হলো অনেক মানুষ মিলে বড় জাল ফেলে ধীরে ধীরে টেনে এনে মাছ ধরা। বের মানে আটকানো— সবদিক থেকে কোনোকিছুকে আটকিয়ে ফেলাকে বের বলে— সহজে বললে, বন্দী করে ফেলা। বেরজাল মানে মাছকে বন্দী করে ফেলার জন্যে জলে যে জাল ফেলা হয় তাই বেরজাল। 


ছোটোকালে দেখতাম খুব সকালে এবং সন্ধ্যায় বেরজাল দিয়ে পানসে নদী থেকে মাছ ধরছে জেলে। যারা মাছ ধরে তাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের মানুষ গাবর বলে। গাবরের বহুবচন গাবরা বা গাবরারা। গাবর শব্দটা এসেছে ধীবর থেকে। ধীবর শব্দটা এসেছে সংস্কৃত धीवर থেকে। 


ব্রাহ্মণবাড়িয়া  অঞ্চলে গাবর শব্দটা অপরিচ্ছন্ন মানুষকে বুঝাতেও ব্যবহার হয়ে থাকে।  হে একটা গাবর— অর্থাৎ তার শরীরে ময়লা আবর্জনা লেগেই থাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিশোরগঞ্জ নরসিংদী নারায়ণগঞ্জ এবং সিলেটের কিছু অংশে গাবর, চামার, মেথর শব্দের ব্যবহার অত্যন্ত তুচ্ছতাচ্ছিল্য অর্থে, নিচুস্তর অর্থে উচ্চারিত হয়ে থাকে। গাবরের স্ত্রীলিঙ্গ গাবরনি। গাবরনি মানে গাবরের বউ। আমি কখনো কোনো মেয়ে জেলের দেখা পাইনি। মহিলা মেথর দেখেছি।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে মেথর বলে না, বলে মেতর। মেতরের স্ত্রীলিঙ্গ মেতরনী। চামারের স্ত্রীলিঙ্গ চামারনি। মহিলা সম্প্রদায়ে চামারনী শব্দটা খুবই জনপ্রিয়। শুনে অবাক হবেন, আবার অবাক নাও হতে পারেন, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সবচেয়ে জনপ্রিয় শব্দ 'শয়তান',  শয়তানের পরে জনপ্রিয় শব্দ ফাজিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে শয়তানের উচ্চারণ হুইতান, হইতান। হইতানের স্ত্রীলিঙ্গ হইতাননি। বাওনবাইরাবাসী খইকে হই বলে— সই, আইসো লাইতে, তোমারে লইয়্যা হই হামু!


এখন নদীতে বেরজাল দেখলে মোটামোটি অবাক হই— কারন নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না— আমি নিজে বাড়ির পাশের ডোবা থেকে ফিলুন বা পিলুন দিয়া পুটিমাছ ধরতাম। ফিলুন মানে তিনটি বাশ ত্রিভুজ আকৃতিতে একসঙ্গে হয়, মাঝখানে জাল। ফিলুইয়া মানে পরশ্রীকাতর মানসিকতা— এটা একটা গালি, বলতে গেলে মার্জিত গালি। পুটিমাছকে বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে পুডিমাছ উচ্চারণ করতে শুনি। পুডিমাছের আত্মা মানে খুবই দুর্বল চিত্তের মানুষ— অবিভক্ত ত্রিপুরা জেলার দারুণ মশকরা উচ্চারণ এটি। কই মাছের প্রাণ শব্দগুচ্ছটি আবার সমগ্র বাংলা সাহিত্যের প্রমিত উচ্চারণ। কইডা ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের বিশেষ সবজি— চিচিঙ্গা বা কইডা বা দুধকুুুশি বা মধুকুশি বা কুশি বা হইডা (Snake gourd) অপেক্ষাকৃত নরম সবজি— এটি ঝিঙে, লাউ, শশা, কুমড়ো ইত্যাদির মতই কিউকারবিটেসি পরিবারের সদস্য। কইডাতে পটাসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ভিটামিন-সি ভিটামিন বি৬সহ আরও অনেক পুষ্টিমান এ্যাবেইলএ্যাবল।


বরিশাল–পটুয়াখালী–ভোলা অঞ্চলের লোকভাষায় “কায়দা” শব্দটিই বদলে “কইডা” হয়ে গেছে।

যেমন:

“এই কাজের কইডা শিখছিস?”

“তুই বড় কইডাবাজ।”


কয়ডা বা কইডা শব্দটি বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে কয়টি(How many) শব্দের পরিবর্তে উচ্চারিত হয়ে থাকে। কয়টা বা কইডার বহুবচন 'কতলা' শব্দটি উচ্চারিত হয়। 


'পুডিমাছের আত্মা' এখন বলে, একযুগ আগেও বলতো পুডিমাছের কইলজা। পুডিমাছের কইলজা কেউ দেখেছে কিনা আমার জানা নেই। মাছের মধ্যে সবচেয়ে ছোট্ট মাছ কিচকি— কিছকি মাছের কইলজা বললে পারফেক্ট হতো। কলিজা খাওয়া মানে জ্বালাতন করা— সকাল থেইক্কা হে আমার কইলজা হাইয়্যালাইতাছে।  কলিজাকে কইলজা উচ্চারণ করা ত্রিপুরা মহকুমার স্বাভাবিক স্বভাব উচ্চারণ।


কিছকি মাছের কইলজা না বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী কেনো পুডিমাছের কইলজা বলে নরম গালি দেয় তা জানার চেষ্টা করি। কিছকি মাছ ছোট হলেও তা ততটা সহজলভ্য নয় যতটা সহজলভ্য পুডিমাছ। আর বাঙালি কমিউনিটি সহজে যা কিছু পায়, যদি স্বর্নও হাতে পায় তার মূল্যায়ন করতে শক্তিশালীভাবে অপারগ! অর্থাৎ পুটিমাছের সহজলভ্যতার কারনে তার একটি দুর্বল দিক আবিষ্কার করে বাংলার মানুষ— মানে জল থেকে উঠে আসার পর বা তুলে আনার পর পুটিমাছ বেশিক্ষণ বাচে না— প্রতিকূল পরিবেশে পুটিমাছ নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে লড়াই করতে পারে না— তাই সমাজের যেসব মানুষ প্রতিকূল পরিবেশে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে অক্ষম অথবা ভয় পায় তাদের কলিজাকে পুটিমাছের কইলজার সাথে তুলনা করা হয়েছে। 


তবে কিছকি মাছ নিয়ে ইদানিং একটি গালি বিখ্যাত হয়েছে— কিছকিবান্দি— যে বান্দি মর্যাদার দিক থেকে খুবই ছোট— কিছকিবান্দির পুত= মর্যাদার দিক থেকে খুবই হীন দাসীর ছেলে। পুত্রকে পুত বলার প্রবণতা কিশোরগঞ্জ ব্রাহ্মণবাড়িয়া নরসিংদী নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের মানুষের উচ্চারণে রয়েছে। গাবরা যেমন গালি এবং তাচ্ছিল্য অর্থে উচ্চারিত হয় তেমনি গাবরা বাড়ি শব্দটাও।  ভদ্রসমাজে গাবরা বাড়িকে বলে জেলেপাড়া— আঞ্চলিক উচ্চারণ জাইল্লা পাড়া  অর্থাৎ এদের বাড়ির নামকরণ হয়েছে এদের কর্মের উপকরণ দিয়ে— জাল থেকে জাইল্লা। গাবর বাড়িকে কেউ কেউ কইবত বাড়িও বলে— শব্দটা মূলত কৈবর্ত— সংস্কৃত মূল: কৈবর্ত → "কো" (জল) + "বর্ত" (চলাফেরা করে/আচরন করে)। অর্থাৎ, যারা জলে চলে বা জলে বাস করে। 


কৈবর্ত  শব্দটা কিন্তু কইমাছের প্রানের মতো অনেক শক্তিশালী এবং ইতিহাসধারী। কৈবর্ত বিদ্রোহ ইতিহাসের এক মহান আলোচনার বিষয়— 


পাল সাম্রাজ্যের শাসনামলে ব্রাহ্মণ্যবাদী জমিদার ও সামন্তরা সাধারণ কৃষক ও মৎস্যজীবী শ্রেণিকে শোষণ করত। বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রচুর কৈবর্ত (মৎস্যজীবী/কৃষক) বাস করত।

তাদের উপর অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়।

দিব্য কৈবর্ত প্রথমে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন এবং পালরাজা গোপাল তৃতীয়কে পরাজিত করে উত্তরবঙ্গে ক্ষমতা দখল করেন। পরে দিব্যের উত্তরসূরিরা কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত বরেন্দ্র অঞ্চলে শাসন চালায়। অবশেষে পাল রাজারা আবার শক্তি সঞ্চয় করে বিদ্রোহ দমন করে।


কৈবর্ত বিদ্রোহ ছিল বাংলার আদি মধ্যযুগের ইতিহাসে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি সাময়িকভাবে পালদের তাদের পৈতৃক অঞ্চল বরেন্দ্র থেকে বিতাড়িত করে এবং অধস্তন শাসকদের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ চিরস্থায়ীভাবে দুর্বল করে দেয়। এর ফলে পরবর্তীতে পাল শক্তির পতন হয় এবং সেনদের উত্থানের পথ প্রশস্ত হয়।


কৈবর্ত বিদ্রোহকে বাংলার ইতিহাসে কৃষক ও শ্রমজীবী শ্রেণির প্রথম বড় ধরনের বিদ্রোহ হিসেবে ধরা হয়। এখানে কৈবর্তরা শুধু সামাজিক, অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে নয়—রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলেরও চেষ্টা করেছিল— ইতিহাসবিদরা একে “কৃষক বিদ্রোহ” বলেও আখ্যা দেন—আসলে নামটা একটু বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে। কারন বিদ্রোহ করেছে কৈবর্তরা—যারা মূলত মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। তবু ইতিহাসে একে অনেক সময় কৃষক বিদ্রোহ বলা হয়।


কারণ কৈবর্তদের সামাজিক অবস্থান — তারা শুধু মাছ ধরা নয়, জমিতে চাষও করত। বরেন্দ্র অঞ্চলের বিশাল অংশে কৈবর্তরা কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল—অর্থাৎ, তারা ছিল কৃষক–মৎস্যজীবী—উভয় পরিচয়ের ধারক। 

তাছাড়া শোষণ–বঞ্চনার মূল বিষয় কৃষিজমি— পাল শাসকেরা আর জমিদার–ব্রাহ্মণ শ্রেণি কৃষিজমির উপর নিয়ন্ত্রণ নিত। কৃষকদের থেকে অতিরিক্ত কর আদায় করা হতো। বিদ্রোহের মূল টার্গেট ছিল এই জমির ওপর শোষণ।


বরেন্দ্র মানে গঙ্গা ও করতোয়ার মধ্যবর্তী অঞ্চল। বিশেষ করে রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া ও দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ। 


কৈবর্ত শব্দটা এখন বাংলার মুখে উচ্চারিত হয় না বললেই চলে— গাবরাও এখন আগের মতো নাই। এখন মাছ চাষ করে অনেক টাকাওয়ালা মানুষ— টাকা কামানোর জন্যে না— কামানো টাকাকে বৈধ করার জন্যে।

যাত্রী যাত্রা

 এইখানে বসে 

চোখের ভেতরে নদীর মতো মাঝি একে 

এইখানে বসে 

ঢাকা শহরের সমগ্র আলো মেখে 

নীরব হয়ে যাই চলো 

চোখের সাগরে একটা ছোট্ট কোলাহলও থাকবে না 

মানুষের বানানো মাংসের দুনিয়া 

মাংসের বানানো রাজনীতির খায় খায় স্বভাব 

অন্ধকারে যেমন আলোর অভাব 

আলোতে যেমন আলোচনার লবনাক্ত হাবভাব 

সবকিছু ছেড়ে 

সবকিছু রেখে 

সবার একজন হয়ে 

একজনের সবার হয়ে 

চলো পালাই— আরও আরও লোকালয়ের ভেতর 

চলো পালাই— আরও আরও কোলাহলের উপর 

অনেক শব্দের ভেতর তুমি ঘুড়ি 

তোমার ঘুড়ির পাখায় উড়ি— এই আমি উড়ি 

এখন উড়ি 

তখন উড়েছি 

উড়তে থাকবো আরও আরও বহুবার 

যতবার আকাঙ্ক্ষা জন্মাবে তোমার 

ততবার তুমি আমার কেবলই আমার

শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

তোমার স্মরণ স্বর্গ স্বরূপ

 


কোরানে তোমারে খুজি না প্রিয় 

তোমাতে আমি কোরান খুজি 

দূরে ঠেলে সব ফতোয়াবাজি 

আমার ধ্যানে তোমারে পুজি 

তোমার প্রেম আমার রোজি 

তোমার স্মরণ স্বর্গ স্বরূপ 

আর বাকি সব হালুয়া সুজি

বদনামের আচার

 বদনামের আচার যদি না পায় মানুষ 

    কথার খাবার জমে না আড্ডায় 

      বাতাসে উড়ে না যাত্রাপালার আনন্দ ফানুস 

        এই নদী সাগরে যাবে মিষ্টি হবে তার জল 

          এই সাগর নদীকে খাবে নোনতা হবে তার ফল

            গাছের কোনো ঘর নেই 

              জলের আছে চর 

                কথাতে আপন তুমি 

                  কথাতেই পর 

                    কাকে মানুষ করছে আপন 

                      কাকে মানুষ বলছে অপর

                       পাতাতে পাখির সংসার 

                         পাতাতে হচ্ছে জমি আশ্চর্য উর্বর 

                          একই সূর্য তোমার আমার 

                            মানুষ মায়ের সন্তান 

                          এই সমাজই বানাচ্ছে প্রিয়

                        সাধু ভন্ড মাস্তান

                     ফুল থেকে ফলকে আলাদা করো যদি

                  প্রকাশ পাবে কেবলই তোমার কথার বাহাদুরি

                বাহাদুরি রুচির শত্রু সাদা মোড়কে ত্রাস 

              বদনামের কপাল খেয়ে বাশি হচ্ছে বাশ 

           সময়ের স্রোত হয়ে রেজা চলে বয়ে 

         সুরের সাথে ঘরসংসার 

       অসুর যায় ক্ষয়ে